You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.03.09 | সিরাজদিখান ও শ্রীনগর থানার প্রকল্প- খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে জনগণের স্বেচ্ছাশ্রমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত | সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সিরাজদিখান ও শ্রীনগর থানার প্রকল্প
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে জনগণের স্বেচ্ছাশ্রমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

ঢাকা জেলার সিরাজধীখান ও শ্রীনগর থানার কৃষকরা স্থানীয় দেশপ্রেমিক ও প্রগতিশীল কৃষক কর্মীদের উদ্যোগ ও সাহায্য সহযােগিতার সংশ্লিষ্ট এলাকাকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্যে এক মহতী প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে শ্রীনগর ও সিরাজদীখান থানা কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি গঠন, আলমপুর-মদনখালী-গােবিন্দপুর খাল খনন, অগভীর নলকূপ, পাওয়ার পাম্প বসিয়ে সেচের মাধ্যমে ব্যাপক অনাবাদী জমি চাষযােগ্যকরণ, হালুয়াঘাট-দিনাজপুর-গােয়ালখালী-ছাতিয়া খাল খনন, থানা দুটির প্রান্ত সীমার একটি থানা ও একটি কলেজ স্থাপন। উল্লেখ্য যে, এই প্রকল্পে নবাবগঞ্জ থানাকেও সংযুক্ত করা হয়েছিল, কিন্তু এই থানার প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল এই প্রকল্পের যুক্ত হতে রাজী না হওয়ায় নবাবগঞ্জ থানাকে বাদ দিয়েই উল্লেখিত দুই থানার নামে সমবায় সমিতি রেজিষ্ট্রি করা হয়।
ঢাকা জেলার অন্তর্গত নবাবগঞ্জ, দোহার, শ্রীনগর ও সিরাজদীখান থানার জনসংখ্যা প্রায় ৪,৪০,০০০। মােট জমির পরিমাণ ১,৮৭,৫২০ একর। এর মধ্যে অনাবাদী জমি ৬৬,১০৯ একর, একফসলি ৬৮,০৯৮ একর এবং দুইফসলি ৫২,৯৭৩ একর। অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি, বন্যা, আশ্বিনী ঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য একফসলি জমিগুলােতে প্রায় বছরই ফসল হয় না। তিনচার বছর অন্তর ফসল হলেও একরপ্রতি ১০ মণের বেশি হয় না। মূলত: অনাবাদী ও একফসলি জমি মিলিয়ে ১,৩৪,২০৭ একর জমিতে ফসল হয়ই না। ফলে এই চারটি থানায় সবসময়ই খাদ্য ঘাটতি বিরাজ করে।
এই থানা চারটির মধ্যে রয়েছে আড়িয়লখা বিল যার দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ মাইল। এই বিলটির চারদিক দিয়ে বাঁধ দিয়ে সারা বছর এলাকাকে জলমুক্ত রেখে এলাকার জমিতে তিনটি ফসল করতে পারছে সমস্ত ঢাকা জেলার অন্তত তিন মাসের খাদ্য উৎপাদন ও ৮০ হাজার লােকের কমংসংস্থান করা যেতাে। সাবেক আমলে আড়িয়লখা বিলের বাঁধ নির্মাণসহ এই চারটি থানার উন্নয়নের জন্যে ৫৫ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছিল। কিন্তু তা ব্যয়িত হয়নি।
স্বাধীনতার পর ঢাকা জেলার কৃষক সমিতির আঞ্চলিক শাখার ও স্থানীয় দেশপ্রেমিক প্রগতিশীল নেতৃবৃন্দের আবেদনক্রমে সরকার এক বছরের মধ্যে আলমপুর, মদনখালী, গােবিন্দপুর খাল জরিপ করেন এবং খাল খননের জন্যে ১৬ লাখ টাকার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটের কারণে এর জন্যে কোন টাকা বরাদ্দ করা হয় না। উপায়ান্তর না দেখে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বাড়ইখালীতে আলমপুর-মদনখালী খাল খনন ও কৃষি উন্নয়ন সংস্থা নামে অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে ৪২ সদস্যবিশিষ্ট একটি সর্বদলীয় কমিটি তকালে গঠন করেন। এই কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় যে, খালের দুই ধারের জমির মালিকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে টেষ্ট রিলিফের মাধ্যমে এবং স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে খালটি খনন শুরু করে ১০০০ বিঘা অনাবাদী জমিতে ইরি ফলানাে হবে। কিন্তু কৃষকরা খাল খনন শুরুর পূর্বেই ৪,০০০ বিঘা জমিতে ইরি চাষ শুরু করেন। এ অবস্থায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সরকারের কাছ থেকে ৪টি পাওয়ার পাম্প যােগাড় করেন ও প্রায় ৬০ হাজার টাকার মাটি খাল থেকে কেটে কিছুটা অগ্রসর হন। অবশেষে সরকার খাল খননের জন্যে প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ টাকা। মঞ্জুর করেন। এই টাকার খননকার্য সমাপ্ত হলে খালের পাড়ে ৪ হাজার একর অনাবাদী জমি ও বাকী ১০ লাখ টাকার কাজ হলে আরও ৬ হাজার একর অনাবাদী জমি চাষের আওতায় আনা যাবে।
এলাকার নেতৃবৃন্দ নিজস্ব উদ্যোগে এ পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে ২০টি অগভীর নলকুপ বসিয়েছেন।
এর আওতায় জমি রয়েছে ৮০০ বিঘা। কৃষক পরিবার রয়েছে ৩২১টি। অগভীর নলকূপের জন্যে প্রয়ােজনীয় ২,২০,০০০ টাকার মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ দিয়েছেন জমির মালিকরা। বাকী ৪০ ভাগ দিয়েছেন জমির মালিক নন এমন সব ছােট চাকরিজীবী ও ছােট ছােট ব্যবসায়ী। জমির মালিক নন যারা তাদের উৎপাদিত ফসেলর চারভাগের একভাগ দেওয়া হবে।
অগভীর নলকূপের এই স্কীমগুলাে গ্রহণের পরে সমস্ত এলাকার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে যে আগামীতে অন্তত: একশ’ অগভীর নলকূপ এভাবে বসানাে যাবে। এ ছাড়া এলাকার চিত্রকোট ও আগলা ইউনিয়ন এই দুটি ইউনিয়নের চাষীরা নিজস্ব উদ্যোগে ১৫টি চাপাকল বসিয়ে ১০০ বিঘা জমিতে ইরি চাষ করেছে।

সূত্র: সংবাদ, ৯ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত