সামাজিক অর্থনৈতিক বিপ্লবের জন্য চাই শিক্ষা বিপ্লব: ইউসুফ আলী
শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী বলেছেন যে বাঞ্ছিত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব সূচনার জন্যে প্রয়ােজন একটি শিক্ষা বিপ্লবের। আমাদের সমাজ ও শিক্ষা বিদদের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে এই শিক্ষা বিপ্লবের কর্মসূচী নির্ধারণ করা। রােববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে উচ্চতর শিক্ষা বিষয়ক সেমিনার উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের উদ্যোগে এই সেমিনার আয়ােজিত। চারদিন ধরে চলবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দুশাে ও বিদেশ থেকে নয়জন প্রতিনিধি সেমিনারে যােগদান করেছেন। সেমিনার উপলক্ষে প্রেরিত দুটি বাণীতে রাষ্ট্রপতি জনাব মুহম্মদুল্লাহ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেমিনারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে সাফল্য কামনা করেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন যে ঔপনিবেশিক আমলের সনাতন কাঠামােয় আবর্তিত আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনে শিক্ষাবিদদের ধ্যান ধারণা নতুন পথে এগােতে সাহায্য করবে। উচ্চশিক্ষায় কতিপয় নমুনা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন- আমি বেদনার সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে আমাদের উচ্চশিক্ষার অবস্থা সন্তোষজনক নয়। বরং কোন কোন দিক থেকে বিপজ্জনক। সাধারণ মান নেমে যাচ্ছে। আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রয়ােজনের তুলনায় শিক্ষার বিষয় ও মান খুবই অপ্রতুল। মন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান, কারিগরি জ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, কলা ও মানব বিদ্যার ক্ষেত্রে গবেষণার সুযােগ খুবই সীমিত। এই সীমাবদ্ধতা বহুবিধ ও জটিল। সরকার সমস্যা সমাধানে সাধ্য মতাে সকল কিছু করবে। শিক্ষাবিদরা এসব সমস্যা সমাধানে পন্থা নির্দেশ করবেন বলে তিনি তার বিশ্বাস প্রকাশ করেন। শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলীও তার ভাষণে বলেছেন যে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা সামন্ততান্ত্রিক ও বিদেশী শাসনযন্ত্রের প্রয়ােজনভিত্তিক। একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রয়ােজনে লাগাতে হলে এর বহুবিধ পরিবর্তন প্রয়ােজন। মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুজাফফর আহমদ চৌধুরী অভ্যর্থনা অভিভাষণে বলেন যে সেমিনারের প্রধান উদ্দেশ্য শিক্ষার বিশেষত উচ্চশিক্ষার যেসব সমস্যা আমরা মােকাবিলা করছি সেসব সম্পর্কে আলােচনা, তর্ক ও চিন্তার সূত্রপাত করা। দিন দিন উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশীদের সংখ্যা বাড়ছে। সেমিনারের প্রথম অধিবেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড: আবদুল মতিন চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ক্ষেত্রে সমস্যা নামে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। তিনি বলেন যে, অতিরিক্ত ছাত্র, স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক, ছাত্রদের অস্থিরতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সমস্যাগুলাের অন্যতম। অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের লীডস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্টার জে জে ওয়ালশ, ভারতের জামিয়া মিল্লিয়ার উপাচার্য প্রফেসর মাসুদ হােসেন খান, যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এফ হ্যারিংটন, জিডিআরের হামবােল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব পশয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া স্টাডিজের প্রফেসর ড: উইডেম্যান প্রমুখ প্রবন্ধ পাঠ ও আলােচনায় অংশগ্রহণ করেন।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ১৩ জানুয়ারি ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত