বিবরণ
১৯৭৫ সালের জরুরী ক্ষমতা বিধিসমূহ ঘােষণা করে শুক্রবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক (আইন বিভাগ) কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির বিবরণ:
১৯৭৪ সালের জরুরী ক্ষমতা অর্ডিন্যান্সের (১৯৭৪ সালের ২৭ নং) ২ নং ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে নিমােক্ত বিধিসমূহ প্রণয়ন করেছেন, যথা:
১৯৭৫ সালের জরুরী ক্ষমতা বিধিসমূহ:
১. সংক্ষিপ্ত শিরােনাম- এসব বিধিকে ১৯৭৫ সালের জরুরী ক্ষমতা বিধি বলা যেতে পারে। ২. সংজ্ঞা-এসব বিধিতে, বিষয় বা প্রসঙ্গে বিরােধী কোন কিছু না থাকলে-(ক) কোড’ বলতে ১৮৯৮ সালের (১৮৯৮-এর ৫) ফৌজদারী দন্ডবিধি বুঝাবে; (খ) অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বলতে ১৯৫৬ সালের (১৯৫৬ সালের ১) অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বর্ণিত ‘আত্যাবশ্যকীয় পণ্য বুঝাবে; (গ) ‘বিজ্ঞপিত’ বা ‘বিজ্ঞপ্তি’ বলতে সরকারী গেজেটে যথাক্রমে বিজ্ঞপিত এ বিজ্ঞপ্তি বলতে … সদস্য বা কোন সরকারী চাকুরেকে তার দয়িত্ব পালন না করতে প্রবৃত্ত করতে পারে অথবা তার সম্ভাবনা রয়েছে;
(৭) বাংলাদেশে আইনের স্থায়ী প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রতি ঘৃণা অবমাননা সৃষ্টি করতে কিংবা তার প্রতি অসন্তোষ ঘটানাের উস্কানি দিতে পারে অথবা তার সম্ভাবনা রয়েছে;
(৮) বিভিন্ন সম্প্রদায়, শ্রেণী কিংবা জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে শত্রুতা বা ঘৃণাবােধ জাগতে করতে পারে বা তার সম্ভাবনা রয়েছে।
(৯) জনসাধারণ কিংবা জনসাধারণের যে কোন অংশের ভীতি আশংকার কারণ ঘটাতে পারে অথবা তার সম্ভাবনা রয়েছে;
(১০) পরিবহন যান কিংবা লােকোমােশন কিংবা যে-কোন অত্যবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ ও বন্টনে বাধা দিতে, বিলম্বিত করতে অথবা আটকে রাখতে পারে বা তার সম্ভাবনা রয়েছে;
(১১) সমাজ জীবনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সরবরাহ ও সার্ভিস বজায় রাখার ব্যাপারে হানিকর হতে পারে বা তার সম্ভাবনা রয়েছে।
(১২) রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কিংবা আর্থিক স্বার্থের হানিকর হতে পারে অথবা তার সম্ভাবনা রয়েছে;
(১৩) প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠনে নিয়ােজিত ব্যক্তিদের কাজ বন্ধ করা অথবা বন্ধ করার প্ররােচনা অথবা উস্কানী দান। অবশ্য ১৯৬৯ সালের শিল্প সম্পর্কে অর্ডিন্যান্স (১৯৬৯-এর ২৩ নভেম্বর)-এর বিধান মতে কোন শিল্প বিরােধ নিস্পত্তির সাথে সম্পর্কিত কাজ হলে-যার সাথে এ ধরণের সংস্থার লােকেরা প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট -এটা প্রযােজ্য নয়।
(১৪) জাতীয় আমানত অথবা যে কোন সরকারী ঋণ বা সিকিউরিটি অথবা বাংলাদেশে বৈধ মুদ্রা-এমন যে কোন নােট, কাচা পয়সা বা টোকেন সম্পর্কে জনগণের আস্থা নষ্ট করতে পারে অথবা তার সম্ভাবনা রয়েছে কিংবা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জীবনধারা রক্ষার উদ্দেশ্যে সরকারের গৃহীত যেকোন আর্থিক বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা পদক্ষেপের সাফল্যের ক্ষতি হতে পারে বা তার সম্ভাবনা রয়েছে।
(১৫) যেকোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে সাধারণভাবে জনগণকে সরকার কিম্বা যেকোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে প্রদেয় যে কোন ভূমিরাজস্ব, কর, রেট, সেচ বা অন্যান্য পাওনা বা অর্থ পরিশােধে অস্বীকৃতি জানাতে অথবা তা বিলম্বে পরিশােধ করতে উৎসাহ বা উস্কানী যােগাতে পারে অথবা তার সম্ভাবনা রয়েছে।
(১৬) সাধারণ ভাবে সরকারী কর্মচারীদের যেকোন শ্রেণীর সরকারী কর্মচারীর অথবা যেকোন একক সরকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক শাস্তি প্রয়ােগে প্রত্যক্ষ অথবা পরােক্ষভাবে উস্কানী যােগাতে পারে অথবা তার সম্ভাবনা রয়েছে। …
৫। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চলাফেরার ওপর বিধিনিষেধ আরােপ। বিধিনিষেধ আদেশসমুহও আটকাদেশসমূহঃ
(১) সরকার মনে করে নিরাপত্তার পক্ষে হানিকর তৎপরতা থেকে নিবৃত্ত করার জন্যে জননিরাপত্তা অথবা বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে হানিকর তৎপরতা থেকে নিবৃত্ত করার জন্যে, কোন বিদেশী শক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের পক্ষে ক্ষতিকর তৎপরতা থেকে নিবৃত্ত করার জন্যে, জনশৃংখলা রক্ষার জন্যে, বাংলাদেশের যেকোন অংশে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখার জন্যে অথবা জনজীবনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্যে অপরিহার্য সরবরাহ ও সার্ভিস বজায়ে রাখার জন্যে এটি প্রয়ােজন, বা এরূপ আদেশ জারী করা যেতে পারে?
(ক) উক্ত ব্যক্তিকে আটক করা হােক।
(খ) উক্ত ব্যক্তিকে আদেশনামার উল্লেখিত আদেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাবে নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্দিষ্ট | পথে বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে যাবার আদেশ এবং বাংলাদেশে তার প্রত্যাবর্তন নিষেধ করা যেতে পারে।
(গ) আদেশে উল্লেখিত শর্তাবলী ও বিধিনিষেধ সাপেক্ষে অথবা আদেশে উল্লেখিত যে কোনাে কর্তৃপক্ষের কিংবা ব্যক্তির নির্দেশ অনুযায়ী উক্ত ব্যক্তি কোনাে নির্দষ্ট এলাকায় থাকতে পারবে বলে আদেশ দেওয়া যেতে পারে।
(ঘ) তাকে নির্দিষ্ট স্থানে থাকার অথবা রাখার অথবা আদেশে উল্লেখিত নির্দেশ অনুযায়ী বাংলাদেশের নির্দিষ্ট এলাকায় রাখার অথবা আদেশে উল্লেখ আনুযায়ী কোনাে নির্দিষ্ট স্থানে, এলাকায় ও নির্দিষ্ট সময়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে।
(ঙ) কে তার চলাফেরা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ দানের জন্য আদেশ দেওয়া যেতে পারে
অথবা তাকে তার চলাফেরা ও নিজে ব্যক্তিগত ভাবে আদেশে উল্লিখিত ভাবে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তির কাছে গিয়ে রিপাের্ট করার আদেশ দেওয়া যেতে পারে।
(চ) আদেশে উল্লিখিত নির্দেশ অনুযায়ী অপর ব্যক্তিদের সঙ্গে তার মেলামেশা ও যােগাযােগের ব্যাপারে এবং খবর রটানাে অথবা মতামত প্রচারে তার ওপর বিধিনিষেধ আরােপের আদেশ | দেওয়া যেতে পারে।
(ছ) অথবা আদেশে উল্লিখিত নির্দেশ অনুযায়ী তার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা েেত পারে: অবাধ্য বাংলাদেশের কোনাে নাগরিকের ক্ষেত্রে (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনাে আদেশ দেওয়া হবে না।
(২) উপবিধি অনুযায়ী কোনাে আদেশে (১) উক্ত ব্যক্তিকে মুচলেকা দিতে হতে পারে। আদেশে উল্লিখিত নির্দেশ অনুযায়ী তার ওপর আরােপিত বিধিনিষেধ ও শর্ত মেনে চলার ব্যাপারে।
এবং মুচলেকা দিতে হতে পারে জামিনসহ অথবা জামিন ছাড়া।
(৩) এই বিধি অনুযায়ী কোনাে আদেশ লংঘন করে কোনাে ব্যক্তি যদি কোনাে স্থানে বা এলাকায়
অবস্থান করে অথবা কোনাে স্থান ও এলাকা হলে তাকে ৭ বছর পর্যন্ত … কারাদন্ড দেওয়া
হতে পারে এবং তাকে জরিমানাও করা যেতে পারে।
(৬) উপবিধি (১) (ক) অনুযায়ী কোনাে বাংলাদেশের যে কোনাে স্থানে কার্যকরী করা যাবে। বিধি অনুযায়ী গ্রেফতারী পরােয়ানা যেভাবে কার্যকরী করা হয়ে থাকে সেই ভাবেই উপবিধি (১)
(ক) অনুযায়ী কোনাে আদেশ বাংলাদেশের যে কোনাে স্থানে কার্যকর করা যাবে।
(৭) এই বিধি অনুযায়ী জারিকৃত কোনাে আদেশ যদি কোনাে ব্যক্তি লংঘন করে এবং উপবিধি
(৫) (খ) অনুযায়ী কোনাে আদেশ ছাড়া যদি কোনাে ব্যক্তি উক্ত বিধি লংঘন করে তাহলে সেই ব্যক্তিকে ৭ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হবে এবং তার জরিমানা করা হবে।
(৮) এই বিধি অনুযায়ী আদেশ লংঘনের কারণে উপবিধি (২) এর অধীনে প্রদত্ত মুচলেকা বাজেয়াফত হয়ে যাবে এবং আদালত অথবা ট্রাইব্যুনাল আদেশ লংঘনকারীর বিচারে মুচলেকা দানকারী যে কোন ব্যক্তিকে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্যে তলব করবেন অথবা কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তার কারণ দর্শাবার নির্দেশ দিতে পারবেন; এবং যদি উপযুক্ত কারণ দর্শানাে; না হয় ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া না হয় তাহলে আদালত অথবা ট্রাইব্যুনাল বিধি অনুযায়ী মুচলেকা বাজেয়াফতকরণের মামলা মােতাবেক সেই ক্ষতিপূরণ আদায় করবেন।
(৬) ছবি তােলার ক্ষমতা ইত্যাদি, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের, (১) সরকার আদেশের দ্বারা সরকার সন্দেহভাজন ব্যক্তির অর্থাৎ যার বিরুদ্ধে আদেশ জারী করা হয়েছে সেই ব্যক্তিকে
(ক) তার নিজের ফটোগ্রাফ বা ছবি তুলতে দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন।
(খ) তার আঙুল ও বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ নিতে দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন।
(গ) তার হাতের লেখার নমুনা ও দস্তখতের নমুনা দেয়ার নির্দেশ দিতে পারেন।
(ঘ) তাকে আদেশে উল্লিখিত নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ অথবা ব্যক্তির কাছে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন, কিংবা এই উপবিধিতে উল্লিখিত উদ্দেশে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন।
(২) এই বিধি অনুযায়ী জারীকৃত কোনাে আদেশ যদি কেউ লংঘন করে তাহলে সেই ব্যক্তিকে এক বছরের কারাদন্ড অথবা জরিমানা ও কারাদন্ড উভয়ই দেওয়া যেতে পারে।
৭। কতিপয় সংখ্যার নিয়ন্ত্রণ ও বিলুপ্ত করে।
১। সরকার যদি কোনাে সংস্থাকে নিরাপত্তা জননিরাপত্তা অথবা বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে, জনশৃংখলা বজায় রাখা অথবা সমাজের স্বাভাবিক জীবন যাত্রার জন্যে সরবরাহ ও সর্ভিসের প্রয়ােজনীয়তার পক্ষে হানিকর।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ৪ জানুয়ারি ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত