পুলিশকে হতে হবে সেবক শাসক নয়
বাংলার মানুষ চায় তার যেন শন্তিতে ঘুমাতে পারে: বঙ্গবন্ধু
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুলিশ বাহিনীর প্রতি সততা ও আত্মত্যাগের সঙ্গে জনগণের সেবা করার আহ্বান জানিয়েছেন। পুলিশ বাহিনীর প্রতি এই আহ্বানে তিনি বলেছেন, আজ আপনাদের এমন এক পুলিশ বাহিনী হয়ে গড়ে ওঠার অঙ্গীকার নিতে হবে যে পুলিশ বাহিনী হবে মানুষের সেবক, শাসক নয়।
গতকাল এখানে ঐতিহাসিক রাজারবাগ পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত পুলিশের বার্ষিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভাষণদান কালে বঙ্গবন্ধু এই আহ্বান জানার বলে বাসসর খবরে উল্লেখ করা হয়।
পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেন: ‘একথা ভুললে চলবে না যে তােমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ। তােমরা ইংরেজের পুলিশ নও, তােমরা জনগণের পুলিশ। তােমাদের কর্তব্য জনগণকে সেবা করা, জনগণকে ভালােবাসা, দূর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা। বঙ্গবন্ধু বলেন: “তােমরা ভাড়াটিয়া নও, তােমরা বাংলা মায়ের ছেলে।
বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশের পুলিশ বাহিনীর কাজে জনসাধারণ চায় শান্তিতে ঘুমানাের নিশ্চয়তা। জনগণ আশা করে দুস্কৃতিকারী ও সমাজবিরােধীদের তৎপরতা নির্মূল করা হােক। তিনি বলেন, যারা অন্যায় করবে তাদের নিশ্চই কঠোর হাতে দমন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি সাবধানতা উল্লেখ করেন যে দুষ্টের দমন করতে গিয়ে নিরপরাধ লােকের ওপর যেন অত্যাচার করা না হয়। তিনি বলেন: একটি নিরপরাধ লােকের ওপর যদি অত্যাচার করা হয়, আল্লার আকাশ পর্যন্ত ততে কোপে ওঠে। তিনি বলেন, পুলিশের ভালাে-মন্দ সকল কর্মের জন্যেই শেষ পর্যন্ত তাকেই জবাবদিহি করতে হয়। প্রত্যেকটি কাজের দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত তারই ওপর বর্তায়।
বঙ্গবন্ধু গভীর দুঃখের সাথে বলেন: বাংলাদেশে কয়েক হাজার হাজার লােক না খেয়ে মারা গেছে। দেশের খাদ্যাভাব জনগণের দুঃখ-কষ্ট কিছুই তিনি গােপন করেননি। চেষ্টা করেছেন বিদেশ থেকে খাবার আনতে। পাঁচ হাজার সাত’শর মতাে লঙরখানা খুলে যুদ্ধ করেছেন দুর্ভিক্ষাবস্থার সঙ্গে।
তিনি বলেন, খাদ্য সমস্যার মােকাবিলার জন্যে, জনগণের সুখ ও শান্তির জন্যে উৎপাদন বাড়াতে হবে। ক্ষেতে খামারে, কলে-কারখানায় যে যেখানে আছে উৎপাদন বাড়ানাের জন্যে তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তিনি বলেন, কর্তব্যে বিলাসিতা, বড়াে বড়াে কথা আর রাতের অন্ধকারে চুরি, ডাকাতি,গুন্ডামি-এসব অনেক সহ্য করা হয়েছে, আর না। এ অবস্থা আর সহ্য করা যেতে পারে না। বঙ্গবন্ধু সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলেন: দুশমনরা বসে নেই। তারা চেষ্টা করছে বাংলার স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্যে। বঙ্গবন্ধু প্রত্যয় দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি, প্রয়ােজন হলে রক্ত দিয়েই স্বাধীনতাকে রক্ষা করবাে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ টিকেছে। বাংলাদশে থাকবে এবং আপন অস্তিত্বের সগৌরবে টিকে থাকার জন্যেই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। পৃথিবীর কোনাে শক্তিই একে ধ্বংস করতে পারবে না। আজ আমরা জাতিসংঘের সদস্য। আজ সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়ে। রাজারবাগের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, যতদিন বাংলার স্বাধীনতা থাকবে, বাংলার মানুষ থাকবে, ততদিন রাজারবাগের ইতিহাস লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে পুলিশ বাহিনীর ইতিহাস।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ১৬ জানুয়ারি ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত