You dont have javascript enabled! Please enable it!

হার্ডিঞ্জ ব্রীজের মেরামতের কাজ এখনই শুরু করা দরকার

ঈশ্বরদী, ২রা মার্চ (নিজস্ব সংবাদদাতা)। পদ্মা নদীর দু’পাশেই যাত্রী ও রেলবর্গী পারাপারের ঘাট নির্মাণের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন, ফেরীযােগে বর্গী ও যাত্রী পাকশী-দামুকদিয়ার মধ্যে চলাচল শুরু, রেল চলাচেলর জন্যে সাত মাইল দীর্ঘ নয়া রেলপথ নির্মাণ এবং একটি অস্থায়ী রেলষ্টেশন প্রতিষ্ঠা করা হলেও হার্ডিঞ্জ ব্রীজের মেরামত কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে তা সঠিকভাবে জানা যাচ্ছে না।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে ফেব্রুয়ারী, মার্চ, এপ্রিল সময়ে পদ্মা নদীর পানির বিশেষ হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে না। এই সময়ে ব্রীজ মেরামত করার খুব ভাল সময় হলেও কখন শুরু করা হবে তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত।
পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রীজ মেরামতের ব্যাপারে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানার জন্যে গতকাল (১লা মার্চ) বিকেলে স্থানীয় সংবাদিকবৃন্দ পাকশী রেলওয়ের কতিপয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাংবাদিকবৃন্দ সরেজমিনে সবকিছু দেখা ও জানার জন্যে নব-নির্মিত পাকশী ফেরী ঘাট ও দানুকদিয়া ঘাটও পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, হার্ডিঞ্জ ব্রীজের ক্ষতিগ্রস্ত গার্ডারখানি মেরামতের কাজ সম্পন্ন করার জন্যে ভারত হতে আগত প্রকৌশলীবৃন্দ এই ব্রীজের মেরামতের কাজ শুরু করার ব্যাপারে বিলম্বের কারণ হিসেবে কয়েকটি সমস্যার কথা বলেছেন, যেমন-(১) ব্রীজ মেরামতের কাজ শুরু জন্যে প্রয়ােজনীয় বিদ্যুৎ শক্তির সরবরাহের ব্যবস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বাের্ড করতে পারছেন না; (২) ব্রীজের উপর দিয়ে ভেড়ামারা-গােয়ালপাড়া হতে পাকশীতে যে উঁচু ভােল্টেজের বৈদ্যুতিক তার আনা হয়েছে ব্রীজ মেরামতের সময়ে সেই তার হতে রক্ষা পাওয়ার জন্যে সাবধনতা অবলম্বনের নিমিত্ত যে স্ক্রিনের প্রয়ােজন তা নেই। (৩) যাত্রী ও ওয়াগন ফেরী পারাপারের জন্যে ফেরীঘাট নির্মাণের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি।
কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষীয় সূত্রে জানা গেছে এবং সরেজমিনে পরিদর্শন করে স্থানীয় সাংবাদিকরা দেখতে পেয়েছেন যে; ব্রীজ মেরামতের জন্য প্রয়ােজনীয় বিদ্যুৎ শক্তির সরাবরাহ গত ২৮/২/৭৫ তারিখ হতে নিশ্চিত করা হয়েছে।
স্ক্রিনের ব্যাপারে জানা গেছে যে, পুরনাে যে স্ক্রিন ছিল তা গত পরশু লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ব্রীজের মেরামত কাজ শুরুর প্রথমেই স্ক্রিনের তেমন কোন আবশ্যকতা নেই বলে অভিজ্ঞ মহল মত প্রকাশ করেন। এই মহলের মতে স্ক্রিনের বিশেষ প্রয়ােজন তখনই যখন ব্রীজ মেরামতের মূল কাজ শুরু হবে।
পদ্মা নদীর উভয় পারেই পাকশী এবং দামুকদিয়া ঘাটে যাত্রীবাহী ফেরী ওয়াগন বার্জ চলাচলের সকল ব্যবস্থা ১৭ই ফেব্রুয়ারী তারিখের ভেতরেই সম্পন্ন করা হয়েছে বলে পাকশী রেলওয়ে সূত্র দাবী করেছেন।
এদিকে গতকাল বিকেলে স্থানয়ি সাংবাদিকবৃন্দ পাকশী ঘাট হতে ওয়াগন বার্জে ২টি রেলওয়ে ওয়াগনসহ পদ্মা নদীর দক্ষিণ তীরে গিয়ে দামুকদিয়া ঘাটে সর্ববিধ ব্যবস্থা সম্পন্ন। অবস্থায় দেখে এসেছেন।
পাকশী এবং দামুকদিয়া ঘাটে রেলওয়ে ওয়াগন চলাচল ও পারাপারের জন্যে সর্বমােট ৭ মাইল দীর্ঘ নতুন রেল লাইন বসানাে হয়েছে। দামুকদিয়া ঘাটে এজন্যে একটি অস্থায়ী নতুন রেলওয়ে ষ্টেশনের কাজ গত ১৭ ফেব্রুয়ারীর পূর্বেই সম্পন্ন করা হয়েছে। এই নতুন ষ্টেশনে বুকিং অফিস, ষ্টেশন মাষ্টারের অফিস, যাত্রীদের বিশ্রামাগার, বিজলী বাতি এবং পানীয় জলের ব্যবস্থাদি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়ে গেছে।
পাকশী রেলওয়ে সূত্রে গতকাল জানা গেছে যে, ব্রীজের ক্ষতিগ্রস্ত গার্ডারখানি পুননির্মাণের জন্যে সর্বমােট ১২৫০ টন সাজ-সরঞ্জামের প্রয়ােজন। এর ভেতরে গত মাসের ১১ ও ১৮ তারিখে ২টি বিশেষ ট্রেনে ভারত হতে প্রায় ৬৫০ টন সাজ-সরঞ্জাম এসে পাকশীতে পৌছে গেছে। অপর একটি ট্রেন আরও কিছু সাজসরঞ্জাম নিয়ে গতকাল সকালে দর্শনা এসে পৌঁছেছে। সেই ট্রেনখানি গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পাকশীতে এসে পৌঁছায়নি।
মে মাসের শেষের দিকে ও জুন মাসের প্রথম হতে পদ্মা নদীর পানি ব্যাপকভাবে ওঠানামা করতে থাকে। ফলে ঐ সময়ে পানির ওঠানামার সাথে তাল বজায় রেখে রেলওয়ে ওয়াগান পারাপারের ব্যবস্থাবলী ঠিক রাখা ও সুষ্ঠুভাবে কাজ চালানাে কষ্টসাধ্য ব্যাপারে পরিণত হয়। তাছাড়া বর্ষার সময়ে যাত্রীদের চলাচল এবং যাতায়াতেও ব্যাপক অসুবিধে সৃষ্টি হবে। সুতরাং হার্ডিঞ্জ ব্রীজ মেরামতের কাজ শুরু করার এখনই উপযুক্ত মৌসুম।

সূত্র: সংবাদ, ৩ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!