You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ১১ই এপ্রিল, বৃহস্পতিবার, ২৮শে চৈত্র, ১৩৮০

স্বাগতমঃ বঙ্গবন্ধু আজ স্বদেশে ফিরছেন

চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দীর্ঘ বাইশ দিন সোভিয়েত ইউনিয়নে কাটানোর পর আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে স্বদেশে ফিরছেন। শুকুর আলহামদুলিল্লাহ-স্বাগতম বঙ্গবন্ধু। আল্লাহর অসীম মেহেরবানী যে, বাংলার নয়নমণি আবার সম্পূর্ণ সহিসালামতে তার স্নেহ উষ্ণ কোলে ফিরে আসতে পারছেন। সোভিয়েত সরকারের আমন্ত্রণে গত ১৯শে মার্চ তিনি রুশদেশে পৌঁছেন এবং সম্পূর্ণ সরকারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসারত থাকেন। বঙ্গবন্ধুর রোগমুক্তির জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বাংলাদেশের বহু স্থানে একাধিকবার বিশেষ প্রার্থনা ও মিষ্টান্ন ব্যবস্থা করা হয়। আল্লাহ মানুষের ডাক শুনেছেন। তাই জাতির পিতা সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে গতকাল মস্কো থেকে স্বদেশের পথে নয়াদিল্লি রওনা হন।
নয়াদিল্লী আমার আগে প্রধানমন্ত্রী ক্রেমলিনে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি মিঃ ব্রেজনেভের সাথে সাক্ষাৎ করেন। দুই নেতা গভীর আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে উভয় দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নত করণ ও সমকালীন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। তারা জানিয়েছে যে, উভয়ের আলোচনায় বিভিন্ন সমস্যা গুলি সম্পর্কে সম্পূর্ণ মতৈক্য ছিল। সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, সামাজিক শান্তি স্থাপন ও পারস্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব ওপর উভয়ই গুরুত্ব আরোপ করেন। এর আগে বঙ্গবন্ধু সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী মিঃ কোসিগিন এর সাথে আলোচনা করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সমস্যা, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের সর্বশেষ ঘটনা সম্পর্কে মিঃ কোসিগিনের সাথে মত বিনিময় করেন।
বঙ্গবন্ধুর সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে গতকাল দিল্লির পালাম বিমানবন্দর পৌঁছানোর পর বিপুল হর্ষধ্বনি ও উদ্দীপনার মাঝে তাকে স্বাগতম জানানো হয়। বিমানবন্দরে বিদেশী কূটনীতিকবৃন্দ ও জনসাধারণ ছাড়াও আরো যারা ছিলেন তাদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, তার মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ কামাল হোসেনের নাম উল্লেখ্য। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকার ব্যবস্থা করা হয় এবং তিনি শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে তিন দফা ব্যাপকভিত্তিক আলোচনায় মিলিত হন। এছাড়া ত্রিপক্ষীয় আলোচনার বিষয়বস্তু ও অগ্রগতি সম্পর্কেও তাকে অবহিত করা হয়। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এ সময় বঙ্গবন্ধুর দিল্লিতে উপস্থিতি সার্বিকভাবে আলোচ্য সমস্যাসমূহের ওপর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করছে।
আজ বঙ্গবন্ধুর ঢাকায় ফিরছেন। তাকে ঢাকা বিমান বন্দরে প্রাণঢালা সংবর্ধনা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। জাতির পিতা সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে তার সমস্যা জর্জরিত মানুষের মাঝে আবার ফিরে আসতে পেরেছেন বলে আমরা আল্লাহর দরবারে জানে হাজার শুকুর। স্বাগতম খোশ আমদেদ জাতির পিতা, খোশ আমদেদ বঙ্গবন্ধু, খোশ আমদেদ প্রধানমন্ত্রী জনাব শেখ মুজিবুর রহমান। আপনি আবার আপনার দ্বিধাহত ও সমস্যা-জর্জরিত মানুষকে সুখী ও সমৃদ্ধ জীবনে নতুন আলোর সন্ধান দিন আমরা এই আশাই করছি।

দ্রব্য সরবরাহের বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের রুখতে–

দেশে মওজুত দ্রব্যের পরিমাণ কম। উৎপাদিত পণ্য আমাদের চাহিদার তুলনায় নিতান্তই স্বল্প। এই দুটোর উপর যখন পণ্য সরবরাহের শিথিলতা, গাফিলতি অথবা বিঘ্ন সৃষ্টির অপচেষ্টা চলে তখন তারা সংকটকে আরো গভীরতরই করে তুলতে সহায়তা করে। স্বাধীনতার পর গত দু’বৎসরেরও বেশি সময় আমাদের এই তিনটি প্রতিকূল অবস্থাকেই মোকাবিলা করে অগ্রসর হতে হচ্ছে। খাদ্যশস্য বা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উৎপাদনের স্বাধীনতা-পূর্ব কালেও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলাম না। উন্নয়নশীল দেশের সাধারন চরিত্র অনুসারে আমরা কাঁচামাল বাইরে পাঠিয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করতাম। স্বাধীনতাত্তোরকালে হঠাৎ করে সে অবস্থার কোন পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ ছিল না। আমাদের তাই দেশে উৎপাদন এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য নিজেদের চাহিদা পূরণ করে চলতে হচ্ছে।
বাস্তব কারণেই যুদ্ধোত্তর দেশে আমরা আমাদের চাহিদার সম্পূর্ণটাই দেশে উৎপাদন এবং আমদানি সূত্র থেকে মেটাতে পারিনি। গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া মত আবার যে স্বল্প পরিমাণ সম্পদ আমাদের হাতে এসে সঞ্চিত হয় সুষ্ঠু বন্টন এবং সরবরাহের অভাবে তা সাধারন মানুষের আয়ত্ত সীমায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সত্যিকারের অভাবজনিত সংকট তীব্রতর হচ্ছে। আর একদিকে মওজুত দ্রব্যাদি পাহাড়ের মতো জমা হয়ে উঠছে গুদামে অথবা খোলা স্থানে অযত্নে। পত্রপত্রিকায় এই নাই নাই এর পরিস্থিতিতেও স্থানে স্থানে আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা জিনিস জমে থাকার খবর ছাপা হচ্ছে।
সরবরাহ এবং বন্টন ব্যবস্থায় এই যে ত্রুটি এর পেছনে যে শুধু লরি ট্রাক ট্রেনের স্বল্পতাই কাজ করছে এমন মনে করার কোন কারণ নেই। বরং এক শ্রেণীর কর্মচারী তাদের কাজের গুরুত্ব এবং দায়িত্ব সম্বন্ধে গা এড়িয়ে চলার মনোভাব এবং আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা এই সংকট সৃষ্টির জন্য অনেকাংশে দায়ী।
এছাড়া একশ্রেণীর রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ী মতলববাজ রয়েছে যারা পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দিতে নিজেদের উদ্যোগে কম কাজে লাগান না। মতলববাজ রাজনীতিকেরা জনসাধারণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে তা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায় আর ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগকে বাজারে সে সব জিনিসের সল্পতাকে কেন্দ্র করে লুটতে চায় মুনাফা।
গত ৮ই এপ্রিল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বন্টন এবং সরবরাহকারী সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, এদের বিরুদ্ধে খুব শীগগিরই কঠোর আইন প্রণয়ন করা হবে। আমরা বাণিজ্যমন্ত্রীর উপলব্ধিকে অভিনন্দিত করছি, সঙ্গে সঙ্গে বলছি আইন প্রণয়ন শুধু নয় সে আইন যাতে বাস্তবে কার্যকরী হয় তার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। অন্যান্য অপরাধ দমনেও কম আইন প্রণীত হয়নি। কিন্তু তার সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবে সে সকল অপরাধীদের হাতে জনগণের দুর্ভোগ বৃদ্ধি বৈ হ্রাস পায়নি।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!