‘বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক সমস্যার সমাধান করিতে হইবে
ভাইস-প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে, দেশের বাস্তব অবস্থাকে পর্যালােচনা করিয়া নিজস্ব পারিপার্শ্বিকতার আলােকে সমস্যার সমাধান করিতে হইবে।
তিনি গতকাল (সােমবার) মহিলা সমিতি মিলনায়তনে সমাজকল্যাণ বিভাগের উদ্যোগে আয়ােজিত ৪ দিনব্যাপী দ্বিতীয় জাতীয় সমাজকল্যাণ সেমিনারের উদ্বোধনী দিবসে প্রধান অতিথির ভাষণ দিতেছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্রম, সমাজকল্যাণ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী। পূর্বাহ্নে শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব হাসানুজ্জামান প্রধান অতিথিকে অভ্যর্থনা জানান এবং সমাজকল্যাণ দফতরের পরিচালক জনাব এ, এম, মােজাম্মেল হােসেন তাহার দফতরের কর্মসূচী ও কার্যক্রমের উপর আলােকপাত করিয়া বক্তৃতা করেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট তাঁহার ভাষণে বলেন যে, একটি জাতির সামাজিক কাঠামাে সৃষ্টি বা বিকাশ ঘটে অর্থনৈতিক কারণে। কাজেই সেই অর্থনৈতিক সমস্যাকে বাস্তবতার দৃষ্টিতে না দেখিলে সমাজ বিজ্ঞানীরা সফলতা অর্জন করিতে পারিবেন না। তিনি বলেন যে, একটি গ্রামে সামান্য কিছু কাজ করিয়া তাহা বিজ্ঞাপন দিয়া প্রচার করিলে দেশের সামগ্রিক সমস্যার সমাধান হইবে না। উহার জন্য প্রচেষ্টা হইতে হইবে আন্তরিক এবং পথ হইতে হইবে বিজ্ঞানভিত্তিক।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে, সরকার, এমনকি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সমাজকল্যাণের কাজে সক্রিয় সহযােগিতা করিতে আগ্রহী। কিন্তু উহার জন্য বাস্তব কর্মসূচী গ্রহণ করা প্রয়ােজন। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশ পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশ এবং একথা অস্বীকার করার উপায় নাই যে, দেশে ভূমিহীন চাষী, অসহায় নারী ও শিশু প্রভৃতির সংখ্যা ক্রমাগত বাড়িতেছে। ইহাদের সংখ্যা যাহাতে না বাড়ে তদ্দজন্য যথাযথ প্রচেষ্টা চালানাের আহ্বান জানাইয়া তিনি বলেন যে, সকলকে উৎপাদনশীল কাজে নিয়ােজিত করিতে না পারিলে সমস্যার সমাধান হইবে না।
সমস্যার অর্থনৈতিক কারণের উপর গুরুত্ব আরােপ করিয়া ভাইস-প্রেসিডেন্ট বলেন যে, অর্থনৈতিক বিবর্তনের মধ্য দিয়াই নূতন সমস্যার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকটৈর জন্য বহু সমস্যা দেখা দিয়াছে এবং আমরা উহা সমাধানের চেষ্টা করিতেছি। কিন্তু সমস্যার মূল কারণ অনুসন্ধান না করিয়া জোড়াতালি দিয়া কাজ করা হয়ত সম্ভব, তবে উহাতে সমস্যার সমাধান হইবে না।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে, বাংলাদেশে আমরা যে পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে বাস করিতেছি তাহা সমাজকল্যাণের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করিয়াছে বলিয়া এই বিভাগের গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজ কর্মীদের কার্যকলাপের প্রশংসা করিয়া তিনি বলেন যে, মুক্তিযুদ্ধের ফলে উদ্ভূত বিরাট সামাজিক সমস্যার সমাধানে এই বিভাগের কর্মীরা আগাইয়া আসিয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহাদের সেই দায়িত্ব শেষ হয় নাই। তিনি সমস্যার সমাধান খুঁজিয়া বাহির করা এবং মানবতাবােধে উদ্বুদ্ধ হইয়া জনকল্যাণে আগাইয়া আসার জন্য সমাজকল্যাণ কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
পরে ভাইস-প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ গার্লস গাইড ভবনে আয়ােজিত একটি কুটির ও হস্তশিল্পি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
ইউসুফ আলী
শ্রম, সমাজকল্যাণ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী সভাপতির ভাষণে বলেন যে, রক্তাক্ত বিপ্লবের পর শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপন ও জীবিকার ব্যবস্থা করা আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু উদাসীনতা, অজ্ঞতা ও অহমিকা আমাদিগকে সমাজকর্ম হইতে দূরে সরাইয়া রাখিয়াছে।
তিনি মানুষের চেতনাকে পরিবর্তন করার আহ্বান জানাইয়া বলেন যে, সকলকে নূতন। মানসিকতার উদ্বুদ্ধ করা প্রয়ােজন। তিনি প্রশ্ন করেন যে, বস্তিতুলিয়া দিয়া যেখানে কলকারখানা স্থাপন করিলেই কি সমস্যার সমাধান হইবে। না, ইহা সামাজিক সমস্যাকে আরাে তীব্র করিয়া তুলিবে।
জনাব ইউসুফ আলী সমাজকল্যাণের স্বার্থে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রােধ করা এবং শিক্ষার উন্নতি করার আহ্বান জানান এবং বলেন যে, প্রকৃত জনকল্যাণের কাজে আত্মনিয়ােগের জন্য সমাজকল্যাণ কর্মীদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা থাকিতে হইবে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত