করিমগঞ্জে ভয়াবহ পাক নাশকতামূলক কার্য্য
একটি মালগাড়ী ও একটি এম্বুলেন্স বিধ্বস্ত- ৮টী ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী তাজা মাইন উদ্ধার গত ১৩ই আগষ্ট রাত্রি প্রায় ১ ঘটিকার সময় ভাঙ্গা ও করিমগঞ্জের মধ্যবর্তী লামাজুয়ারে একটা রেলওয়ে কালভার্টে শক্তিশালী মাইন বিস্ফোরণের ফলে একটা মালগাড়ির ইঞ্জিন সহ ১১ টা বগী সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। শরণার্থীদের ত্রাণ সামগ্রী নিয়া গাড়িটা ধৰ্ম্মনগর যাওয়ার পথে এই দূর্ঘটনা ঘটে। দূর্ঘটনায় ফায়ারমেন সহ দুইজন আহত হয়।
দূর্ঘটনার সংবাদ পাইয়া বদরপুর হইতে একটী এ্যাম্বুলেন্স গাড়ী ঘটনাস্থলে আসে। রেলওয়ে লাইন হইতে মাত্র ৫০ গজের মধ্যে পূর্তবিভাগীয় রাস্তার উপর গাড়িটা দণ্ডায়মান হইতেই আর একটা মাইন। . বিস্ফোরণের ফলে উক্ত গাড়িটী সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। আরােহী তিনজন ব্যক্তিও গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
স্থানীয় মহকুমা হাকিম, পুলিশ, সৈন্য বিভাগীয় কর্মকর্তারা তৎপরতার সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সৈন্যরা অনুসন্ধান চালাইয়া পূর্তবিভাগীয় রাস্তায় এবং রেল লাইনে আরাে ৪টা শক্তিশালী ট্যাংক বিধ্বংসী তাজা মাইন উদ্ধার করে। এই মাইনগুলিতে চীন ও পাকিস্তানের ছাপা মারা ছিল।
অনুসন্ধানের জন্য সৈন্য বিভাগীয় দুইটী কুকুরকে লাগানাে হয়। কুকুরগুলি পার্শ্ববর্তী লামােজোয়ার গ্রামে এক বাড়ীতে প্রবেশ করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে করিমগঞ্জ কলেজের একজন ছাত্রসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যান্যরা বর্তমানে পলাতক আছে।
পরদিন রেলওয়ে ইঞ্জিনটা তােলার সময় ইঞ্জিনটার নিচে আরাে ২টী তাজা সাইন পাওয়া যায়।
এইখানে উল্লেখযােগ্য যে দুষ্কৃতকারীদের স্বর্গরাজ্য এই লামজোয়ার গ্রামটা কুশিয়ারা নদীর তীরে অবস্থিত। এই গ্রাম দিয়াই বিদ্রোহী নাগা ও মিজোরা পাকিস্তানে পাড়ি দেয়। গােমহিষ ও চোরাই মাল বরাবরই এই গ্রাম দিয়া পাচার হইত। সেই কারণে এখানে একটা বি,এস,এফ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ উহা তুলিয়া নেওয়া হয়। রাত্রিবেলা এই গ্রামের নিকট দিয়া চলাফেরা করা ভয়াবহ বোব্যাপার। ঘনঘটনাস্থলের সন্নিকটবর্তী বাড়ীর মালীক কুখ্যাত মতাহির আলী নাকি তাহার সাঙ্গপাঙ্গ সহ বর্তমানে পলাতক আছেন। ( এইখানে আরাে উল্লেখযােগ্য যে শরণার্থীদের সঙ্গে বহু পাকিস্তানী দুস্কৃতকারীর অনুপ্রবেশ ঘটার ফলে যে কোন সময় যে কোন স্থানে এই ভাবের নাশকতা ঘটার সম্ভাবনা রহিয়াছে। বহু পাকিস্তানী লােককে এই শহরেও বিনা কাজে রাজারহালে সন্দেহজনকভাবে ঘােরাফেরা করিতে দেখা যায়।
জনৈক ইলিয়াছ নামক এক ব্যক্তিকে ও স্থানীয় বাজারে সন্দেহজনকভাবে চলাফেরা করিতে দেখা যায়। উক্ত ঘটনার দিন সকাল বেলা সে বদরপুর যাইতেছে বলিয়া নাকি চলিয়া যায় এবং ঘটনার পর ফিরিয়া আসে। ঘটনার সহিত তাহার কোন যােগাযােগ আছে কিনা অনুসন্ধান করা বিশেষ প্রয়ােজন।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমহেন্দ্র মােহন চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী শ্রী বিশ্বদেব শর্মা, আসাম বিধান সভার সহাধ্যক্ষ, শীরথীন্দ্রনাথ সেন, মহকুমা পরিষদের সভাপতি শ্রীরাকেশ চন্দ্র দাস ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সূত্র: দৃষ্টিপাত, ১৮ আগস্ট ১৯৭১