You dont have javascript enabled! Please enable it!

মহান স্বাধীনতা দিবস ॥ আজ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ

আজ ২৬শে মার্চ। মহান স্বাধীনতা দিবস। চার বছর আগে এই দিনটিতে বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানী সশস্ত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতির জনকর নির্দেশে লাঠি হাতে নিয়ে মুক্তিসংগ্রাম শুরু করে। লাখাে শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতাকে গণমানুষের জীবনের সর্বস্তরে সার্থক করার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আজ পঞ্চস্বাধীনতা দিবসে নতুন পথ নির্দেশ করবেন। বিকেল সাড়ে তিনটায় সােহরাওয়াদী উদ্যানে দেশের দূরদূরান্ত থেকে আগত লাখাে লাখাে মানুষের মহতী সভায় রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিবেন। দেশের একক জাতীয় দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এটাই প্রথম সমাবেশ। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণ শােনার জন্য বাংলাদেশের সর্বত্র হতে গণমানুষের উত্তাল ঢেউ-এর মত আছড়ে পড়ছে রাজধানী ঢাকানগরীর বুকে। বাসে, ট্রাকে, ট্রেনে আর লঞ্চে মানুষের আসার বিরাম নেই। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাকে একক সাড়া দিয়ে উঠে আসছে লক্ষ নিযুত মানুষ পাতাকা, ফেস্টুন, শ্লোগান আর ব্যানারে উৎফুল্ল মহানগরীর আজ বরণ করে নেবে স্বাধীনতার পবিত্র স্মৃতি বিজড়িত দিনটির মহতৃকে। স্বাধীনতার এই উদ্বেল আবেগের সাড়াকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আজ প্রবাহিত হবে এক ঐক্যবদ্ধ কর্ম প্রচেষ্টার। অধীর আগ্রহে জাতি অপেক্ষায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সেই উদাত্ত আহ্বানের জন্য। একবার যার ডাক শুনে আরামের শয্যাতল ছেড়ে বাংলার অকুতােভয় দামাল ছেলেরা বেরিয়ে এসেছিল আজ সেই তেজোদীপ্ত কণ্ঠ আবার ডাক দেবে দ্বিতীয় বিপ্লবকে কাজে রূপ দেওয়ার জন্য। তাই এত আগ্রহ, তাই এত প্রত্যাশা নিয়ে ছুটে আসছে মেহনতী মানুষের দল দেশের দূর-দূরান্ত এলাকা থেকে। বঙ্গবন্ধু এই ঐতিহাসিক গণসমাবেশে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে দেশে একক কৃষক শ্রমিক যুব ছাত্র এবং মহিলা সংগঠন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করবেন বলে আশা করা যায়। গণসমাবেশে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন সােহরাওয়ার্দী উদ্যান হতে সরাসরি প্রচার করবে।
রেসকোর্সের জনসভা প্রাঙ্গণে ব্যবস্থাপনার কাজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। জরুলী মেডিক্যাল সার্ভিসের জন্য রেডক্রস স্থাপন করবে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল। এছাড়া জরুরী টেলিফোন এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকবে।
ইতিমধ্যে জনসভার মঞ্চ নির্মাণ এবং মাইক্রোফোন লাগানাের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
জনসভা প্রাঙ্গণে বিদেশী কূটনীতিক, আমন্ত্রিত অতিথি, সংসদ সদস্য, সাংবাদিক, মহিলা, এবং শ্রমিক-কৃষক তথা আপামর জনতার পৃথক পৃথক প্রবেশ পথ চিহ্নিত করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা শহর ও শহরতলীতে আজকের (বুধবার) সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর সভায় সর্বস্তরের জনগণকে যােগদানের জন্য আহ্বান জানিয়ে ব্যাপকভাবে মাইকযােগে প্রচারণা চালানাে হয়। পথের মােড়ে মােড়ে মাইক লাগিয়ে গণ-সমাবেশের প্রচারণা করা হয়েছে। গণ-সমাবেশের প্রচার উপলক্ষে শহরে ট্রাক মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বেচ্ছাসেবকদের আকর্ষণীয় মহড়া হয়েছে। মহড়া শেষে এক বিরাট মশাল মিছিল শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে।
আজ বুধবার সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য গণ-সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শােনার জন্য গতকাল মঙ্গলবার হতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সর্বস্তরের জনগণ ঢাকা আসতে শুরু করেছেন। এই রিপাের্ট লেখা পর্যন্ত ১৫ হতে ২০ হাজার লােক ঢাকা শহরে এসে গেছেন। গণসমাবেশে যােগদানের জন্য হাজার হাজার লােককে সদরঘাট লঞ্চ ঘাটে, কমলাপুর রেল ষ্টেশনে এবং বিভিন্ন বাসস্ট্যাণ্ডে দেখা যায়।

সূত্র: সংবাদ, ২৬ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!