You dont have javascript enabled! Please enable it!

অবহেলিত শহর মুন্সীগঞ্জ
উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের আশু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রয়ােজন

মহকুমা সদর দপ্তর হিসাবে ঢাকা জেলার মুন্সীগঞ্জ শহরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বর্ধিষ্ণু। সমগ্র বাংলাদেশে খেলাধূলা ও লেখাপড়ায় মুন্সীগঞ্জ মহকুমা তথা এই মুন্সীগঞ্জ শহরের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
কিন্তু নানা অবহেলায় এই শহরটি বৃটিশ আমলে যে রকমটি ছিল আজো সেই রকম রহিয়া গিয়াছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আজ পর্যন্ত এই শহরটির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই।
মহকুমা সদর দপ্তর হিসাবে এই শহরটিতে কোর্ট-কাচারী এবং বিভিন্ন অফিস রহিয়াছে। ঐতিহাসিক রামপাল সংলগ্ন থাকায় এই শহরে হরহামেশা বিদেশী পর্যটকদের ভিড় পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু সেই তুলনায় শহরটি যথেষ্ট নােংরা ও অপরিসর। সেই পাকিস্তান আমল হইতেই এই শহরটি সম্প্রসারণের কথাবার্তা চলিয়া আসিতেছে। কিন্তু স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং কতিপয় মহলের অনমনীয় মনােভাবের দরুন শহরটি সম্প্রসারণের ব্যাপারে কোন পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হয়। নাই। পৌর কর্তৃপক্ষও এই ব্যাপারে নিবিকার।
মুন্সীগঞ্জ শহরের পূর্ব ও পশ্চিম দিক দিয়া দুইটি বৃহদাকৃতির খাল রহিয়াছে। এই খাল দুইটি প্রায় সারা বছরই শুকনা থাকে। উপরন্ত এই খাল দুইটির উপরে আশে পাশের বাসিন্দাদের শত শত পায়খানা রহিয়াছে। ফলে এই দুইটি শহরের জন্য হুমকী হিসাবে সব সময়ই বিরাজ করিতেছে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করিতেছে। এ শহর সম্প্রসারণের গুরুত্ব বুঝিয়া কর্তৃপক্ষ শহরের পূর্বদিকে অবস্থিত জুবিলী খালটি ভরাটের পরিকল্পনা সুদূর পাকিস্তান আমলে গ্রহণ করেন। কিন্তু কি যুক্তির বশবর্তী হইয়া যে কর্তৃপক্ষ এই খালটিকে ভরাট করিতেছেন না, তাহা স্থানীয় অধিবাসিগণ কিছুতেই বুঝিয়া উঠিতে পারিছেন না। কোন কোন মহল এই খোঁড়া যুক্তি খাড়া করেন যে, এই খালটি ভরাট হইলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হইবে। অথচ এই খালটি বর্ষাকালে মাস দুইবাদে সারা বছর শুকনা মাঠের মতাে থাকে। তাছাড়া মুন্সীগঞ্জ শহরটি ধলেশ্বরী নদীর ঠিক প্রান্তে অবস্থিত। ফলে ব্যসা-বাণিজ্যের ক্ষতির প্রশ্ন মােটেই আসে না। তাছাড়া মেঘনা ও পদ্মা হইতে একটি বিশালকৃতির খাল (পূর্বে নদী ছিল) শহরের দক্ষিণ প্রান্তে কাটাখালী পর্যন্ত আসিয়াছে। একটু খনন করা হইলে এই খালটি দিয়া সারা বছরই নৌকা ও লঞ্চ মুন্সীগঞ্জ শহরের দক্ষিণ মাথা পর্যন্ত চলাচল করিতে পারে জুবিলী খালটি বর্তমানে আগে পাশের জনস্বাস্থ্যের জন্য যে ভাবে হুমকী হইয়া দাড়াইয়াছে, তাহাতে এটিকে অবিলম্বে ভরাট করিয়া দুই পাশের পায়খানাগুলির জন্য পয়ঃপ্রণালী খনন করা আবশ্যক হইয়া দাড়াইয়াছে। উপরন্তু এইভাবে শহরটির সম্প্রসারণ করিয়া ক্রমবর্ধমান চাহিদার মােকাবেলা করা সম্ভব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে অবিলম্বে গুরুত্বের সহিত বিচার করিবেন বলিয়া স্থানীয় জনগণ আশা করে।

সূত্র: দৈনিক আজাদ, ১ এপ্রিল ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!