বর্ণবৈষম্যবাদের বিলােপ ব্যতীত শােষিত মানুষের মুক্তি অসম্ভব
বর্ণবৈষম্যবাদ মানবতাবাদের চরম দুশমন। পৃথিবীর সর্বত্র মানবতাবাদ বিরােধী বর্ণবৈষম্যবাদের অবসান ব্যতীত শােষিত জনগণের মুক্তি এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই বর্ণ বৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরােধ গড়ে তুলতে হবে।
বর্ণবৈষম্য বিলােপের জন্য জাতিসংঘ ঘােষিত আন্তজাতিক দিবস উপলক্ষে আয়ােজিত আলােচনা সভায় বিভিন্ন বক্তা উপরােক্ত মন্তব্য করেছেন।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে হােটেল পূর্বাণীতে বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি এ আলােচনা সভার আয়ােজন করে। আলােচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ কামাল হােসেন। প্রধান অতিথির ভাষণ দেন সমিতির সভাপতি কৃষিমন্ত্রী জনাব আব্দুস সামাদ। আলােচনার অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের সদস্য জনাব আব্দুর রাজ্জাক এমপি, বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির সেক্রেটারী জেনারেল জনাব আহমদ হােসেন, জনাব মােস্তফা কামাল বার এ্যাক্ট-ল, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জনাব আলী আকসাদ এবং আফ্রো-এশীয় লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খােন্দকার মাে: ইলিয়াস। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির সম্পাদকমণ্ডলীয় সদস্য জনাব মােস্তফা জামান আব্বাসী।
ডঃ কামাল হােসেন: ড: কামাল হােসেন সভাপতির ভাষণে বর্ণবৈষম্যবাদের অবসানের জন্য সারাবিশ্বের সঠিক চিন্তা ধারার লােকদের একাতবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পৃথিবীর সর্বত্র বর্ণবৈষম্যবাদের অবসান ঘটানাে একান্ত প্রয়ােজন।
তিনি বলেন, পৃথিবীর সর্বত্র জনগণ সাহসিকতার সাথে বণ-বৈষম্যবাদের অবসানের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বর্ণবৈসম্যবাদের অবসানের সংগ্রামে রাজনৈতিকভাবে জনমত সৃষ্টি করার প্রয়ােজন রয়েছে।
ড: কামাল হােসেন বলেন, একটি ছােট সুবিধাবাদী শ্রেণী শােষণের হাতিয়ার হিসেবে বর্ণবৈষম্যবাদকে ব্যবহার করছে।
তিনি বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকারের সমর্থনের কথা পুনরায় ঘােষণা করেন।
আব্দুস সামাদ: জনাব আবদুস সামাদ বলেন, বর্ণবৈষম্যবাদের অবসান না হওয়া পর্যন্ত এর শিকার জনগণের যন্ত্রণার শেষ এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তিনি বর্ণবৈষম্যবাদকে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি মারাত্মক হুমকি বলে মন্তব্য করেন। তিনি বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘের ধারাবাহিক নিন্দাজ্ঞাপনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, এখনও পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় জনগণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বর্ণবৈষম্যবাদের শিকার হচ্ছেন।
তিনি বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকারের একাত্মতা ঘােষণা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে এবং নির্যাতিত মানুষের সংগ্রামের পক্ষে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
আবদুর রাজ্জাক: জনাব আবদুর রাজ্জাক এম,পি বর্ণবৈষম্যবাদকে মানবতাবাদ বিরােধী নীতি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, শােষকরা এই নীতির মাধ্যমে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে শােষণ করে। তিনি বলেন: আমাদের দেশেও এক শ্রেণীর উপরতলার লােক আছে যারা এই নীতির অনুসরণ করছে। তাদের লক্ষ্য শােষিত জনগণকে শােষণ করা।
তিনি বলেন, শােষকদের স্থান বাংলাদেশে হবে না। এই সমাজকে ভেঙ্গে শ্রমজীবীদের জন্য শােষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা কাযেম করা হবে।
তিনি বর্ণ বৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সংগ্রামে একাত্মতা ঘােষণা করে বলেন, এই সংগ্রামে বিশ্বের নির্যাতিত মানুষকে একতাবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করতে হবে।
জনাব আলী আকসাদ বলেন, জাতিসংঘের কিছুসংখ্যক সদস্যরাষ্ট্র বর্ণবৈষম্যবাদের নীতি অনুসরণ করে জাতিসংঘ সনদ ভঙ্গ করছে। তিনি এদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরােধ গড়ে তােলার উপর গুরুত্ব আরােপ করেন।
সূত্র: সংবাদ, ২২ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত