You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.01.10 | উৎপাদনমুখী নয়া আমদানী নীতি | দৈনিক বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

উৎপাদনমুখী নয়া আমদানী নীতি

বাণিজ্য ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী খােন্দকার মুশতাক আহমদ চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন। আমদানী মৌসুমের জন্যে তিনশাে কোটি টাকার উৎপাদনমুখী এক নয়া আমদানী নীতি ঘােষণা করেছেন।
গতরাতে বেতার ও টেলিভিশনের জাতীয় অনুষ্ঠানে দেশের নয়া আমদানী নীতি ঘােষণা করে বাণিজ্য ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, জানুয়ারি-জুন বাণিজ্য মৌসুমের জন্যে বৈদেশিক মুদ্রার বরাদ্দ গত মৌসুমের তুলনায় উল্লেখযােগ্য পরিমাণে বাড়ানাে সম্ভব হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আজ আমরা অনেকখানি কাটিয়ে উঠেছি বলে গত মৌসুমে বরাদ্দের পরিমাণ যেখানে ছিল ২২০ কোটি টাকা সেখানে এবারে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। এবারের এই মােট বরাদ্দের মধ্যে শিল্পের কাঁচামাল আর খুচরাে যন্ত্রাংশের জন্যে বরাদ্দ হচ্ছে প্রায় ২৩৪ কোটি টাকা, অর্থাৎ শতকরা ৭৮ ভাগ, এবং বাকি ২১ ভাগ অর্থাৎ ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ভােগ্য পণ্যের জন্যে নয়া আমদানী মৌসুমে শিল্পের কাঁচামাল, খুচরাে যন্ত্রাংশ আর বিভিন্ন ভােগ্যপণ্য। আমদানীর প্রয়ােজন মেটানাের জন্যে বরাদ্দকৃত ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সংস্থানের মধ্যে আমাদের নিজস্ব নগদ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে আসবে ৭২ কোটি টাকা। নয়া আমদানী মৌসুমে আমরা ২১ কোটি টাকা পাবাে পণ্য বিনিময় চুক্তির অধীনে। দ্বিপাক্ষিক সাহায্যা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলাে থেকে ঋণ ও সাহায্য আসবে প্রায় ১৮৯ কোটি টাকা। চলতি বাণিজ্য মৌসুমে প্রবাসী বাঙালীদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানীর মােট পরিমাণ প্রায় ১৮ কোটি টাকা হবে।
বাণিজ্য ও বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী খােন্দকার মুশতাক আহমদ তার বাণিজ্যনীতি ঘােষণায় বলেন নয়া আমদানী নীতিতে আর্নার স্কীমের অধীনে শিল্পের জন্যে কাঁচামাল আমদানী তরান্বিত করতে পাট, বস্ত্র, চিনি, নিউজপ্রিন্ট ও অন্যান্য কাগজ, তেলশােধন, সার, সিগারেট, চামড়া প্রক্রিয়াজতকরণ, জমানাে চিংড়ি, চা ইত্যাদি রফতানীমুখী ও জরুরী শিল্পগুলিকে প্রয়ােজন মতাে কাঁচামাল ও খুচরাে যন্ত্রাংশ আমদানীর লাইসেন্স দেওয়া হবে যেন তাদের উৎপাদন ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করা যায়। এছাড়া আর্নার স্কীমের অধীনে শিল্পের কাঁচামাল আমদানী ত্বরান্বিত করতে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই স্কীমের অধীনে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলােকে প্রদত্ত শুল্কমুক্ত আমদানীর সুবিধা কাঁচামালের বাণিজ্যিক আমদানীকারকদেরকেও দেওয়া হবে। তবে বাণিজ্যিক আমদানীকারকদেরকে প্রদত্ত এই সুবিধে কেবল রং ও রাসায়নিক দ্রব্য, ২০ কাউন্টের নীচে ও ৬০ কাউন্টের ওপরে সুতা, থার্মোপ্লাস্টিক মােল্ডিং কম্পাউন্ড যা পিভিসি, পিগ আয়রনসহ অন্যান্য লােহা এবং ইস্পাতের পাত, শিট প্রভৃতি পণ্যগুলাের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে। খােন্দকার মুশতাক আহমদ বলেন, বর্তমান আমদানী নীতিতে ওষুধ শিল্পের জন্যে ষান্মাসিক আমদানী যােগ্যতার শতকরা ১৫০ ভাগ লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে যাতে আমাদের ওষুধের চাহিদা যথাসম্ভব দেশের উৎপাদন দ্বারাই মেটানাে সম্ভব হয়।
নয়া আমদানী নীতিতে উচ্চমানের কৃত্রিম তন্তুজাত বস্ত্রের আমদানী শুল্ক শতকরা ১০০ থেকে ২০০ তে বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আমদানীকারকদের সুবিধের প্রতি লক্ষ্য রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যে বর্ধিত হারের শুল্ক যে সমস্ত কাপড় এই ঘােষণার পর শিপমেন্ট করা হবে সে গুলাের ওপরেই প্রযােজ্য হবে। যেহেতু সুতী কাপড়ের ওপর বর্ধিত হারে শুল্ক প্রযােজ্য হবে না সেজন্যে মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর সাধারণ মানুষের ওপর এর কোনাে প্রতি ক্রিয়া হবার সম্ভাবনা নেই। প্রধান প্রধান নিত্য প্রয়ােজনীয় ভােগ্য পণ্য আমদানীর জন্যে আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে লাইসেন্স দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে তেলবীজ, কয়লা, সিমেন্ট,…, টিন ইত্যাদি। দুগ্ধজাত খাদ্য, নারকেল তেল, টায়ার-টিউব এবং মােটর পার্টস এ চারটি দ্রব্যের ক্ষেত্রে অনুমােদিত আমদানীকারকরা আর্নার স্কীমের অধীনে আমদানী করলে তাদেরকে সমমূল্যের ক্যাশ লাইসেন্স দেওয়া হবে। ফলে এসব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ সুনিশ্চিত হবে।
উল্লিখিত পণ্য এবং আর্নার স্কীমের অন্তর্ভুক্ত পণ্য ছাড়া অন্যান্য ভােগ্যপণ্যের জন্যেও নিজস্ব বৈদেশিক মুদ্রায় লাইসেন্স দেওয়া হবে এবং এ ব্যবস্থায় মােট ১৭ টি পণ্য রয়েছে। এই স্কীমের অধীনে শিল্পের কাঁচামাল আমদানী ত্বরান্বিত করার জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলােকে প্রদত্ত শুল্কমুক্ত (ডিউটি ফ্রি) আমদানীর সুবিধা এইসব কাঁচামালের বাণিজ্যিক আমদানীকারকদেরকেও দেওয়া হবে। তবে বাণিজ্যিক আমদানীকারকদেরকে প্রদত্ত এই সুবিধা নিম্নলিখিত পণ্যগুলােতে সীমাবদ্ধ:
(ক) রং ও রসায়ন দ্রব্য,
(খ) ২০ কাউন্টের নীচে ও ৬০ কাউন্টের উপরে সুতা,
(গ) থার্মোপ্লাস্টিক মােল্ডিং কম্পাউন্ড বা পিডিসি, (
ঘ) শিল্প আয়রনসহ অন্যান্য লােহা এবং ইস্পাতের পাত, শিট ইত্যাদি।
এই স্কীমের অধীনে গত ছয় মাসে যে সমস্ত আমদানী অনুমতি পত্র দেওয়া হয়েছে, সেগুলাে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে এই স্কীমে কয়েকটা বিশেষ পণ্য আমদানী করার লক্ষণ বিদ্যমান। বিশেষ করে বলা যায়, বহুল পরিমাণে কৃত্রিম আশের (Polyster) তৈরি কাপড় আমদানী করা হয়েছে। পুরাে মৌসুমে এই স্কীমে মােট আমদানীর শতকরা প্রায় ৪২ ভাগ কেবলমাত্র কাপড় আমদানীতেই সীমিত। যদি কাপড় আমদানীর এ-গতি অব্যাহত থাকে তাহলে অধিক পরিমাণে বস্ত্র আমদানীর ফলে এ-স্কীমের অধীনে অন্যান্য জরুরী পণ্যের আমদানী ব্যাহত হবে। আমাদের নিজস্ব কাপড় কলগুলােও উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। উপরন্ত জাপান সরকার প্রদত্ত মঞ্জুরীর অধীনে ৪ কোটি টাকা মূল্যের কৃত্রিম সুতার কাপড় এপ্রিল মাসের মধ্যেই দেশে এসে পৌছুবে। এ অবস্থায় উচ্চ মানের বস্ত্ৰজাত বস্ত্রের আমদানী শুল্ক শতকরা ১০০ থেকে ২০তে বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আমদানীকারকদের সুবিধার প্রতি লক্ষ রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে বর্ধিত হারের শুল্ক যে সমস্ত কাপড় এই ঘােষণার পর চালান (শিপমেন্ট) করা হবে, সেগুলাের উপরেই সিদ্ধান্ত হবে। যেহেতু সুতী বস্ত্রের উপর বর্ধিত হারে শুল্ক প্রযােজ্য হয়েছে, সে জন্য মধ্য ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর সাধারণ মানুষের উপর এর কোন প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আমি বলেছি যে গত বাণিজ্য মৌসুমের তুলনায় এবারের আমদানীর জন্য বৈদেশিক মুদ্রা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রয়ােজনের তুলনায় এই অর্থ সংস্থানও যথেষ্ট নয়। সে জন্যে আমদানী পণ্যগুলােকে প্রয়ােজনের গুরুত্ব অনুসারে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেগুলাে বেশি প্রয়ােজনীয় সেগুলাের আমদানীর জন্য আমাদের নিজস্ব মুদ্রণ থেকে লাইসেন্স দেওয়া হবে । অন্যান্য অপেক্ষাকৃত কম প্রয়ােজনীয় পণ্যগুলাে আমদানীর জন্য পণ্যের স্বীকৃত আওতায় আনা হয়েছে। এভাবে যে বৈদেশিক মুদ্রা কিছুটা বাড়বে তা দিয়ে দেশী প্রয়ােজনীয় পণ্যাদির আমদানী বাড়ানাে হবে। ঐ পণ্যগুলির তালিকা পর্যায়ক্রমে গণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশিত হবে। | দুগ্ধজাত খাদ্য, নারিকেল তেল, টায়ার, টিউব এবং মােটর যানের খুচরাে যন্ত্রাংশ-এ কয়টি জরুরী পণ্য বর্তমানে একান্ত প্রয়ােজন। ন্যায় সঙ্গত মূল্যে এগুলাের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে নিম্ন লিখিত ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়েছে:
(ক) দুগ্ধজাত খাদ্য, নারিকেল তেল, টায়ার-টিউব এবং মােটর যানের খুচরা যন্ত্রাংশ এ-৪টি দ্রব্যের ক্ষেত্রে ঐ সমস্ত দ্রব্যের অনুমােদিত আমদানীকারীরা যদি আর্নার স্কীমে আমদানী করে, তবে তাদেরকে সমমূল্যের ক্যাশ লাইসেন্স দেওয়া হবে। এ ব্যবস্থার অধীনে যথােপযুক্ত প্রমাণসাপেক্ষে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় হবে। তবে আপাদত প্রত্যেক আমদানীকারকের ক্যাশ লাইসেন্সের উর্ধ্বতন সীমা দশ হাজার টাকাতে নির্ধারিত থাকবে, যদিও তাদের আর্নার স্কীমে এসব দ্রব্যে আমদানীর কোন উর্ধ্ব সীমা সাধারণ ভাবে নির্দিষ্ট থাকবে না।
(খ) টিসিবি কতৃক আংশিকভাবে আমদানীকৃত পণ্য ছাড়া বাকী আমদানীকারকদের বেলায় এ ৪টি দ্রব্য বিতরণ এবং মূল্য নিরুপণ ইত্যাদি সকল প্রকার সরকারী নিয়ন্ত্রণের আওতা থেকে সম্পূর্ণ দূরত্ব থাকবে।
আর্নার স্কীম সম্বন্ধে আরও দু একটি কথা বলা প্রাসঙ্গিক বলে আমি মনে করি। এ স্কীমের অধীনে মােটা বিলাস দ্রব্য আমদানী হয় বলে অভিযােগ এসেছে। এসমস্ত অবিযােগ প্রকৃত তথ্য ভিত্তিক নয়। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় যে টয়লেট সামগ্রীকে প্রসাধনী দ্রব্য মনে করে বিলাসিতার উপকরণ বলে ধরা হয়। আসলে টয়লেট সামগ্রীর মধ্যে টুথ ব্রাস ও পেস্ট, শেভিং ব্যুশ ইত্যাদি। নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদিও আমদানী হয়ে থাকে। এ ছাড়া এ স্কীমে মােট আমদানীর তুলনায় এসব দ্রব্য আমদানীর পরিমাণ খুবই নগণ্য। গত ছয় মাসে টয়লেট দ্রব্য আমদানীর পরিমাণ মােট আমদানীর শূন্যদশমিক আট শতাংশ বা একশত ভাগের এক ভাগেরও কম।
অর্নার স্কীমের ‘আমদানীর ব্যবস্থা দেশের জন্য যে দ্রুত ফলপ্রসূ হয়েছে তার প্রমাণস্বরুপ এ। স্কীমের আওতায় লবণ আমদানীর কথাও বলা যায়। ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখে লবণ আমদানীর অনুমতি ঘােষণা করা হয়। ঐ মাসের বাকী মাত্র ২২ দিনের লবণ আমদানীর জন্য ৮ লাখ টাকার পারমিট দেওয়া হয়, ফলে লবণের বাজারে কিছুটা প্রভাব লক্ষিত হয়েছে। অন্যান্য প্রয়ােজনীয় পণ্যের জন্য এ স্কীমের অধীনে গত ৬ মাসে প্রায় ২ কোটি টাকার শিল্পের কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশের জন্য পারমিট দেওয়া হয়েছে। পুরানাে গরম কাপড়ের জন্য প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার পারমিট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য নিত্য প্রয়ােজনীয় পন্য এবং ড্যাইসেল ব্যাটারীর জন্য প্রদত্ত পারমিটের পরিমাণ যথাক্রমে একত্রিশ লাখ, তেত্রিশ লাখ, উনত্রিশ লাখ এবং তেপান্ন। লাখ টাকা। কোন কোন মহল থেকে আর্নার স্কীমের অধীনে অনুমােদিত কনভার্টিবল ব্যাংক। একাউন্ট সম্বন্ধে কিছু কিছু অপব্যবহারের আশংকা করা হয়েছে। এ স্কীমের অধীনে আমদানীকারকদের আয়কর ফাঁকি দেওয়ার সুযােগ আছে বলেও কেউ কেউ ইঙ্গিত করেছেন। কনভার্টিবল একাউন্টের অপব্যবহারের নিবর্তন করার ব্যবস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত নিয়মাবলীতে যথেষ্ট রয়েছে। আয়কর ফাঁকির ব্যাপারেও আয়কর আইনে উপযুক্ত ব্যবস্থা রয়েছে। তবে একথা মনে রাখতে হবে যে, মানুষের তৈরি কোন ব্যবস্থাই লুটিহীন বা পারফেক্ট হয় না। এ স্কীমের কেবল নেতিবাচক সমালােচনা করা মানে দেশী-বিদেশী পুঁজিবাদী ও একচেটিয়া ব্যবসায়ীদের স্বার্থের অনুকূলে প্রচ্ছন্নভাবে সহায়ক হওয়া।
এই স্কীমে অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের আমদানীকারকদের কোন কোন স্থানে স্থানীয়ভাবে অযথা হয়রানি করার কিছু নালিশ এসেছে। এ সম্পর্কে সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশ সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশাকরি এ ধরনের অভিযােগের কারণ আর ঘটবে না। প্রধান প্রধান নিত্য প্রয়ােজনীয় ভােগ্যপণ্য খুচরা আমদানীর জন্য আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে লাইসেন্স দেওয়ার কথা আগেই উল্লেখ করেছি। আমাদের সীমিত সম্পদের মধ্যে এ সব পণ্যের জন্য পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তৈলবীজ, কয়লা, সিমেন্ট, ঢেউ টিন ইত্যাদি। তৈলবীজের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৯ কোটি টাকার উপর। কয়লার জন্য নগদ মুদ্রার প্রায় ১১ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সিমেন্টের জন্য রাখা হয়েছে ৮ কোটি টাকা। ঢেউ টিনের জন্য অনুমােদিত হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা। ওষুধ শিল্পের জন্য যথেষ্ট কাঁচামাল আমদানীর ব্যবস্থা সত্ত্বেও কিছু বিদেশী ওষুধ আমদানী করা অপরিহার্য। সে জন্য ওষুধ আমদানীর উদ্দেশ্যে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উল্লেখিত পণ্য এবং আর্নার স্কীমের অন্তর্ভুক্ত পণ্যগুলাে ছাড়া অন্যান্য ভােগ্য পণ্যের জন্যেও আমাদের নিজস্ব বৈদেশিক মুদ্রার লাইসেন্স দেওয়া হবে। এ ব্যবস্থায় মােট ৩৭ টি পণ্য রয়েছে। এ গুলাের বিস্তারিত তালিকা প্রধান আমদানী নিয়ন্ত্রক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পৃথকভাবে ঘােষণা করবেন।
রফতানি বৃদ্ধির জন্য এ যাবৎ যে সমস্ত আমদানীর সুযােগ সুবিধা রফতানিকারকদের দেওয়া হয়েছে, বর্তমান আমদানী নীতিতে সে সমস্ত অব্যাহত থাকবে। আমরা গত মরশুমে যে সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছিলাম তা দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে আল্লাহর মেহেরবাণীতে কাটিয়ে উঠেছি। সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও এবারকার আমদানী নীতি গত মরশুমের ঘাটতি পূরণ করে বাজারে পণ্য দ্রব্যের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে, ফলে দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা ত্বরান্বিত হবে। ইতিমধ্যেই হয়তাে আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে বাজারে কয়েকটি নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ এখন মােটামুটি সন্তোষজনক। অন্যান্য কোন কোন দ্রব্যের যে ঘাটতি বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, নতুন আমদানী নীতি তা নিরসনে সহায়ক হবে বলে আমি আশা রাখি। আমাদের যে দুঃখ কষ্ট হয়েছে তা আমরা সকলেই ভােগ করেছি। এই মরশুমে বর্তমান নীতির সফলতা আপনাদের সহযােগিতায় আমরা সকলে সমান ভাবে ভােগ করবাে। এই আশা রেখে এবং আপনাদের সক্রিয় সহযােগিতা কামনা করে আমার বক্তব্য শেষ করছি।

সূত্র: দৈনিক বাংলা, ১০ জানুয়ারি ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত