You dont have javascript enabled! Please enable it!

দিনাজপুরে মেয়েরা মাটি কাটছেন

দিনাজপুরের খবর। দিনাজপুর শহরে ও পঞ্চগড় এলাকায় প্রত্যহ শত শত মহিলা কোদাল ও ডালি নিয়ে রাস্তা মেরামতের মাটি কাটার কাজে লেগে পড়েছেন। টেষ্ট রিলিফের এই কাজে মাথাপিছু প্রতি হাজার ফুটে ২০ সের করে গম পাওয়া যাচ্ছে।
১৯৭৫ সাল হচ্ছে নারীবর্ষ। আমরা দিনাজপুরের খবরটিকে নারীবর্ষের একটি বিশেষ অর্থপূর্ণ করব বলে মনে করছি।
আমাদের দেশের মেয়েরা কোদাল-ডালি নিয়ে রাস্তা মেরামতের কাজে নেমেছেন, এটা যে শক্ত কাজ হিসেবেই বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য তা বলতে চাই না আমরা। মেয়েরা সংসারের চাকা চালাবার জন্য বহু ধরনের শক্ত কাজ করেন। জীবিকার জন্য ঘরের বাইরেও মেয়েরা শক্ত কাজে নেমেছেন। রাস্তা তৈরির ইট ভাঙ্গার কাজে মেয়ের বেশ কিছুকাল ধরেই নিয়ােজিত। বাংলাদেশের বাসিন্দাদের মধ্যে একাংশের মহিলারা মাটি ও অন্যান্য ভারী বােঝা বইবার কাজ করে আসছেন। বিশেষ করে সাঁওতাল মেয়েরা এ কাজে দক্ষ। তবু কোদাল-ডালি নিয়ে মেয়েরা রাস্তা তৈরি জন্য। মাটি কাটার কাজ করছেন, এ খবরটা নিশ্চয় আমাদের কাছে নতুন মনে হবে। জীবিকার যে অনিবার্য প্রয়ােজনে মেয়েরা শক্ত কাজের বৃত্তটাকে টেস্ট রিলিফের এই ধরনের কাজে লেগে। বাড়িয়ে নিলেন, তার দুরন্ত তাগিদটা নিশ্চয় কঠোর বাস্তব সত্য। এর পেছনে রয়েছে অভাবের দুঃখের অনাহারের ইতিহাস। কিন্তু পরের কাছে হাত না পেতে কিংবা ছিন্নমূল হয়ে সারা দেশে ভেসে না বেড়িয়ে এইভাবে ঘরের বাইরে শক্ত কাজের পরিধি কিছুটা বাড়িয়ে নেয়ার মধ্যে আমাদের দেশের মেয়েদের জন্য জীবিকা অর্জনের যে একটা নির্মাণমূলক কাজের নতুন পথ হলাে, সেটা নিশ্চয় কাম্য হিসেবেই বিবেচিত হবে দেশবাসীর কাছে। যে কঠিন আসছে মেহনতকে যাচাই করার জন্য এবং যা আমাদের দেশের মেযেদের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারে তাকে সাদরে বরণ করে নেয়াটাই উত্তম পথ।
অবশ্য এই কঠিনকে কম কষ্টসাধ্য করে তােলার জন্য সরকার এবং দেশবাসীর কতকগুলাে অবশ্য করণীয় রয়েছে। স্বতঃস্ফুতহভাবে প্রয়ােজনের কঠিন তাগিদে আমাদের দেশের মেয়েদের জন্য যে কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়েছে কিংবা হচ্ছে, তাকে একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে এলে কাজটাকে একই সঙ্গে বেশি উৎপাদক এবং শুধু সুসই নয় আনন্দদায়কও করে তােলা যেতে পারে। স্বতঃস্ফুততার উপর নারী সমাজের কর্মক্ষেত্রের প্রসারকে ছেড়ে দেওয়া কোনদিক দিয়েই কাম্য হতে পারে না। শ্রম ও সমাজকল্যাণ দফতর এই বিষয়টিকে তাদের চিন্তাভাবনা ও কর্মসূচীতে অবিলম্বে অন্তর্ভুক্ত করলে শুধু দিনাজপুরে নয় এবং শুধু টেস্ট রিলিফের সাময়িক কাজেই নয় সারা দেশের মেহনতী নারী সমাজের স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যাপারেও কিছুটা এগিয়ে যাওয়া যাবে।
নারীবর্ষে আমাদের দেশের বিশেষভাবে সজাগ ও সচেতন নারী সমাজের নেতৃস্থানীয় সংগঠনসমূহ বিবিধ কর্মসূচী নিয়েছেন। আমরা আশা রাখি, মেহনতী নারীদের কর্মক্ষেত্রকে অথবা কর্মবৈচিত্রকে প্রসারিত করার জন্য তাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে। দিনাজপুরের মেয়েদের কোদালডালি নিয়ে মাটি কাটার কাজের ধরনের কাজগুলােকে কীভাবে প্রসারিত কর্মক্ষেত্রে পরিপূর্ণ মর্যাদা এবং আর্থিক সাশ্রয় দেওয়া যায়, সে সম্বন্ধে নারী সংগঠনসমূহের কাছ থেকে নির্দিষ্ট প্রস্তাব আসা দরকার।

সূত্র: সংবাদ, ১ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!