You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.03.15 | দু'দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযােগিতা কাম্য: ভােজসভায় বঙ্গবন্ধু | সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযােগিতা কাম্য: ভােজসভায় বঙ্গবন্ধু
জোট নিরপেক্ষতার মাধ্যমেই শান্তি ও স্বাধীনতার বিশ্ব গড়ে তােলা সম্ভব

রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান শুক্রবার রাতে ঘােষণা করেছেন, দুদেশের মানুষের অভিন্ন। উপকার ও কল্যাণের জন্যে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের সাথে সার্বিক অর্থনৈতিক সহযােগিতার প্রতীক্ষা করছে।
জোটনিরপেক্ষতার নীতি প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘােষণা করেন, জোটনিরপেক্ষতার মাধ্যমেই শান্তি, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধানকারী এক বিশ্ব গড়ে তােলা সম্ভব।
এনা জানায়, গতরাতে বঙ্গভবনে সফররত আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট মােহাম্মদ দাউদের সম্মানে রাষ্ট্রপতি তার দেওয়া এক ভােজসভায় বক্তৃতা করছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ধারণা ব্যক্ত করে বলেন: প্রেসিডেন্টের সফরের ফলে দু’দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন জোরদার হবে।
উপমহাদেশে একটি স্থায়ী শান্তির কাঠামাে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের উদার প্রচেষ্টা। প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরনের জন্যে পাকিস্তানী পরিবারদের ফিরিয়ে নেওয়া এবং পরিসম্পদের ন্যায্য ভাগবাটোয়ারা সম্পর্কিত অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান অপরিহার্য।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এসব সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টার প্রতি পাকিস্তান গঠনমূলকভাবে সাড়া দেয়নি। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ ১শ ৯৫ জন। পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীকে তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরােধী জঘন্যতম হিংসাত্মক অপরাধের সুস্পষ্ট নজির থাকা সত্ত্বেও মুক্তি দিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ঘটনাবলীতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ঐ অঞ্চলের সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্যে আফগান সরকারের প্রাজ্ঞ রাজনীতিকসুলভ উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, সংশ্লিষ্ট সকল মানুষের কল্যাণের জন্যে গৃহীত উদ্যোগের প্রতি পাকিস্তান সাড়া দেবে।
জাতিতে জাতিতে অস্ত্র প্রতিযােগিতা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, লাখ লাখ মানুষ যখন ক্ষুধা, দারিদ্র্য, আর ব্যাধির শিকার তখন মানবতার প্রতি এটা একটা অপমান।
বঙ্গবন্ধু বলেন, অস্ত্র প্রতিযােগিতা বন্ধ করা গেলে এবং এ সম্পদ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানবতার কল্যাণে নিয়ােজিত করলে তখনই কেবল স্থায়ী শান্তি ও মানুষের অগ্রগতি নিশ্চিত হবে।
আলজিয়ার্স সম্মেলনের প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতি রাষ্ট্রপতি সমর্থন জানান। তিনি বলেন, এ ধরনের ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্যে উন্নয়নশীল দেশগুলাে কর্তৃক রপ্তানিযােগ্য কাঁচামালের ন্যায্য ও সঙ্গতমূল্য অত্যাবশ্যক। তিনি বলেন, ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান আর বিস্তৃত না করার জন্যে বাণিজ্যের শর্তাবলী উন্নয়নশীল দেশের জন্য সমতা ভিত্তিক করা প্রয়ােজন।

সূত্র: সংবাদ, ১৫ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত