স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য জাতীয় ঐক্য গড়িয়া তুলিতে হইবে
গতকাল চতুর্থ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী, সমিতি কর্তৃক বেলী রােডস্থ মহিলা সমতির মিলনায়তনে আয়ােজিত এক সভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জনাব এম, মনসুর আলী বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য জাতীয় ঐক্য গড়িয়া তুলিতে হইবে।
আত্মবিশ্বাস জাগাইয়া তুলিয়া সকলকে একাত্ম হইয়া আগাইয়া যাইতে হইবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সকল শ্রেণীর মানুষ একাত্ম হইয়া বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে যুদ্ধ করিয়াছিল বলিয়াই দেশ স্বাধীন হইয়াছে। সেই আহ্বানে যে ভাবে উদ্বুদ্ধ হইয়া সকলে সংগ্রাম করিয়াছিল, আজও অনুরূপভাবে সমগ্র জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করিয়া তুলিতে হইবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা দিবস পালনের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। যারা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রাণ দিয়াছে, এই দিন জাতি তাহাদের স্মরণ করে। এইদনি যারা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়াছিল, জাতিকে তাহাদের স্মরণ করা প্রয়ােজন। সেই দিন আমাদের মহান রাষ্ট্র সক্রিয় সাহায্য করিয়াছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী, সােভিয়েট সরকার ও অন্যান্য বন্ধু রাষ্ট্র আমাদের সাহায্য করিয়াছিল। আজ তাহাদেরও আমরা স্মরণ করি। বর্তমান সমাজ এই বলিয়া গর্ববােধ করিতে পারেন যে, তাহারাই স্বাধীনতা আনিয়াছে। তাহারা নিজেরা গৌরবের অধিকারী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা অপরিহার্য। এই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্য জাতীয় ঐক্য ও আত্মবিশ্বাস গড়িয়া তুলিতে হইবে। লাখাে লাখাে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করিয়া তুলিতে হইবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এক শােষণহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়িয়া তােলা হইবে। এখানে আমদজী দাউদের প্রেতাত্মাকে কিছুতেই স্থান দেওয়া হইবে না। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঐক্য কামনা করিয়া বক্তৃতা শেষ করেন।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী জনাব আবদুর রব সেরনিয়াবাত বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত একই। আদর্শের অনুসারী। দুই দেশই তাহাদের সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করিতে চায়। এই আদর্শের জন্যই ভারত বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে সাহায্য করিয়াছে। অর্থনৈতিক দুর্দশা মােচনের জন্য শান্তি অপরিহার্য। দুই দেশের নেতৃবৃন্দ এই ব্যাপারে সম্যক অবহিত আছেন বলিয়া জনাব সেরনিয়াবত উল্লেখ করেন।
ভারতীয় হাই কমিশনার মি: সমর সেন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত এই দুই দেশের জনসাধারণ দুঃখী। ইহাদের উন্নতির জন্য একই সঙ্গে চেষ্টা করিতে হইবে। আমরা একই সঙ্গে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করিয়াছি। একই সঙ্গে চেষ্টা করিয়া জনসাধারণের উন্নতি করিতে হইবে। দুই দেশের বন্ধুত্ব আরাে দৃঢ় হােক এই কামনা করিয়া তিনি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতিকে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বাকশালের নেতা জনাব জিল্লুর রহমান বলেন, ভারত চিরদিন নির্যাতিতদের সহায়তা করিয়া আসিতেছে। বাংলাদেশের সংগ্রামে সাহায্য করিয়া তাহারা নির্যাতিতদেরই পক্ষ নিয়াছিল। তেমনি অর্থনৈতিক বিপ্লবকে সাহায্য করিয়া সােনার বাংলায় পরিণত করার জন্য সাহায্য করিবে বলিয়া তিনি দৃঢ় আশা প্রকাশ করেন। যাহারা সাধারণ মানুষের কল্যাণ চায় না, তাহারাই বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের বিরুদ্ধে কুটুক্তি করে বলিয়া তিনি অভিযােগ করেন।
তিনি দুই দেশের গভীর মৈত্রী কামনা করেন।
জনাব আবদুর রাজ্জাক এমপি বলেন, ভারত ও সমাজতান্ত্রিক দেশমূহের সহযােগিতায় অর্থনৈতিক মুক্তিই আমাদের কাম্য। তিনি বলেন, সমবায় পদ্ধতির মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে চাষাবাদের ব্যবস্থা করিলে দেশ অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করিতে পারিবে। মৈত্রী সমিতির সভাপতি জনাব মহীউদ্দিন এমপি বলেন, সমবায় হইতেছে একটা আন্দোলন। এই বার আমাদের নয়া যাত্রা শুরু হইয়াছে। ইহাতে সাফল্য লাভের জন্য ভারতের সহযােগিতা বেশি প্রয়ােজন।
সভায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক খােন্দকার মােহাম্মদ ইলিয়াসও বক্তৃতা করেন।
সূত্র: দৈনিক আজাদ, ৯ এপ্রিল ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত