You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.03.17 | প্রেসিডেন্ট দাউদের সফর শেষে যুক্ত ইশতেহার: অবস্থা স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের প্রতি আফগানিস্তানের সমর্থন | সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

প্রেসিডেন্ট দাউদের সফর শেষে যুক্ত ইশতেহার
অবস্থা স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের প্রতি আফগানিস্তানের সমর্থন

বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান তাদের ফলপ্রসূ সহযােগিতার ক্ষেত্র আরাে সম্প্রসারণের দৃঢ় সংকল্পের কথা পুনরায় ঘােষণা করেছে।
বাংলাদেশে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট মােহাম্মদ দাউদের ৩ দিনের সফর শেষে রােববার রাতে ঢাকার প্রকাশিত এক যুক্ত ইশতেহারে একথা বলা হয়েছে।
ইশতেহারে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট মােহাম্মদ দাউদ উপ-মহাদেশে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্যে বাংলাদেশের গঠনমূলক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। যুক্ত ইশতেহারের পূর্ণ বিবরণ নীচে দেওয়া হলাে:
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণক্রমে আফগানিস্তান প্রজাতন্ত্রের মহামান্য প্রেসিডেন্ট জনাব মােহাম্মদ দাউদ ১৯৭৫ সনের ১৪ থেকে ১৬ই মার্চ বাংলাদেশে এক সরকারী সফরে আসেন। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্টের সাথে ছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব মােহাম্মদ খান জালালার, পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব আলী আহমদ খুররম ও উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব এম ওয়াহেদ আবদুল্লাহ এবং আফগান সরকারের প্রবীণ কর্মকর্তাবৃন্দ।
সফরকালে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট সাভার জাতীয় শহীদ মিনারে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। প্রেসিডেন্ট মােহাম্মদ দাউদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথেও মিলিত হন। প্রেসিডেন্ট মােহাম্মদ দাউদকে তাঁর সফরকালে বাংলাদেশের জনগণ ও নেতৃবৃন্দ দু’দেশের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের গভীর মৈত্রীপূর্ণ সম্পর্ক, সমঝােতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবােধের প্রতিচ্ছবি সম্বলিত এক বন্ধুত্বপূর্ণ আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ অভ্যর্থনা জানান।
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট মােহাম্মদ দাউদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও প্রধান আন্তর্জাতিক বিষয়সহ অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলােচনা করেন।
এসব আলােচনা পরিপূর্ণ সমঝােতা ও পারস্পরিক আস্থাপূর্ণ মৈত্রী ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
আলােচনার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্টকে সাহায্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব মােহাম্মদ খান জালালার, পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব আলী আহমদ খুররম, উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব এস, ওয়াহেদ আবদুল্লাহ, চাজ দ্য অ্যাফেয়ার্স জনাব আবদুল্লাহ কাদের।
আলােচনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে সাহায্য করেন, উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী জনাব এম, মনসুর আলী, বাণিজ্য ও বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মােশতাক আহমদ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রবীণ কর্মকর্তাবৃন্দ।
আলােচনায় চলতি আন্তর্জাতিক সমস্যা এবং দু’দেশের ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্ক আরাে সংহত ও জোরদার করার ব্যাপারে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং মনােভাবের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মাননীয় অতিথিকে স্বাধীনতার পর থেকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাঙালি জনগণের সাফল্য সম্পর্কে অবহিত করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে আফগান প্রেসিডেন্ট গভীরভাবে অভিভূত হন এবং নয়া সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামাে গঠনে তার প্রচেষ্টা ও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শােষণের ফলে। অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা সাফল্যজনকভাবে অতিক্রম করার জন্যে বাংলাদেশের জনগণের সুস্পষ্ট উদ্যম ও দৃঢ় সংকল্পের উচ্চ মূল্যায়ন করেন।
আফগান প্রেসিডেন্ট ১৯৭৩ সনে প্রজাতন্ত্র ঘােষণার পর থেকে সাধিত উন্নয়ন এবং প্রজাতন্ত্রের অধীনে গৃহীত প্রগতিশীল সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কর্মসূচী বর্ণনা করেন। প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এসব প্রগতিশীল নীতির সাফল্যও বর্ণনা করেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আফগান জনগণের গঠনমূলক প্রচেষ্টার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করে বলেন, প্রেসিডেন্ট মােহাম্মদ দাউদের প্রেরণাদানকারী নেতৃত্বে একটি নয়া সমাজ গঠনে তাঁদের সাফল্যে বাংলাদেশের জনগণ আনন্দিত।
উভয়পক্ষ, যার প্রতি তাদের দেশ সব সময়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেই জোটনিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতির প্রতি তাদের আত্মােৎসর্গের কথা পুনরায় ঘােষণা করেন। উভয়পক্ষ আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাব বাস্তবায়নে সর্বাধিক অবদান রাখার ব্যাপারে তাদের সংকল্পের কথা পুনরায় উল্লেখ করেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ষষ্ঠ বিশেষ অধিবেশনে একটি নয়া আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামের ঘােষণা এবং কর্মসূচীর নীতি ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যে জোটনিরপেক্ষ দেশসমূহের প্রচেষ্টার প্রতি তারা সমর্থন জানান। তারা পুনরায় তাদের অভিমত ব্যক্ত করে বলেন যে, দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধনের জন্যে উন্নয়নশীল দেশগুলােকে অবশ্যই তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কারিগরী সহযােগিতা জোরদার করতে হবে। উভয় পক্ষ আরাে মতৈক্যে পৌঁছেন যে, আত্মনির্ভরশীলতার বাস্তবায়নের জন্যে বর্তমান ফলপ্রসূ সম্ভাবনার এ অঞ্চলের দেশগুলাের মধ্যে অধিকতর সহযােগিতা অপরিহার্য।
কলম্বােতে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ বৈঠকের তাৎপর্য সম্পর্কে ও উভয় পক্ষ মতৈক্যে পৌঁছেন। এশিয়া মহাদেশে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনকে সফল করার উদ্দেশ্যে উভয় পক্ষ তাদের প্রচেষ্টা সমন্বিত করার ব্যাপারে ঐক্যমতে উপনীত হন।
দক্ষিণ এশিয়ার চলতি ঘটনাবলী পর্যালােচনা পর উভয় রাষ্ট্রপ্রধান দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেন যে, এ অঞ্চলের জনগণের বৈধ অধিকার ও আশা আকাংখার প্রতি শ্রদ্ধা এবং সমঝােতা ও পারস্পরিক সদিচ্ছার মনােভাব নিয়ে আলােচনার মাধ্যমে বিরাজমান সমস্যায় সমাধানেই কেবল এ অঞ্চলে একটা শান্তির পরিবেশ গড়ে তুলতে পারে। এ প্রসঙ্গে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট উপমহাদেশে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্যে বাংলাদেশের গঠনমূলক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্যে প্রেসিডেন্ট দাউদের প্রাজ্ঞ রাজনৈতিকসুলভ উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
উভয় পক্ষ ভারত মহাসাগরকে শান্তি এলাকায় পরিণত করার ঘােষণার দাবীর প্রতি তাদের সমর্থনের কথা পুনরায় ঘােষণা করেন। তারা আশা প্রকাশ করেন যে, জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট ঘােষণার প্রতি শ্রদ্ধা ও অনুরক্তি প্রদর্শিত হবে।

সূত্র: সংবাদ, ১৭ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত