You dont have javascript enabled! Please enable it!

প্রতিদিন গড়ে দশ হাজার শিশুর জন্ম গ্রহণ

এখানে প্রতিদিন গড়ে ১০,০০০ শিশু জন্ম গ্রহণ করে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বৎসরে শতকরা প্রায় ৩ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার অব্যাহত থাকলে এ শতাব্দীর শেষের দিকে আমাদের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হবে এবং আগামী ৫০ বৎসরে বর্তমান চীনের জনসংখ্যার সমান হবে। আর ২১০০ সালের মধ্যে তা বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার সমান হবে। অথচ জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে না। অধিক উৎপাদনশীল খাদ্যশস্যের চাষাবাদ প্রসারের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও জনসংখ্যার অনুপাতে তা নগন্য। জনসংখ্যার এই অস্বাভাবিক উৰ্দ্ধগতি রােধ করতে না পারলে তা আমাদের জন্যে বিপর্যয় ডেকে আনবে। খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে কত বর্ধমান জনসংখ্যার চাপ রােধের ব্যবস্থাবলীকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দান করা এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। জাতীয় ও মানবিক দায়িত্ব বােধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাইকে এগুলাে কার্যকরী করার কাজে আত্মনিয়ােগ করতে হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি রােধের প্রধান উপায় হচ্ছে জন্ম নিয়ন্ত্রণ। আর এ জন্যে দরকার পরিবার পরিকল্পনা।
পরিবার পরিকল্পনা আমাদের দেশে আশানুরূপ সফলতা অর্জন করতে পারেনি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি রােধ ও সুখী পরিবার তথা বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবকে সফল করতে হলে দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক পরিবার পরিকল্পনা সম্পকীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে এ ব্যাপারে আমাদের ধর্মীয় কুসংস্কার দূর করতে হবে। পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক ও নির্ভরযােগ্য কলাকৌশল অবলম্বন করতে হবে।
পরিকল্পিত ভাবে পরিবার গড়ে তুলতে না পারলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন বিষময় হয়ে ওঠে। পরিবার পরিকল্পনার মূল কথা হলাে সুখী ও স্বাচ্ছন্দ পারিবারিক জীবনের জন্য পরিকল্পিত ব্যবস্থা অর্থাৎ আহার, বাসস্থান, শিক্ষা প্রভৃতি মানব জীবনের মৌলিক প্রয়ােজন পূরণের মধ্য দিয়ে স্বল্প বা নির্দিষ্ট সংখ্যক দেশে মেয়েকে যথার্থ মানুষ করে গড়ে তােলা। তাতে পরিবার ও সমাজ উভয়ই উপকৃত হবে এবং জীবন যাত্রাও সহজ ও আনন্দময় হবে।
জনসংখ্যার আকার কাঠামাে বৃদ্ধির হার ও গতিবিধি হচ্ছে যে কোন জাতির সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির ভিত্তিস্বরূপ। কাজেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানাে হচ্ছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির একটা উপকরণ। জনসংখ্যা সমস্যার এ বাস্তবতার প্রতি লক্ষ্য রেখে আমাদের সরকার এ সমস্যার জরুরী মােকাবেলার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় জন্যসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর জন্য ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা রােধকরে এর বর্তমান হার শতকরা ৩ থেকে ২.৮ ভাগ কমিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করা হয়। এ ছাড়া জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নিম্নলিখিত নীতিমালা গ্রহণ করা হয়।

সূত্র: দৈনিক আজাদ, ৬ এপ্রিল ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!