You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.02.21 | আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলােচনা সভা - নূতন চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হইতে হইবে | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলােচনা সভা
নূতন চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হইতে হইবে

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শিল্পমন্ত্রী জনাব এ, এইচ, এম কামরুজ্জামান স্লোগানের রাজনীতি ছাড়িয়া দেশ গড়ার জন্য সকলকে নূতন চেতনায় একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি গতকাল (বৃহস্পতিবার) আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মহান একুশে উপলক্ষে আয়ােজিত আলােচনা সভায় সভাপতির ভাষণ দিতেছিলেন।
জনাব কামরুজ্জামান ২০শে ফেব্রুয়ারীকে শপথ গ্রহণের দিবস হিসাবে পালনের আহ্বান জানাইয়া বলেন যে, দিনটি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এই দিন সংকল্প ও শপথ গ্রহণ না করিলে ২১শের বিস্ফোরণ ঘটিত না।
তিনি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করিয়া বলেন যে, শহীদদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করিতে না পারিলে তাহাদের আত্মার প্রতি অবমাননা করা হইবে।
তিনি বলেন যে, জাতির জনক দেশ গড়ার জন্য দ্বিতীয় বিপ্লবের সূচনা করিয়াছেন। দেশের মানুষের মুক্তিই আমাদের কাম্য। কিন্তু এলােপাথাড়ি উপায়ে মানুষকে মুক্ত করা সম্ভব নহে। উহার জন্য সুপরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হইতে হইবে।
জনাব কামরুজ্জামান বলেন যে, কোন কুচক্রী রাজনৈতিক দলকে চক্রান্ত করার অধিকার দেওয়া যাইবে না। দেশগড়ার জন্য দেশের মানুষকে নূতন চেতনায় একত্রিত হইতে হইবে এবং সমষ্টিকে লইয়া বাঁচার চেষ্টা করিতে হইবে।
উদ্বোধনী ভাষণে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব জিল্লুর রহমান বলেন যে, সুখী সুন্দর সমাজ গঠনই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপযুক্ত পন্থা। তিনি বলেন যে, আমরা রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করিয়াছি, কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি আসে নাই। তাই বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তি আনিতে চান।
‘শােষিতের গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তি বিষয়ক আলােচনায় শিক্ষামন্ত্রী ড: মােজাফফল আহমদ চৌধুরী বলেন যে, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ছাড়া রাজনৈতিক নিরাপত্তা অর্থহীন। মুনষের খাদ্য-বস্ত্র আশ্রয়ের মৌলিক চাহিদা পূরণ করিতে হইবে এবং যে ব্যবস্থার মাধ্যমে উহা করা যায়, তাহাই গণতন্ত্র।
তিনি বলেন যে, বাচিয়া থাকার জন্য সকলকে কাজ করিতে হইবে এবং উহাই হইবে গণতন্ত্র। এ ব্যাপারে দেশের কৃষি শিল্পের উন্নয়ন ও শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের উপর তিনি গুরুত্ব আরােপ করেন।
তিনি বলেন যে, যখন সকলের জন্য অন্নবস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা হইবে এবং উহাই শােষিতের গণতন্ত্র। এ জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের একুশের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলােচনায় ড: নীলিমা ইব্রাহীম বলেন যে, ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করিতে না পারিলে স্বাধীনতা রক্ষা করা যাইবে না। কাজেই যে ভাষাকে অবলম্বন করিয়া আমরা স্বাধীনতা অর্জন করিয়াছে তাহা বিশ্লেষণ করা দরকার।
‘জাতীয়তাবাদ ও মুক্তি আন্দোলন’ শীর্ষক আলােচনায় সাংবাদিক মি: রনেশ দাশগুপ্ত বলেন যে, ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে ৪টি রাষ্ট্রিয় আদর্শেও সূত্রপাত হইয়াছিল। গণভাষা হইতে এই গণজাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটিয়াছিল। তাই আজ যেখানে মুক্তি আন্দোলন সেখানে আমরা আছি। ইহা সংকীর্ণ জাতীয়বাদ নহে-সমাজতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদ। তাই সমাজতন্ত্র গড়ার জন্য আমরা হাতে হাত মিলাইতেছি। আলােচনা সভায় ভারত হইতে আগত সাহিত্যিক মি: বিনয় সরকার শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত