কুমিল্লা ঘােষণা ॥ স্বনির্ভর উৎপাদন ও সুস্থ সামাজিক ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি
গত ২৫শে ফেব্রুয়ারী কুমিল্লা পল্লী উন্নয়ন একাডেমীতে সমাপ্ত দুই দিনব্যাপী চট্টগ্রাম বিভাগীয় আত্মনির্ভর উৎপাদন প্রকল্প কর্মী-সম্মেলনে কুমিল্লা ঘােষণা প্রকাশ করা হয়।
ঘােষণায় বলা হয় ঃ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসাবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত। ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য একটি স্বরম্ভর অর্থনীতি গড়িয়া তােলার গুরুতর দায়িত্বও সকলের স্কন্বে বর্তাইয়াছে।
নূতন স্বাধীনতালব্ধ এ জাতির সামনে চরম খাদ্যসংকট, ক্ষুধা, পুষ্টিহীনতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নানাবিধ কলুষ চারিত্রিক সংকট ইত্যাদি জটিল সমস্যা মাথা তুলিয়া দাঁড়াইয়াছে এবং অবক্ষয় ও অপমৃত্যুর হাত হইতে জাতিকে বাঁচানাের প্রয়ােজন প্রতিটি দায়িত্বশীল নাগরিকের পক্ষে নিতান্ত জরুরী হইয়া দেখা দিয়াছে।
ভিক্ষুক জাতির কোনাে মর্যাদা নাই এবং ভিক্ষার দ্বারা কোনাে জাতি বাঁচিতে পারে না। স্বনির্ভরতাই হইতেছে একটি স্বাধীন জাতির মুক্তি ও আত্মপ্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ।
ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে এক ঐতিহাসিক প্রয়ােজনে চট্টগ্রাম বিভাগের পার্বত্য ড্রাম জেলা-চট্টগামের ‘সােনালী শম্য নােয়াখালীর ‘সুফলা’, কুমিল্লার ‘সবুজ’ এবং সিলেটের ‘শ্যামল’ আত্মনির্ভর উৎপাদন প্রকল্প সমূহের আত্মনির্ভর ও আত্মবলে বলীয়ান কর্মীবৃন্দ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর মিলনায়তনে পারস্পরিক মত বিনিময়ে স্ব স্ব কর্মসূচীর মূল্যায়ন করার মাধ্যমে জাতীয় প্রয়ােজনের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এখানে সমবেত হন।
এই সমন্বয় সম্মেলন দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘােষণা করে যে, আমাদের যাহা আছে তাহা লইয়া এবং সর্বশক্তি নিয়ােগ করিয়া নিজেদের সরকারী, ব্যক্তি ও সামাজিক মর্যাদা নির্বিশেষে আমাদের প্রিয় দেশকে নিম্নতম সময়ের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পরিণতিতে খাদ্যে উদ্বৃত্ত এবং অপরাপর প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদি ও ভােগাপণ্যে স্বনির্ভর করার উদ্দেশ্যে পরমতম নিষ্ঠার সঙ্গে কায়মনপ্রাণে ভেদাভেদ ভুলিয়া গিয়া সর্বশ্রেণীর সৎ মানুষের সঙ্গে কাধে কাধ মিলাইয়া কাজ করিয়া যাইবে। জাতিকে একটি সুস্থ ও সুন্দর জাতিতে উত্তরণের জন্য বর্তমান জনসংখ্যাকে পরিকল্পিত ও উৎপাদনমুখী জনশক্তিতে রূপান্তরের উদ্দেশ্যে সমাজের নিয়তম স্তর হইতে সকল স্তরে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, সংরক্ষণ এবং জনগণকে সৃজনশীল কর্মমুখর করার জন্য নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে সম্মেলনের কর্মীরা সর্বশক্তি নিয়ােগ করিবে। কর্মীরা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য আপামর জনগণের কাছে গ্রহণযােগ্য সমাজ ও বিজ্ঞানসম্মত শােভন পথে সর্বপ্রকারের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গৃহীত ব্যবস্থাবলীকে সক্রিয়ভাবে আচরণ করার ব্যাপারে জনগণের মধ্যে হইতে তাহাদের সংগঠিত ও উদ্বুদ্ধ করিবে।
সমন্বয় সম্মেরনে আত্মসমালােচনা, আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযম ও সর্ববিষয়ে আত্মনির্ভরশীলতার এবং আত্মত্যাগের মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে স্বজনশীল, কল্যাণমানসী, চিরন্তন ও শাশ্বত, সুন্দর ও শােভন মূল্যবােধ ও কর্মপ্রেরণার মাধ্যমে কর্মী ও গণমানুষের মধ্যে সাকুল্য এবং পারস্পরিক সমঝােতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার দুর্জয়, দৃঢ় ও দৃপ্ত শপথ ঘােষণা করা হয়।
সবুজের প্রধান সেবক বাণিজ্য মন্ত্রী খােন্দকার মােশতাক আহমদের উপস্থিতিতে কৃষিতে বিভাগীয় স্বনির্ভরতা অর্জনের কর্মসূচীর মূল্যায়ন ও নব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। তথ্য প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন। ঠাকুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে এ বিভাগে সকল সংসদ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মচারিগণও অংশগ্রহণ করেন।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত