You dont have javascript enabled! Please enable it!

পর্যটন শিল্পে ভবিষ্যৎ

প্রকাশ, বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে বিদেশী পর্যটকদের আগমনের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পাইয়াছে। সংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ শতকরা ৬১ ভাগ। জানা যায়, ১৯৭৩ সালের চাইতে গত বছর প্রায় ২৫ হাজার বিদেশী পর্যটক বাংলাদেশে আগমন করিয়াছেন। পর্যটকদের বেশির ভাগই আসিয়াছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, প: জার্মানী, সােভিয়েট ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত হইতে।
শিল্প হিসাবে পর্যটন শিল্প আজ প্রায় সব দেশে স্বীকৃত ও পরিপােষিত। দুনিয়ায় এমন দেশ আছে যেগুলি শুধু পর্যটন শিল্পের আয়কৃত অর্থে নিজেদের জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনা করিতেছে। আন্তর্জাতিক পর্যটনের ভিত্তি বন্ধুত্ব, সম্প্রীতি ও সহযােগিতা। পর্যটন গড়িয়া উঠে বাণিজ্যিক ভিত্তির উপর, তবে উহার ক্ষেত্র আরও সুদূর প্রসারী। আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব, সমঝােতা ও সহযােগিতার সম্পর্কটি পর্যটন শিল্পের সােপান ধরিয়া উন্নীত হইতে পারে অত্যন্ত স্বতঃস্ফুর্ত ও সাফল্যজনক উপায়ে। এখানেই জাতীয় পর্যটন শিল্পের সীমাহীন গুরুত্ব।
স্বাধীনতার পর পর্যটন শিল্পের সংগঠন, উন্নয়ন ও উহার পরিসর বিস্তৃতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্প সংস্থা উল্লেখযােগ্য ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছে। পর্যটনের ক্ষেত্র এই দেশে বিশাল, পর্যটনের আকর্ষণ এই দেশে অপরিমেয়। আমাদের আছে নদীবাহিত সবুজশ্যামল ব-দ্বীপের একটি নয়নাভিরাম ভূ-খণ্ডের পটভূমি, আছে কক্সবাজারের বিস্তৃত স্বাভাবিক তটরেখা, আছে রাঙ্গামাটির বিচিত্র নিসর্গ ও জলাশয়, আছে ময়নামতি, পাহাড়পুর, সােনার গাঁ প্রভৃতি ঐতিহাসিক স্থানের চিহ্ন, আছে সমৃদ্ধ লােকনৃত্য ও সংস্কৃতি, আছে নদী ও সমুদ্রের অপরূপ আকর্ষণ। কিন্তু এইসব ক্ষেত্র ও পটভূমিকে পর্যটকদের কাছে তুলিয়া ধরার জন্য চাই নানাবিধ সুযােগ-সুবিধা ও আকর্ষণীয় প্রচারণা। গত তিন বছরে আলাদা প্রকল্পের আওতার পর্যটন গড়িয়া তােলার কাজে হাত দেওয়া হইয়াছে, কিছু উল্লেখযােগ্য কাজও সাধিত হইয়াছে এইক্ষেত্রে।
‘৭৫ সাল বিশ্ব পর্যটনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বছর। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা এই আটটি দেশের প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৭৫ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসাবে গ্রহণ করা হইয়াছে। বিশ্ব পর্যটনের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
পর্যটন শিল্প সংগঠন করা বিশাল অর্থ ও সময়ের প্রয়ােজন। তদুপরি দরকার দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণকর্মী। এইক্ষেত্রে বাংলাদেশ পর্যটন করপােরেশনের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রহিয়াছে। ইতিমধ্যে করপােরেশন পর্যটন উন্নয়নের ক্ষেত্রে কয়েকটি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা সম্পাদনের কথা ঘােষণাও করিয়াছে। আমরা আশা করি, করপােরেশন উহার ভূমিকা আরও জোরদার করিবে। বিদেশী পর্যটকদের আরও অধিকসংখ্যায় আকর্ষণ করার জন্য জনসাধারণেরও আছে একটি সুনির্দিষ্ট ভূমিকা। তাহা হইল বিদেশী পর্যটকদের সহিত অতিথির সৌজন্য ও ভদ্রতা দেখান এবং সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে তাদের সাহায্যের জন্য চেষ্টা নেওয়া। বিদেশীদের প্রতি ম্র, ভদ্র ব্যবহার দেখান এবং তাদের সাহায্য সহযােগিতায় আসা,-ইহার মাধ্যমে আমাদের জাতীয় মূল্যবােধ ও দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রতিফলন ঘটে।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!