You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.01.10 | বাড়িঘরের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান আজ শুরু | দৈনিক বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

বাড়িঘরের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান আজ শুরু

রাজধানী ঢাকায় অবৈধভাবে পরিত্যক্ত বাড়ি দখলকারীদের উচ্ছেদ অভিযান আজ শুক্রবার শুরু হচ্ছে। এ ব্যাপারে কাউকে কোন অনুকম্পা দেখানাে হবে না। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আহুত এক সাংবাদিক সম্মেলনে পূর্ত ও নগর উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী জনাব সােহরাব হােসেন একথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, গত ৩১ শে ডিসেম্বর সরকারী নির্দেশ জারির পর মাত্র গত কয়েকদিনে পরিত্যক্ত বাড়ির বকেয়া ভাড়া বাবদ প্রায় এক কোটি টাকা আদায় হয়েছে। ইতিপূর্বে সাড়ে তিন হাজার লােককে বাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছিল। মন্ত্রী জানান, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ১১৯ টি বাস্তুহারা বস্তির ২৪ হাজার ৭৫৭ টি পরিবারের মধ্যে ১০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে। সাময়িকভাবে তাদেরকে টঙ্গীর দত্তপাড়া, কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা, শিল্পাঞ্চল ডেমরা ও হাজারিবাগে স্থান করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে একমাত্র দত্তপাড়ার ২ হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এখানে মােট ৮ হাজার পরিবারকে স্থান দেওয়া যাবে। তিনি বলেন, স্থানচ্যুত প্রকৃত ছােট ছােট দোকানদারদের জন্যে সরকার ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় নতুন বিপনী কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছেন। এছাড়া প্রকৃত বাস্তুহারাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা শহর ও শিল্পাঞ্চলের আশেপাশে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পুনর্বাসিত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। তিনি জানান, ঢাকায় পরিত্যক্ত বাড়িঘরের জবর দখলের সংখ্যা সম্পর্কে দু-একদিনের মধ্যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সরকারী কর্মচারী, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের পরিবার, পঙ্গু ও ক্ষতিগ্রস্ত মুক্তিযােদ্ধা, অনুমােদিত শিক্ষা, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে পরিত্যক্ত বাড়িঘর বরাদ্দ করার নীতি সরকার গ্রহণ করেছেন। জনাব সােহরাব হােসেন বলেন, সরকারী কর্মচারীদের জন্যে রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক কলােনীতে স্বল্প ব্যয়ে ১০ হাজার টিনের বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। এর জন্য সাত কোটি টাকা খরচ পড়বে। মন্ত্রী জানান, ঢাকা শহরের ১১৯ টি বাস্তুহারা বস্তিতে ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৯ জন নাগরিক বসবাস করতেন। তাদের সবাই অবশ্য প্রকৃত অর্থে বাস্তুহারা নয়। এদের মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ রিকশাওয়ালা ও ঠেলাগাড়ীওয়ালা, শতকরা ২০ জন অদক্ষ শ্রমিক ও বাকি নাগরিকরা বিভিন্নভাবে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এসব বস্তিতে কিছু সংখ্যক স্বল্প বেতনের সরকারী ও আধা-সরকারী কর্মচারী, স্কুলের শিক্ষকও ছিলেন। অত্যন্ত নােংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রায় বৃটিশ আমল থেকে এসব বস্তি গড়ে উঠেছে। কালক্রমে তা বিভিন্ন অপরাধের আস্তানায় পরিণত হবে। এ কারণেও এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর বস্তি তুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রকৃত বাস্তুহারা ও দায়ে ঠেকে যারা আশ্রয় নিয়েছেন তাদেরকে অন্যত্র স্থানান্তর ও অবৈধ নির্মাণকার্ষে উচ্ছেদ করা হয়েছে। গত চারদিনে প্রকৃত বাস্তুহারাদের বিভিন্ন এলাকায় স্থানান্তরে পরিবহণের জন্য সরকার এক শত ট্রাক দিয়েছেন। বস্তিবাসীদের দুই-তৃতীয়াংশ লােক বিভিন্ন অনুমােদিত স্থানে চলে যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বাকি যারা আছেন তারাও চলে যাবেন বলে আশা করছি।
পূর্তমন্ত্রী জানান, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ অন্যান্য বড় বড় দখলকারী অধিবাসীদের তুলে দেওয়া হবে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ৪ হাজার ৩৪১ টি ঝুপড়ি ঘরে ২৬ হাজার ৩৬ জন লােক বসবাস করেন। খুলনায় এ ধরনের ৫ হাজার ৯১৪ টি ঝুপড়ি ঘর রয়েছে। মন্ত্রী জনাব সােহরাব হােসেন বলেন, লাখ লাখ বাস্তহারা মানুষের জন্যে একটি সুন্দর নতুন জীবন গড়ে তােলার জন্য আমরা স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছি। ছিন্নমূল ও বাস্তহারা, শ্রমজীবী মানুষের পূর্ণবাসনের প্রশ্নটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
এনার খবরে বলা হয়: ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ প্রধান প্রধান শহরে বস্তিতে বসবাসকারী প্রায় আড়াই লাখ বাস্তুহারার যথাযথ পূর্ণবাসনের জন্য সরকার একটি ব্যাপক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় উপায় কাজ করছেন বলে পূর্ত ও গৃহনির্মাণমন্ত্রী জনাব সােহরাব হােসেন জানান।

সূত্র: দৈনিক বাংলা, ১০ জানুয়ারি ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত