স্বাধীনতাই বাংলাদেশের দাবী
করিমগঞ্জে বেগম মতিয়া চৌধুরীর ভাষণ গত ২২শে জুন করিমগঞ্জে এক বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ দান প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগনেত্রী মমাছাম্মৎ মতিয়া বেগম চৌধুরী আবেগময়ী ভাষায় বলেন লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তদানের মধ্যে দিয়া মুক্তির সংগ্রাম আরম্ভ হয়। গত ২৩ বৎসরে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদল কিভাবে পূর্ববাংলাকে শােষণ করিয়া ভিক্ষুক করিয়াছে তিনি তাহার বর্ণনা দিয়া বলেন আমাদেরে শুধু ভাওতা দেওয়া হইয়াছে, আমাদের মাঝে ভ্রাতৃবিরােধ সৃষ্টি করা হইয়াছে। সাড়ে সাতকোটী মানুষ দুই যুগ পরে সচেতন হইয়া নিজেরা নিজেদের ভাগ্য গড়িতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হইয়াছে।
তিনি জোর দিয়া বলেন বাংলাদেশ স্বাধীন হইবেই। তখন হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে আর রক্তপাত হইবে না বাংলাদেশ হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সকলেরই বাংলাদেশ হইবে।
ভারতীয় মুসলমানদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন— এক শ্রেণীর মুসলমান মনে করেন ইসলামের একটি রাষ্ট্র ভাঙ্গিয়া যাইতেছে বলিয়া কেহ কেহ মন্তব্য করেন। ইহা নিছক ধাপ্পাবাজি। আদতে পাক শাসকগােষ্ঠী নিজেরাই ইসলাম বিরােধী।
পাক জঙ্গীবাহিনী বহু জামাতে নামাজরত শত শত মুসলমানকে গুলি করিয়া হত্যা করিয়াছে, শত শত মসজিদ, হাজার হাজার কোরাণশরিফ বােমার আগুনে জ্বালাইয়াছে। ইসলাম গেল বলিয়া আওয়াজ তুলিয়া মুসলমানদেরই ধােকা দেওয়া হইতেছে।
আজ সারা দুনিয়া বুঝিয়া লইয়াছে এহিয়া খান বাংলাদেশে জাতিধর্ম নিৰ্বিচারে লাখ লাখ মানুষকে খুন করিয়াছে।
বেগম চৌধুরী বলেন— শরণার্থীরা ভারতে বিপন্ন মুছাফির হিসাবেই আসিয়া অবস্থান। করিতেছেন—তাহারা নিজেদের জন্ম ভূমিতে ফিরিয়া গিয়া সুখে বসবাস করিবার দিন নিকটবর্তী হইতেছে। ভারত সরকার ও ভারতবাসীরা বিপন্ন শরণার্থীদেরে যেভাবে সেবা সাহায্য করিতেছেন তজ্জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশাগত যুবকদেরে মুক্তিফৌজে যােগদান করিবার আবেদন জানান।
সূত্র: আজাদ, ১৪ জুলাই ১৯৭১