আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী
মহানবীর আদর্শে দেশগড়ার কাজে আত্মনিয়ােগ করুন: মনসুর
আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। মহানবী হযরত মােহাম্মদের (সঃ) আবির্ভাব ও তিরােভাব দিবস। আজ থেকে ১৪শ’ ৫ বছর আগে ৫৭০ খৃষ্টাব্দের এ দিনে তিনি পৃথিবীতে তশরীফ রাখেন এবং ৬৩২ খৃষ্টাব্দের এইদিনেই তাঁর মাহুবুবের সাথে মিলনের জন্যে তিনি পৃতিবী ছেড়ে যান। বাংলাদেশ মিলাত মজলিশ এ উপলক্ষে ঢাকার ৪ দিনব্যাপী এক সিরাতুন্নবী সম্মেলনের আয়ােজন করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বায়তুল মােকাররম পূর্ব প্রধানমন্ত্রী জনাব এম মনসুর আলী আনুষ্ঠানিকভাবে মিলাদুন্নবী সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেন, দেশপ্রেম ঈমানের অংশ, আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) আমাদের এ শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি আমাদের বার বার সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ধর্মের ব্যাপারে কোন প্রকার বাড়াবাড়ির অবকাশ নেই। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর প্রতি সহনশীলতার গুরুত্ব রসুলে পাক (সঃ) বার বার প্রচার করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে মহানবী (দঃ) নির্দেশিত পথে সততা, ত্যাগ ও সেবার অঙ্গনে ব্রতী হয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তােলার কাজে আত্মনিয়ােগ করার শপথ নিতে আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপের জন্যে ইসলাম নয়। ইসলাম মানুষের ব্যক্তিগত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে একটি সামগ্রিক অবিভাজ্য নীতিমালা। রাষ্ট্রীয় নীতির ক্ষেত্রে ইসলাম আমাদের দিয়েছে সামাজিক সমতা ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা। প্রেম, ভ্রাতৃত্ববাধ, সত্যনিষ্ঠা, শৃংখলাবােধ, পবিত্রতা এবং স্রষ্টার প্রতি আনুগত্যই শান্তির ধর্ম ইসলামের ভিত্তি মূল। সকল সৃষ্ট জীবের সেবা এবং পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববােধ এর বৈশিষ্ট্য।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সিরাত মজলিশের সভাপতি মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ। সভাপতির ভাষণে তিনি মহানবীর (সঃ) আদর্শ সামনে রেখে আজ দেশ থেকে দুর্ণীতি এবং সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যে শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অভুক্ত দেশবাসীর মজুতদের উপর দিয়ে যারা খাদ্য পাচার করে তারা নিজেদের কখনাে মুসলমান বলে দাবী করতে পারে না।
মওলানা তর্কবাগীশ পবিত্র কোরানাের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ইসলাম মানবতার ধর্ম। নবীর (সঃ) আদর্শ মানবতাবােধ। ইসলামে কোন জাতিগত বিভেদ নেই। তাই ইসলামে সাম্প্রদায়িকতারও কোন অবকাশ নেই। রসুল (সঃ) এ ব্যাপারে তাঁর প্রতিটি কাজে সহনশীলতা দেখিয়েছেন। তাই সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরােধে কোন পৃথক আইনের দরকার নেই।
সভাপতি তাঁর ভাষণে জেরুজালেম মুক্ত করায় সংগ্রামে প্যালেষ্টাইনীদের ন্যায়ের সংগ্রামের সাফল্য কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করার জন্যে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আদম জাহান এবং বিশ্ব মুসলমানের অটুট ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্যেও প্রার্থনা জানান।
|উদ্বোধনীর অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইরাকী দূতাবাসের চাজ দ্য এফেয়ার্স, থাইল্যাণ্ডের রাষ্ট্রদূত এবং মিসরের রাষ্ট্রদূত। অনুষ্ঠানে তাঁরাও ভাষণ দেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বাদ মাগরিব ওয়াজ মহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আজ বুধবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনেও বাদ মাগরীব ওয়াজ মহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
আজকের মহফিলে সভাপতিত্ব করবেন ডা: এ কে এম আয়ুব আলী।
বাদ এশা অনুষ্ঠিত হবে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। পুরস্কার বিতরণ করবেন বিচারপতি জনাব আবদুল সাত্তার। পরে কিরাত অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন বুখরী সিয়াত পরিবেশন করবেন।
সূত্র: সংবাদ, ২৬ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত