You dont have javascript enabled! Please enable it!

কেরানী সমরেন্দ্র পকেটমারের পােষ্টবক্স কোথায় পাবেন?

চট্টগ্রাম, ৩রা মার্চ। “চোরেরও ধর্ম আছে”-এ প্রবাদটিতে আসলে কী চোরকে হেয় করা হয়েছে, অন্যান্য পেশাগত সততার ন্যায় চুরি পেশাও যে একটা নিয়ম মেনে চলে তা বর্ণনা করা হয়েছে বলা বড় মুশকিল। কিন্তু বিভিন্ন সময় ঘটনাদৃষ্টে অতীত থেকে চালু এ সমস্ত প্রবাদ যে আলােচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায় তা বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়। প্রবাদের অর্থ যাই হােক না কেন। চুরি পেশায়ও যে বিভিন্ন প্রকৃতির লােক জড়িত থাকে নিম্নোক্ত ঘটনাদৃষ্টে বুঝা যাবে। অনেকে এ চুরি ঘটনার নায়কের চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলাবলি করছেন হয় সাধু হয়ে চোর, না হয় চোর হয়ে সাধু।
ঘটনা ঘটেছে কে, রহমান এ্যান্ড কোম্পানীর কর্মচারী সমরেন্দ্র চৌধুরীর পকেট খােয়া যাওয়াকে কেন্দ্র করে। সমরেন্দ্র সম্প্রতি তাঁর স্ত্রীর চাকরির তদ্বির করার উদ্দেশ্যে স্ত্রীর এস,এসসি, এইচ,এস,সি ও বি,এ সার্টিফিকেটের কপিসহ আরাে কিছু সংখ্যক প্রয়ােজনীয় কাগজ-পত্র পকেটে নিয়ে শহরের ২নং রুটের বাসে করে অফিসে যাচ্ছিলেন। বাসের ভীড়ের মধ্যে তাঁর পকেট ভারী দেখে বাসে সদা ভ্রাম্যমাণ পকেটমার মনে করলাে শিকার জুটেছে। সাথে সাথেই কাজ। সমরেন্দ্রের পকেট খালাস। বাস থেকে নেমে সমরেন্দ্র হতভম্ব হলাে। পকেটে কাগজের মধ্যে তার অফিসের জরুরী কাগজপত্র ছিল। মাসের শেষে পকেটটা যে আসলে গড়েরমাঠ ছিল-সমরেন্দ্র মনে মনে একথা চিন্তা করে অনেকটা খুশী হয়ে ভাবলেন পকেটমার তাকে ঠকাবার চান্স নিলেও আসলে তিনিই (সমরেন্দ্র) পকেটমারকে ঠকাবার চান্সে জিতেছেন। অন্যদিকে পকেটমার কাগজপত্রগুলাে নিয়ে মনে মনে হয়তাে ভাবলাে কেন সে সীমিত আয়ের কেরানী সমরেন্দ্রের পকেটে হাত দিতে গেল, আকালের সময়ে সমরেন্দ্রের অবস্থা তার চেয়ে কোন অংশে ভালাে নয়। ব্যবধান শুধু সমরেন্দ্রের চাকরি আছে এবং সে ভয়েই সমরেন্দ্র তার সাথী হতে পারছেন না। শিকার চিহ্নিত করতে ভুলে ক্ষতি যখন হয়েছেন ক্ষতি আরাে স্বীকার করবাে।
পকেটমার সমরেন্দ্রের অফিসিয়াল কাগজে লেখা পােষ্ট বক্সের নাম্বার দেখতে পেয়েছে। সম্ভবত: অন্য বাসে করে শিকার খুঁজতে খুঁজতে পকেটমার জেনারেল পােষ্ট অফিসে এসে সমরেন্দ্রের কোম্পানীর পােষ্ট বক্সে সার্টিফিকেটর কপিসহ কাগজগুলাে রেখে গেছে।
পকেটমারকে সমরেন্দ্রের কাগজপত্র ফেরত দিতে গিয়ে কম কষ্ট স্বীকার করতে হয়নি। এবার সমরেন্দ্র কি প্রতিদানে পকেটমারের পােস্টবক্স খোঁজার জন্যে বেরুবেন?

সূত্র: সংবাদ, ৬ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!