You dont have javascript enabled! Please enable it!

এই প্রতিবন্ধকতা দূর হওয়া বাঞ্ছনীয়

বাংলাদেশ হইতে শিমুল তুলা (ক্যাপক) রফতানী বন্ধ হইবার উপক্রম হইয়াছে। শিমুল তুলা রফতানী করা হইত কেবল ভারতে। অন্য কোন দেশে তুলা রফতানী করা অসুবিধা এই কারণে যে, যেভাবে প্রসেস করিয়া পাকিস্তানী আমলে শিমুল তুলা রফতানী করা সম্ভব হইত এখন আর সেভাবে প্রসেস করা হয় না। কারণ, চট্টগ্রামের সেই কারখানাটি এখন বন্ধ। কাজেই ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশে এই তুলা রফতানীর সহিত ‘স্পেস প্রব্লেম’ জড়িত। এক মণ তুলার জন্য জায়গা লাগে প্রচুর।
বাংলাদেশ ভারত বাণিজ্য চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ হইতে যে সমস্ত পণ্য রফতানী হইত শিমুল তুলাও ছিল ঐগুলির একটি। বাংলাদেশ ভারত প্রথম বাণিজ্য চুক্তি এল পি এ-র অধীনে বাংলাদেশ হইতে যে শিমুল তুলা ভারতে রফতানী করা হইত উহার উপর হইতে আমদানী শুল্কমওকুফ করার ব্যবস্থা ছিল। ঐ চুক্তি শেষ হইবার পর ১৯৭৩ সনের ৫ই জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বি,টি,পি,এ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ৬নং ধারায় লেখা ছিল: “… ইচ গভর্ণমেন্ট স্যাল একর্ড টু দি কমার্স অব দি আদার গভর্ণমেন্ট, ট্রিটমেন্ট নাে লেস ফেডারেবল স্টান আট একর্ডেড টু দি কমার্স অব এনি থার্ত কান্ট্রি।” অর্থাৎ তৃতীয় কোন রাষ্ট্রকে এই দুই পক্ষের কেহ বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যে সুবিধা দিবে, এই দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্যিক লেন-দেনে সেই সুবিধা অপেক্ষা কম দেওয়া হইবে না।
বিটিপিএ চুক্তিতে আমদানী শুল্ক মওকুফের ব্যবস্থা ছিল না। ফলে তুলা আমদানী করিতে অনাগ্রহী হইয়া পড়ে। আমদানীকারকদের এই অনীহার ফলে বাংলাদেশ হইতে যে পরিমাণ শিমুল তুলা রফতানী করার কথা ছিল তাহা হইতে পারে নাই।
পাকিস্তান হইতে শিমুল তুলা ভারতে আমদানী করার ক্ষেত্রে আমদানী শুল্ক মওকুফ করার ব্যবস্থা ঠিকই বলবৎ রহিয়াছে। পাকিস্তানী আমলেও এ ব্যাপারে কোন আমদানী শুল্ক দিতে হইত না। ব্যবসায়িক মহলের মতে বিটিপিএ বাণিজ্য চুক্তির ৬ নং ধারা মােতাবেক ভারত কর্তৃক পাকিস্তানকে দেয় সুবিধা যদি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযােজ্য হইত তাহা হইলে শিমুল তুলা রফতানীর ব্যাপারে বাংলাদেশকে অসুবিধার পড়িতে হইত না কিংবা বৈদেশিক মুদ্রা হারাইবার আশঙ্কা থাকিত না।
১৯৭৪ সনের ৩১শে ডিসেম্বর বিটিপিএ বাণিজ্য চুক্তির মেয়াদ ফুরাইয়াছে। অবশ্য কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে এই মেয়াদ বাড়ান হইয়াছে তবে সেগুলির মধ্যে শিমুল তুলা (ক্যাপক) অন্তর্ভুক্ত হয় নাই।
ব্যবসায়িক মহল মনে করেন, ভারতে বাংলাদশের রফতানীযােগ্য পণ্য সামগ্রীর উপর ভারত পূর্বে যেমন আমদানীশুল্ক আরােপ করে নাই, ভবিষ্যতেও যদি তেমনি নমনীয় পদ্ধতি বজায় রাখে তাহা হইলে বাংলাদেশ ভারত বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব হইতে পারে। অবশ্য এ ব্যাপারে উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক সুযােগ সুবিধার ভিত্তিতে সাধ্যস্থণ নীতি প্রণীত হওয়া উচিত।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!