বঙ্গবন্ধুর আহ্বান: নতুন সংগ্রামে জনগণের সর্বাত্মক সহযােগিতা কামনা
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমাজবিরােধী ও দুষ্কৃতিকারীদের ওপর চরম আঘাত হানার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশবাসীকে তিনি ডাক দিয়েছেন দেশ গড়ার নতুন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে।
দুদিনের সফরে আজ ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লা যাওয়ার সময় তাঁকে একটিবার দেখার জন্যে পথের দু’ধারে সারাদিন ধরে অপেক্ষমান ব্যাকুল জনতার মধ্যে দু-চার মিনিট করে কথা বলার সময় এবং দাউদকান্দি ও মাদাইয়ার বিপুল জনসমুদ্রে ভাষণদান কালে বঙ্গবন্ধু এই উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশবাসীকে ডাক দিয়ে তিনি বলেন: মুষ্টিমেয় যেসব সমাজবিরােধী দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, যেসব দুষ্কৃতিকারী জনজীবনে ত্রাস ও আতংকের সৃষ্টি করছে, যারা জনসাধারণের জীবনে এসেছে অপরিসীম দুঃখ-দুর্দশা তাদের বিরুদ্ধে আপনারা চরমতম আঘাত হানুন এবং এই পূণ্যভূমি বাংলাদেশের মাটি থেকে তাদের সম্পূর্ণরূপে উৎখাত করুন।
হর্ষোৎফুল্ল জনতার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি আজ এক নতুন সংগ্রামে নেমেছেন, শুরু করেছেন নতুন জেহাদ। তিনি এ সংগ্রাম, এ অভিযানে নেমেছেন স্বাধীন সার্বভৌম স্বদেশ ভূমিকে নতুন করে গড়ে তােলার জন্যে নতুন করে এই জেহাদের ডাক দিয়েছেন আমাদের স্বপ্ন, আমাদের আকাক্ষা ও লক্ষ্যের সেই সুখী সমৃদ্ধ সােনার বাংলা গড়ে তােলার জন্যে। এ সংগ্রামে সর্বাত্মক অংশগ্রহণের জন্যে দেশের প্রতিটি মানুষের পূর্ণ সহযােগিতা তিনি কামনা করেন। জাতীয় অর্থনীতির পুনর্গঠন উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির জন্যে জনগণের সর্বাত্মক সহযােগিতাই তিনি একান্তভাবে কামনা করেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন-বাংলার মাটি থেকে সমাজবিরােধী ও দুষ্কৃতিকারীদের সকল তৎপরতার চিরতরে অবসান ঘটানাের জন্যে, দেশ থেকে মজুতদার, কালােবাজারী, চোরাচালানকারী আর মুনাফাখােরদের জনস্বার্থ বিরােধী সকল কার্যকলাপ চিরতরে বন্ধ করার জন্যে এবং রাতের অন্ধকারে যারা নরহত্যা করে তাদের নির্মূল করার জন্যেই তিনি বর্তমানে নতুন এক জেহাদ বা দ্বিতীয়বারের জন্যে চূড়ান্ত সংগ্রামের ডাক দিয়েছেন।
এ বঙ্গবন্ধু বলেন: আপনাদের প্রতি এ আমার উদাত্ত আহ্বান রইলাে। আমার হুকুম রইলাে-সমাজবিরােধী ও দুষ্কৃতকারীদের নির্মূলের এই অভিযানে আপনারা সর্বাত্মকভাবে অংশগ্রহণ করুন। আমাদের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সেই অগ্নি ঝরা দিনগগুলিতে যে অটুট মনােবল সংকল্প ও চেতনা নিয়ে বঙালীরা লড়াই করেছিল সুসংগঠিত ও আধুনিক একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে। সেই একই মনােবল, সংকল্প আর জাতীয় আর জাতীয় চেতনা নিয়ে আজ সমাজবিরােধী ও দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে চরম আঘাত হানার জন্যে বঙ্গবন্ধু আহ্বান জানান। তিনি দৃঢ় আস্থার সঙ্গে বলেন-যে বাঙালীরা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আধুনিক রণকৌশলে কুশলী একটি দুর্ধর্ষ শত্রুবাহিনীকে পরাজিত করেছে তারা মুষ্টিমেয় সমাজবিরােধী ও দুস্কৃতিকারীদের ও অবশ্যই নিশ্চিহ্ন করতে পারবে।
বাসস পরিবেশিত খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ভাষণে বলেন, যুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসস্তুপ থেকে একেটি দেশকে গড়ে তােলা খুব সহজ নয়। দেশের প্রতিটি মানুষ যদি পূর্ণ আত্মত্তত্যাগ ও অটুট সংকল্প নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেন তবেই দেশ দ্রুত পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে যেতে পারে। তিনি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশ গড়ে তােলার জন্যে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, জনগণের বিভিন্ন সমস্যা ও দুঃখ-কষ্ট সম্পর্কে তিনি পূর্ণ সচেতন। বঙ্গবন্ধু দৃঢ়প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, সংকটের এ দুঃসময়ের অবসান ঘটবেই। দেশের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের দ্বারা এ দুঃসময় আমরা কাটিয়ে উঠবােই। তিনি বলেন, ক্ষেতে-খামারে, কলেকারখানায় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব মনসুর আলী, বাণিজ্য ও বৈদেশী বাণিজ্য দফতরের মন্ত্রী খােন্দকার মুশতাক আহমদ এবং তথ্য ও বেতার প্রতিমন্ত্রী জনাব তাহের উদ্দিন ঠাকুর। বঙ্গবন্ধু আজ সন্ধ্যার কিছু পরে কুমিল্লায় পৌছে গেছেন! দাউদকান্দিতে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানানাের জন্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক জনাব খােরশেদ আলম, জনাব কাজী জহিরু কাইয়ুম, জনাব ওয়ালী আহমদ, প্রিন্সিপাল জনাব আবুল কালাম, জনাব মুজাফফর আলী ও আলহাজ আলাউদ্দীন আহমদ প্রমুখ পরিষদ সদস্যবর্গ।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ১১ জানুয়ারি ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত