You dont have javascript enabled! Please enable it!

গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ

সৈয়দপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্বোধনকালে বিদ্যুৎ মন্ত্রী জনাব আবদুর রব ছেরনিয়াবাত বলেছেন, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাপারে সরকার সচেষ্ট। কৃষিভিত্তিক শিল্পের প্রসার এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যেই গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ দরকার বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।
মন্ত্রীর এই ঘােষণা নিঃসন্দেহে একটা সুখবর। গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচী কেবল গ্রামােন্নয়নের জন্যেই প্রয়ােজনীয় নয়, এটাকে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নতির পক্ষেও অপরিহার্য বলে মনে করতে হবে। গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার অর্থ কেবল গ্রামবাসীদের সুখসুবিধা সৃষ্টি করা নয়, বিদ্যুতের মাধ্যমে কৃষি ব্যবস্থার যান্ত্রিকীকরণ করে কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে তােলাও। তাছাড়া বিদ্যুতের সরবরাহ পল্লী এলাকার শিল্পায়নের পূর্বশর্ত। এই দুই কারণেই গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ কর্মসূচীটি গুরুত্ব দাবী করতে পারে।
একথা অনস্বীকার্য যে, আমাদের কৃষিতে রােগা পটকা বলদ দিয়ে চাষাবাদের যে পদ্ধতি মান্ধাতার আমল থেকে চালু রয়েছে তাতে কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে বাঞ্ছিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সে বলদেরও আবার দারুণ অভাব। চাষের কাজকে পুরােপুরিভাবে যান্ত্রিকীকরণের কথা এখনও আমরা বলছি না। তা সত্ত্বেও তিন ফসলের আবাদ করতে অন্তত: কিছু কিছু ক্ষেত্রে ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার ব্যবহার ছাড়া উপায় নেই। সেচের কাজেও প্রয়ােজন বিদ্যুতের। পাওয়ার পাম্প, গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে সেচের যতটা প্রসার হছে নানা সমস্যার দরুন সেটাকে তেমন কার্যকর করে তােলা যাচ্ছে না। এর একটা কারণ হচ্ছে তেলের অভাব, যার ফলে অনেক সময় দেখা যায় সেচের যন্ত্র অচল থাকে। বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে যান্ত্রিক সেচের এই সমস্যা দূর হবে।
গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহের জরুরী প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে কুটির শিল্প প্রসারের স্বার্থেও। গ্রামের বেকার ও আধা-বেকার কৃষক ও কৃষি মজুরদের কাজের সংস্থান হতে পারে কুটির শিল্পে। কিন্তু সেজন্যে চাই গ্রামে গ্রামে বিদ্যুতের সরবরাহ। যেসব ব্যাপার নিয়ে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্যের প্রশ্ন উঠে, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ গেলে সেটাও অনেকাংশে দূর হবে।
অর্থ সংস্থানের প্রশ্ন তুলে গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচীকে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে পেছনে ঠেলে দেওয়ার কথাবার্তা শােনা যায় মাঝে মাঝে। ফলে পাঁচসালা পরিকল্পনায় গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহের যে প্রশংসনীয় কর্মসূচী রয়েছে তা কতদূর বাস্তবায়িত হবেএ নিয়ে দেখা দেয় সংশয় ও অনিশ্চয়তা। এখন বিদ্যুৎ মন্ত্রীর কথা থেকে এতদসংক্রান্ত অনিশ্চয়তার অবসান হয়েছে এটা আমরা ধরে নিতে পারি।

সূত্র: সংবাদ, ২৪ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!