শিল্পে পুঁজি বিনিয়ােগ নীতি
সরকার পরিবর্তনের কথা ভাবছেন না
বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্পে পুঁজি বিনিয়ােগ নীতি পরিবর্তনের কোনরূপ সম্ভাবনা রয়েছে বলে সরকার মনে করছেন না।
শিল্পে পুঁজি বিনিয়ােগের বর্তমান সিলিং ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত সরকার বেসরকারী খাতে ঠিক করে দিয়েছেন। এটা বাড়ানাে কিম্বা সিলিং তুলে দেওয়া সম্পর্কে কোনাে কোনাে মহল থেকে কথা উঠেছে বলে একটা ক্ষীণ জনরব শােনা যাচ্ছিল।
বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব গােলাম মুস্তফার সাথে গত বুধবার এনিয়ে আলােচনাকালে এদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি ওই মন্তব্য করেন।
গত ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে ঘােষিত শিল্পে বিনিয়ােগ নীতি পরবর্তী সময়ে সংশােধন করা হয়। প্রথমে বেসরকারী খাতে পুঁজি বিনিয়ােগের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ২৫ লাখ টাকা। ওই বছর আগষ্ট মাসে শিল্পে পুঁজি বিনিয়ােগের এই নীতি অনুযায়ী শিল্প বিনিয়ােগ তফসিল প্রকাশ করা হয়। ‘৭৪ সালের সংশােধনীতে বেসরকারী পুঁজি বিনিয়ােগের সর্বোচ্চ সীমা ৩ কোটি টাকা ধার্য হয়। সরকারী ও বেসরকারী তফসিলের ক্ষেত্রে ভারী শিল্প, গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এবং গণউপযােগী (পাবলিক ইউটিসিটি) শিল্পসমূহ সরকারী খাতে রাখা হয়। মােট ৫৯ টি শিল্প বেসরকারী খাতে নির্দিষ্ট হয়।
তখন বেসরকারী পুঁজি শিলিং বাড়ানাে এবং বিদেশী পুঁজিকে বেসরকারী শিল্প খাতে নিয়ােগের বিষয়টিও সংশােধিত পুঁজি বিনিয়ােগ নীতিতে স্থান পায়। শিল্প তৎপরতা বৃদ্ধি, শিল্পোৎপাদনে বেসরকারী পুঁজিকে উৎসাহিত করা এবং মুদ্রাস্ফীতির নিরীখেই ওই সিলিং স্থির করা হয়েছিল।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান যে, শিল্পে পুঁজি বিনিয়ােগের শিলিং বাড়ানাের জন্য কোন মহল। থেকে কোনরূপ প্রস্তাব আসেনি। তা ছাড়া বেসরকারী খাতে যে-সব শিল্প রাখা হয়েছে সেখানে বর্তমান পর্যায়ে ৩ কোটি টাকার বেশি পুঁজি বিনিয়ােগের সম্ভাবনা নেই। এছাড়া সরকার সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গড়ে তােলার অঙ্গীকার নিয়েই শিল্পে পুঁজি বিনিয়ােগের নীতি ও তার সংশােধন সবদিক বিবেচনা করেই করেছেন। তা বর্তমানে বাস্তব অবস্থার নিরিখেই পরিবর্তন সম্ভব নয়।
এ ছাড়া এ যাবৎ কোন শিল্প প্রকল্পে ৩ কোটি টাকার বেশি পুঁজি বিনিয়ােগের অনুরােধ নিয়ে কোন বেসরকারী শিল্প সংস্থা এগিয়ে আসেনি। | শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব আরও জানান যে, বে-সরকারী শিল্পখাতের জন্য তফসিলে যে ‘খ’ পরিশিষ্ট রয়েছে, তা বর্ণিত শিল্পসমূহ ৩ কোটি টাকার বেশি পুঁজি বিনিয়ােগের কোনরূপ বাস্তব পরিস্থিতি নেই। ওই টাকাটাই যথেষ্ট।
এখানে উল্লেখযােগ্য যে, সরকারী খাতে যেসব ভারী শিল্প তফসিল ‘ক’-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা কোনমতেই নড়চড় হবে না। সংশােধিত শিল্পে পুঁজি বিনিয়ােগ নীতি ঘােষণাকালে এক সংবাদিক সম্মেলনে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে একথা বলেছেন। | তবে বেসরকারী খাতে শিল্প প্রকল্পের ৫৯টির তালিকা পরবর্তী সময়ে আরও বাড়ানাে যেতে পারে বলে বিভিন্ন মহলের ধারণা। এর কারণ প্রথমত দেশে শিল্প পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে এবং ক্রমেই তা সংহত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত নয়া বিনিয়ােগ নীতি অনুযায়ী প্রণীত ওই শিল্প তফসিল প্রথম পাঁচসালা ধার্যকৃত মােট উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার হিসেবে ৩ বছরের জন্য প্রণীত হয়। অর্থাৎ আগামী ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে আরও একটি সম্পূরক শিল্প বিনিয়ােগ তফসিল ঘােষণা করা হবে বলে আশা করা যায়।
সূত্র: সংবাদ, ৭ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত