তেল অনুসন্ধানঃ ভূকম্পন জরিপের এক-তৃতীয়াংশ কাজ সমাপ্ত
বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকায় তেলকূপ খননের কাজ শুরুর জন্য এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ভূ-কম্পন জরিপ কাজ গত এক মাসে সমাপ্ত হয়েছে। বাসস গতকাল ঢাকায় একথা জানতে পারে।
গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ সরকারের সাথে উৎপাদন অংশীদারীত্ব চুক্তি স্বাক্ষরকারী ৬টি আন্তর্জাতিক কোম্পানীর মধ্যে দুটি কোম্পানী ইতিমধ্যেই আনুমনিক ৯ হাজার বর্গমাইলেরও বেশি এলাকার ভূ-কম্পন জরিপ কাজ সমাপ্ত করেছে।
এ দুটো কোম্পানী হলাে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিয়ন অয়েল কোম্পানী এবং যুগােস্লাভিয়ার ইনা-নাফতাপ্লিন। এ দুটো কোম্পানী গত ৮ই ডিসেম্ববর ভূ-কম্পন জরিপ কাজ শুরু করে প্রায় তিন সপ্তাহ কালের মধ্যে তা সমাপ্ত করে।
বাংলাদেশে তেল অনুসন্ধান, সংগ্রহ, সরবরাহ ও বন্টনের দায়িত্বে নিযুক্ত নবগঠিত স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা পেট্রোবাংলার কর্মচারীরা ভূ-কম্পন জরিপ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। | প্রায় ৩০ হাজার বর্গমাইল এলাকাব্যাপী সমগ্র উপকূলীয় এলাকার ভূ-কম্পন জরিপ কাজ চলতি বছর মার্চ নাগাদ সমাপ্ত হবে। ইউনিয়ন অয়েল কোম্পানী ও ইনা-নাফতাপ্লিন সংগৃহীত তথ্যাবলী সুষ্ঠু ভিত্তিতে সাজানাের জন্য তাদের ভূ-কম্পন জরিপের টেপসমুহ যথাক্রমে সিঙ্গাপুর ও জাগ্রেবে প্রেরণ করেছে। সংগৃহীত এ সব তথ্যাবলীর ওপর ভিত্তি করেই কোম্পানীগুলাে বর্ষাকালের শেষ নাগাদ তৈল কূপ খনন কাজ শুরু করবে। উল্লেখ্য যে তৈলকুপ খননের কাজ সম্পূর্ণ ভাবে ভূ-কম্পন জরিপের ফলাফলের উপরই নির্ভর করছে। প্রকৃতপক্ষে তৈল অনুসন্ধানের ব্যাপারে এটাই মূল কাজ। অপর তিনটি কোম্পানী মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টিক রিচাফল্ড, কানাডার কানাডিয়ান সুপিরিয়র ও জাপানের জাপান পেট্রোলিয়াম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন নতুন বছরের আগমন সুচনা থেকেই তাদের ভূ-কম্পন জরিপ কাজ শুরু করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আশল্যান্ড অয়েল কোম্পানীও শীগগীরই ভূ-কম্পন জরিপ কাজ শুরু করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। | চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের সন্নিকটবর্তী প্রায় ৪ হাজার বর্গমাইল এলাকাব্যাপী সপ্তম এলাকাটি বরাদ্দের ব্যাপারে এখনও আলাপ-আলােচনা এগিয়ে চলেছে বলে জানা গেছে।
এ এলাকা সিঙ্গাপুরের রুবিনা অয়েলের জন্য নির্ধারিত থাকলেও উক্ত কোম্পানী সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরে এগিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়। রুবিনা অয়েলের সাবেক স্থানীয় সহযােগী পুব পেট্রোলিয়াম সরকারের নিকট তাদের নয়া বিদেশী সহযােগীর নাম পেশ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এবং এ ব্যাপারে শিগগীরই সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সরকারের সাথে তেল অনুসন্ধান চুক্তি স্বাক্ষরকারী ৬ টি তেল কোম্পানীই বাংলাদেশে তাদের স্ব স্ব অফিস স্থাপন করেছে। চুক্তির শর্ত মােতাবেক কাজের বিস্তারিত তফসিলসহ এসব কোম্পানী, ১৯৭৫ সালের পেট্রোবাংলার নিকট তাদের বাজেটও পেশ করেছে।
এসব কোম্পানী কর্তৃক তেল উত্তোলনের কারিগরি বিষয়ে বাঙালী নাগরিকদের ট্রেনিং দেওয়ার জন্য সাড়ে চার লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ের বিষয়ও বাজেটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইউনিয়ন অয়েল কোম্পানী ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে একজন ভূতত্ববিদকেক সিঙ্গাপুরে ট্রেনিং দেওয়ার জন্য মনােনীত করেছে।
২১ বছর মেয়াদী চুক্তিতে প্রতি কোম্পানী প্রথম চার বছর সময়কালে প্রায় ২ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়ােগ করতে বাধ্য। প্রতি বছর বাঙালী নাগরিকদের ট্রেনিং ব্যয়ও (ফেরত অযােগ্য) এর অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক কাঠামাের তেল প্রাপ্তির যে পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে অদূর ভবিষ্যতেই এ নতুন জাতির চেহারা পাল্টে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।
গতকাল এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় তেল অনুসন্ধান কাজের জন্য গত বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে সরকারের সাথে উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ৬ টি বিদেশী কোম্পানীর মধ্যে দুটি কোম্পানী ইউনিয়ন অয়েল কোম্পানী এবং ইনানাফ-তাপ্লিন গভীর সমুদ্রে তাদের ভূ-কম্পন জরিপ কাজ যথাক্রমে গত ২৬ ও ৩১ ডিসেম্বর শেষ করেছে। কোম্পানী দুটো গত ৮ ই ডিসেম্বর তাদের জরিপ কাজ শুরু করেছিল।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ৭ জানুয়ারি ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত