শেখ আবদুল্লাহর ক্ষমতা গ্রহণ
অদ্য মঙ্গলবার, শেখ মােহাম্মদ আবদুল্লাহর কাশ্মীরের শাসন ক্ষমতার অধিষ্ঠিত হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে নয়াদিল্লীর সাথে তাহার কথাবার্তা ও আলাপ-আলােচনা সমাপ্ত হইয়া গিয়াছে। সর্বশেষে সংবাদ এই যে, শেখ আবদুল্লাহর শাসনভার গ্রহণের পথ প্রশস্ত করার জন্য কাশ্মীরের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে পদত্যাগ করিয়াছেন। শেখ আবদুল্লাহর ক্ষমতাগ্রহণের বিষয়কে কেন্দ্র করিয়া গােটা ভারতে কম আলােড়নের সৃষ্টি হয় নাই। তিনি উজিরে আজম’ হইবেম কি ‘উজিরে আলা থাকিবেন, তাহা লইয়াও বিস্তর বাগবিস্তার হইয়া গিয়াছে। শেষ পর্যন্ত স্থির হইয়াছে যে, নামে ‘উজিরে আজম’ হইলেও শেখ আবদুল্লাহ্ কামে-কাজে ‘উজিরে আলাই’ থাকিবেন। তিনি কাশ্মীরে এমন এক নির্দলীয় সরকারের নেতৃত্ব করিবেন,-যে সরকার হইবে কংগ্রেসের সমর্থনপুষ্ট। অবশ্য নামে যে কিছুই আসে যায় না, সে কথাটা শেখ আবদুল্লাহ স্পষ্ট করিয়া বলিয়া দিয়াছেন। তিনি নাম-ডাকের বিষয়টাকে মনস্তাত্ত্বিক একটা বিষয় বলিয়া উড়াইয়া দিলেও, স্পষ্ট বুঝা যাইতেছে যে, স্বায়ত্তশাসনের যে অধিকার ও ক্ষমতা লইয়া তিনি গদিনশীন হইতেছেন, তাহা ভারতের অপরাপর রাজ্যের ঈর্ষা উদ্রেক করিবে, স্বভাবতঃই। তামিল নাড়ুর চীপ মিনিষ্টার মি: করুণানিধি তাে ইতিমধ্যেই কাশ্মীরী ধরনের স্বায়ত্তশাসন দাবী করিয়া বসিয়াছেন। সে যাহাই হউক, এত তুলকালাম কাণ্ড-কারখানার মধ্যদিয়া ইন্দিরা সরকার কাশ্মীর পরিস্থিতিকে যখন বাগে আনিতে পারিয়াছেন, তখন ইতস্তত: বিচ্ছিন্নভাবে উত্থাপিত ঐসব দাবী-দাওয়াও তাহারা নিশ্চয়ই ট্যাক্স করিতে সক্ষম হইবেন।
উপস্থিত ক্ষেত্রে শেখ আবদুল্লাহ আবার কাশ্মীরের শাসন ক্ষমতা ফিরাইয়া পাইতেছেন, সবার সেরা সংবাদ ইহাই। শেরে কাশ্মীর হিসাবে পরিচিত শেখ আবদুল্লাহর প্রথম ক্ষমতাচ্যুতির পর ঝিলাম ও চিনাব দিয়া অনেক স্রোতই প্রবাহিত হইয়া গিয়াছে। এক যুগেরও অধিককাল ধরিয়া কাশ্মীরী শার্দুলের অনেক দীর্ঘনিঃশ্বাস কারা প্রাচীরের অন্তরালে মাথা কুটিয়া মরিয়াছে। শেষ পর্যন্ত সমঝােতা হইয়াছে।
আবদুল্লাহ্ পুরাদস্তর ভারতীয় নাগরিক বনিয়া গিয়াছেন। বলিতে কি, তাহার এই বােধােদয় বড় বিলম্বে ঘটিয়াছে। মাঝখানে কাশ্মীর পরিস্থিতিতে পঞ্চাশ দশকের পরিস্থিতিতে পিছাইয়া লওয়ার জিদ পরিত্যাগ করিয়াও শেখ আবদুল্লাহ অনেক সুবুদ্ধিরই পরিচয় দিয়াছেন। ভারত সরকারকেও যাহা হউক কিছুটা কনসেশন দিতে হইয়াছে। উভয় পক্ষের এই আপােষের মনােভাবই এতকালের একটা ‘বিরােধকে’ মিটাইয়া ফেলিতে সহায়তা করিয়াছে, এজন্য উভয় পক্ষই ধন্যবাদের পাত্র।
বলা বাহুল্য, এই ধন্যবাদ উৎসারিত হইবে, এই উপমহাদেশের শান্তিকামী সব মানুষের অন্তর হইতেই। পাকিস্তান সরকার এ বিষয়ে যে মনােভাবই গ্রহণ করুন না কেন, পাকিস্তানের শান্তিকামী নাগরিক সাধারণ যে কাশ্মীর প্রশ্নে আর কোন যুদ্ধে বিরােধী, তাহা ইতিমধ্যে সুস্পষ্ট হইয়া গিয়াছে। কাশ্মীর হইতে বহু দূরে অবস্থিত এই বংলাদেশও কাশ্মীর সংক্রান্ত নানা প্রশ্নে নির্বিকার নয়। এই উপমহাদেশের তিনটি রাষ্ট্র শান্তির সাথে বসবাস করুক-সকল রকম উত্তেজনা ও সংঘর্ষ এড়াইয়া নিজেদের ভুখা-নাঙ্গা জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের প্রতি মনােযােগী হউক, ইহাই বাংলাদেশের কাম্য। ইহার পরিপ্রেক্ষিতে-এই উপমহাদেশের একাধিক যুদ্ধের মূল কারণ কাশ্মীর প্রশ্নে একটি মীমাংসা হইতেছে এবং সে মীমাংসার নায়ক হইতেছেন, অন্য কেহ নয়, স্বয়ং শেখ আবদুল্লাহ। ইহাকে বাংলাদেশের জনগণ খুশির সংবাদ হিসাবেই গ্রহণ করিতে চাহিতেছে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত