You dont have javascript enabled! Please enable it!

ফুলেরমালা পতাকায় সমস্ত দিনের মাঝে অন্য হয়েছে একটি দিন
উৎসব মুখর পরিবেশে সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপিত

গতকাল। এদিনটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। দিনটি বাঙালি উদ্যাপন করেছে হৃদয়ের প্রতি , শ্রদ্ধার আর ভালবাসা ভাের থেকেই বঙ্গবন্ধুর ভবনে এবং পরবর্তী সময়ে স্রোত চলেছে গণভবনে। বুদ্ধিজীবীদের সাথে সমাজে অখ্যাতঅবজ্ঞা সাধারণ মানুষ গিয়েছে ছাত্র-সমাজ, মহিলাদের সংগঠন ও শিশু কিশাের-কিশােরী।
গতকাল ভােরে উঠেই বঙ্গবন্ধু চলে যান অসুস্থ পিতার শয্যাপাশে। জন্মদিনের শুরু হলাে তার পিতার দোয়া নিয়ে।
জাতির জনকের জন্মদিনে সরকারী ও বেসরকারী ভবনে জাতীয় পতাকা উঠেছে গৌরবের সমাচার নিয়ে সংকট উত্তরণে দৃঢ় হাতে বঙ্গবন্ধু জাতিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, একমনা দলগুলাে ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠে এসেছে হাতের পাঁচ আংগুলের মত সংঘবন্ধ মুষ্ঠিতে তারই নতুন পথে যাত্রার নির্দেশ বহন করে। উপহার নিয়ে এসেছেন অনেকে, আলােচনা সভা হয়েছে, হয়েছে তার জীবনের ওপর আলােকচিত্র প্রদর্শনী। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সমাজসেবীরা গিয়েছেন তার কাছে শ্রদ্ধা জানাতে আর শুভেচ্ছা বহন করে। দীর্ঘ জীবন কামনায় মিলাদ মহফিল হয়েছে। মসজিদ-মন্দির-গীর্জায় বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ জীবন কামনায় মােনাজাত আর প্রার্থনা করা হয়েছে। যে ফুল আর মালা গ্রহণ করেছেন বঙ্গবন্ধু জন্মদিন উপলক্ষে তার কিছুটা জাতির জনকর নির্দেশে শহীদ সােহরাওয়াদী ও শেরে বাংলা ফজলুল হকের মাজারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিছু মালা আর ফল দেওয়া হয় মৃতুঞ্জয়ী সাজেন্ট জহুরুল হকের কবরে, আজিমপুরে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মাজারে এবং সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সমগ্র জাতির স্বতঃস্ফুর্ত হৃদয়ের উচ্ছাস, প্রীতি, শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় অনুরণিত হয়েছে একটি কথা, বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে সাধারণ কামনা:
“আমি তােমাদেরই লােক মাের নাম এই বলে খ্যাত হােক।” গণ-মানুষের নেতা হিসেবে এই খ্যাতির তিলক তাঁর ললাটে জন্মদিনে জ্বলজ্বল করছে।
বঙ্গজবন্ধুর ৫৬তম জন্মদিবসে বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডিস্থ বাসভবনে সকালবেলা আন্তরিক শুভেচ্ছা নিয়ে সম্বর্ধনা জানান উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ আজাদ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী জনাব আবদুর রব সেরনিবাবাত, তথ্য ও বেতার মন্ত্রী জনাব কোরবান আলী, সমবায় মন্ত্রী শ্রী ফণী মজুমদার, পুর্ত ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী জনাব সােহরাব হােসেন, খাদ্য মন্ত্রী জনাব আবদুল মােমেন, শ্রম ও সমাজ উন্নয়ন মন্ত্রী জনাব জনাব ইউসুফ আলী এবং বন প্রতিমন্ত্রী জনাব রিয়াজউদ্দিন আহমেদ।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা নিয়ে এসেছেন বাকশাল সদস্য জনাব মহীউদ্দিন, রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী জনাব তােফায়েল আহমদ, চীপ হুইপ জনাব শাহ মােয়াজ্জেম হােসেন।
সকালে নগর কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ ‘এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ শ্লোগান এবং অন্যান্য শ্লোগানসহ একটি মিছিল সহকারে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। তারা বঙ্গবন্ধুকে একটি কেক উপহার দেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কর্মীরাও এক বিরাট মিছিল করে প্লাকার্ড নিয়ে এবং শ্লোগান দিতে দিতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আসেন। বঙ্গবন্ধুকে তারা জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানান। বঙ্গবন্ধু যুব লীগ কর্মীদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বাণী প্রদান করেন।
সকালে বাংলাদেশ কৃষক লীগের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে একটি স্মারক উপহারসহ বঙ্গবন্ধুকে মাল্যভূষিত করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন সভাপতি বাদল রশীদ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী জনাব আবদুর রব সেরনিয়াবাত। | বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন একটি বিরাট মিছিলসহকারে বিভিন্ন প্লাকার্ডসহ বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে নিয়ে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। তিনিও ছাত্রদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বাণী প্রদান করেন।
ছাত্রদের সাথে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড: মতিন চৌধুরী ও ডাকসু নেতৃবৃন্দ।
অধুনালুপ্ত ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক শ্রী পঙ্কজ ভট্টাচার্য ও সাংগঠনিক সম্পাদিকা বেগম মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে ন্যাপ কর্মীদের এক মিছিলসহ গিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান ও মাল্যভূষিত করেন।
অধুনালুপ্ত বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি শ্রী মণি সিংহ ও সাধারণ সম্পাদক মােহাম্বদ ফরহাদ ও কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীয় সদস্যগণ বঙ্গবন্ধুকে তাঁর বাসভবনে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।
গােপালগঞ্জ মহকুমার জনগণের পক্ষ থেকে জন্মদিনের একটি কেক উপহার আসে। ঢাকা নগর ছাত্র লীগ বঙ্গবন্ধুকে একটি রৌপ্য শাপলা উপহার প্রদান করেন।
বাংলাদেশ শান্তি পরিষদে সেক্রেটারী জেনারেল জনাব আলী আকসাদ, জনাব বহর রহমানসহ শান্তি পরিষদের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে তার বাসভবনে গিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।
আফ্রো-এশীয় গণ পরিষদের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর শুভেচ্ছা জানান জনাব বজলুর রহমান এবং পরিষদের পক্ষ থেকে মাল্যদান করেন। বিকেলে বঙ্গভবনে শিশু-কিশাের সংস্কৃতিক খেলাঘর, কচিকাঁচার মেলা গার্ল গাইডস ও একত্রে প্রায় দেড় সহস্র বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। বঙ্গবন্ধু ওদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে বলেন, আজকের এ দিনে তােমাদের ভালবাসাই নিলাম। নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে মাল্যভূষিত করে।
ঢাকা ইঞ্জিনীয়ারিং ইউনিভার্সিটির চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া আরাে বহু প্রতিনিধি কলেজ, স্কুল, প্রাইমারী স্কুল ছাত্র-চাত্রীগণ বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।

সূত্র: সংবাদ, ১৮ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!