চট্টগ্রামের ব্যাপক এলাকায় সফল রাবার চাষ
বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে রাবার রফতানী করতে পারবে
চট্টগ্রাম, ৩রা মার্চ। বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে রাবার চাষ সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মােচন করে চলেছে। বর্তমান প্রচেষ্টার সাথে সামান্য উদ্যম এবং আনুকুল্য যুক্ত হলে উনিশ শ’ আশি সাল নাগাদ বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ চাহিদা যথাযথভাবে মিটিয়ে নতুন কৃষিজাত সম্ভাবটি নিয়ে বিশ্বের বাজারে একটি সুদৃঢ় প্রতিযােগী হিসেবে উপস্থিত হতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান, ফটিকছড়ি, দাঁতমানা, রামু, কক্সবাজার, সীতাকুণ্ড, কুমিরা, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি এবং রামগড় সিলেট জেলার ভাটোয়ার ও রশিদপুরে ও ময়মনসিংহের গারাে পাহাড়ে রাবাবের চাষ হচ্ছে। এ সমস্ত অঞ্চলের মধ্যে চট্টগ্রামের রাউজান রাবার বাগান এবং দাঁতমারা রাবার বাগানে সাফলজনকভাবে রাবার উৎপাদন শুরু হয়েছে।
রাউজান রাবার বাগান প্রকল্পে রাউজানে বারােশ’ পঞ্চাশ একর এবং ডাবুয়ায় সতের শ’ বাহাত্তর একর জমিতে প্রায় দু’লাখ রাবার গাছের চারা এক সুন্দর সবুজ নয়নাভিরাম বনানীর সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে এখন প্রায় আশি হাজার গাছ থেকে নিয়মিত রাবার সংগ্রহ করা হচ্ছে।
রাউজান রাবার বাগান ১৯৭০-৭১ সালে ২৬,১৮৫ পাউন্ড, ৭১-৭২ সালে ৩৬,৭৬০ পাউন্ড এবং ৭২-৭৩ সালে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৬৬ পাউন্ড রাবার উৎপাদন করেছে। এছাড়া ১৯৭৩-৭৪ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ১ লাখ ১৫ হাজার পাউন্ড রাবার সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৯৭৪ সালের জুন হতে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে সংগ্রহের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় আশি হাজার পাউন্ড। রাউজান রাবার বাগান পরিকল্পনা পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট সূত্র হতে জানা গেছে, ১৯৭৪-৭৫ আর্থিক সালে এ বাগান হতে দু লাখ পাউন্ড কাচা রাবার সংগ্রহ করা যাবে।
সিলেট এবং চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানাধীন দাঁতমারা রাবার বাগানেও রাবার উৎপাদন খুবই আশাব্যঞ্জক। এদুটি স্থানে যথাযথভাবে উৎপাদন শুরু হলেই ১৯৮০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ তাঁর আভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদার ক্ষেত্রে স্বয়ং সম্পূর্ণ হবে এবং এর পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে রাবার রফতানী বাজারে প্রতিযােগিতা করতে পারবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের রাবার বাগানসমূহকে সাধারণভাবে দুটি শত্রুর মােকাবেলা করতে হচ্ছে। প্রথমত: প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘুর্ণিঝড় ১৯৭০ সালে রাউজান রাবার বাগানের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। ১৯৭২-৭৩-৭৪ সালের ঘূর্ণিঝড়েও রাবার গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: অগ্নিকাণ্ড রাবার বাগানের এক প্রধান শত্রু। রাবার বাগানের আশেপাশের এলাকার জনসাধারণের অজ্ঞতা এবং অনেক ক্ষেত্রে অহেতুক বৈরী ভাবাপন্নতার জন্য প্রতি বছর অগ্নিকাণ্ডে লাখ লাখ টাকার রাবার গাছ ভস্মীভূত হয়ে যায়। আমাদের দেশের রাবার বাগান প্রকল্পসমূহে আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রতি বছর শুষ্ক আবহাওয়াকালীন সময়ে রাবার বাগান অগ্নিকাণ্ডের সম্মুখীন হয়। এ নতুন অর্থকরী ফসলের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অবিলম্বে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়ােজন। বিশ্বে বর্তমানে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, কম্বােডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, ভারত, বার্মা, ব্রাজিল, দক্ষিণ আমেরিকা এবং বাংলাদেশে রাবার উৎপন্ন হয়। বিশে।বর সর্বমােট চাহিদার অর্ধেক সরবরাহ করে মালয়েশিয়া। এরপরে স্থান ছিল কম্বােডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের। কিন্তু এ সমস্ত অঞ্চলে যুদ্ধজনিত কারণে রাবার উৎপাদন অনেকাংশেই ব্যাহত হয়ে গেছে। বর্তমানে রাবার উৎপাদনকারী দেশসমূহের তালিকায় বাংলাদেশের নামও সংযােজিত হবার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
সূত্র: সংবাদ, ৫ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত