You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.03.27 | ‘ডাকসু'র আলােচনা সভায় নেতৃবৃন্দ: দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণের স্বাধীনতার অধিকার সুনিশ্চিত হবে | সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

‘ডাকসু’র আলােচনা সভায় নেতৃবৃন্দ
দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণের স্বাধীনতার অধিকার সুনিশ্চিত হবে

“স্বাধীনতার পরেও আর একটি স্বাধীনতা থেকে যায়। সেই স্বাধীনতা হচ্ছে মেহনতি মানুষের নিজস্ব সম্পদের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণের সেই স্বাধীনতা অধিকার সুনিশ্চিত হবে।”
গত মঙ্গলবার সকালে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আয়ােজিত স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আলােচনা সভায় বিভিন্ন বক্তা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
ডাকসুর সহ-সভাপতি জনাব মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে উক্ত আলােচনা সভায় বক্তৃতা করেন বাকশাল নেতা জনাব শেখ শহীদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড: আখতারুজ্জামান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জনাব নূরউল-আলম লেনিন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহসভাপতি জনাব ইসমত কাদির গামা ও ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক জনাব মাহবুব জামাল।
ডঃ আখতারুজ্জামান: ড: আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশের কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী স্বাধীনতার তাৎপর্য বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সেই জন্যই প্রথম ও দ্বিতীয় বিপ্লব সম্পর্কে তাদের বিভ্রান্তি আছে। তিনি তাদের দৃষ্টিভঙ্গীর কঠোর সমালােচনা করে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গী অর্জনের আহ্বান জানান। তিনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বনের সুপারিশকারীদের সমালােচনা করে অধনতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হওয়ার সুপারিশ করেন।
সমাজতন্ত্র গড়ে তােলার জন্য তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে বাস্তব চেতনা ও শক্তি অর্জনের আহ্বান জানান।
শেখ শহীদ: অলসতা বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণকে সচেতন করে নতুন চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি সচেতন অগ্রবাহিনী গড়ে তােলার উপর গুরুত্ব আরােপ করেন।
ইসমত কাদির গামা: জনাব ইসমত কাদির গামা বলেন, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক ঐক্য ও আন্দোলনে ছাত্র সমাজ একত্রিত ছিল। আজকে বঙ্গবন্ধুর জাতীয় ঐক্যের ডাকেও ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এবং প্রগতিশীল কর্মসূচী বাস্তবায়নে এক হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি আরাে বলেন, শত্ৰু নির্মূল করার দায়িত্ব বঙ্গবন্ধুর একার নয়। ছাত্র সমাজকেও এ দায়িত্ব নিতে হবে।
মাহবুব জামান: জনাব মাহবুব জামান বলেন, সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে স্বাধীনতা অর্জনই শেষ নয়। ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে সম্পদ বৃদ্ধির লড়াইও করতে হবে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমঃ জনাব মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশ গড়ার শপথ বাস্তবায়িত করবােই। দেশ গড়ার সংগ্রাম আর স্বাধীনতার সংগ্রাম অবিচ্ছেদ ও অভিন্ন।
আলােচনা সভা শেষে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হয়েছে।

উদীচীর অনুষ্ঠান
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গত মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়ােজিত উদীচী শিল্পীগােষ্ঠীর এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তা বলেন: স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তােলা ও অমর একুশের শহীদদের স্বপ্ন শােষণহীন সুখী সুন্দর সমাজ গঠনে দেশের শিল্পী ও সংস্কৃতিসেবীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার দিন এসেছে। সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে সংস্কৃতিকে দেশের আপামর কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের কাছে পৌছে দিতে হবে। সাংস্কৃতিক জগতে পঙ্কিলতা ও সৃষ্টির ষড়যন্ত্র রােদ করতে হবে।
উদীচী কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যা বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী অধ্যাপিকা পান্না কায়সার এতে সভানেত্রীত্ব করেন। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের আলােচনায় অংশ নেন উদীচী কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী জনাব কলিম শরাফী ও উদীচীর সহ-সভাপতি জনাব ইকরাম আহমেদ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন চলচ্চিত্র শিল্পী জনাব গােলাম মােস্তফা, জনাব হাসান ইমাম, মিসেস লায়লা হাসান এবং ম, হামিদ ও শুকদেব।
অনুষ্ঠানের শেষে এক মনােজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। উদীচীর শিল্পীরা এতে অংশ নেন।

সূত্র: সংবাদ, ২৭ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত