শিলচরে সাংবাদিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী গান্ধী
গত ১২ই জুন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী মেঘালয়ে যাবার পূর্ব মুহূর্তে শিলচর সার্কিট হাউসে সেখানকার স্থানীয় সংবাদপত্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সমাধান সম্পর্কে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাধানের প্রসঙ্গটি সম্পূর্ণভাবে ঐ দেশের নেতাদের উপর নির্ভর করে। আমরা এ ব্যাপারে কতটুকু কি করতে পারি, তাতে অন্য কোন রাষ্ট্রের ভূমিকাই বা কি এবং আমরা কোন পথে চলেছি তা এ প্রসঙ্গে আসে না।
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলাের চিন্তাধারায় কোন উল্লেখযােগ্য পরিবর্তন হয়েছে কি না—জনৈক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পূর্ণ চিত্র এখনও পরিস্ফুট হয়ে উঠে নি। তিনি বলেনঃ বাংলাদেশে যেভাবে গণহত্যা চলছে, তার নজীর ইতিহাসের পাতায়ও নেই। জনৈক সাংবাদিক বাংলাদেশের স্বীকৃতি দান সম্পর্কে লক্ষ্ণৌতে জি. জি. সােয়েলের একটি বিবৃতির উল্লেখ করেন। তিনি বলেন সম্প্রতি শ্রীসােয়েল বলেছেন যে সর্দার স্বশিরণ সিং বিদেশ থেকে প্রত্যাবর্তনের পরই ভারত সরকার চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশের স্বীকৃতি দেবেন। এঁটা কতটুকু সত্য? প্রশ্নটির জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, সর্দার স্বরণ সিং ফিরে এলে পর আমরা শুধু এটাই বুঝতে পারব যে পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রের চিন্তাশীল নায়কদের দৃষ্টি বাংলাদেশের ব্যাপারে কতটুকু আকৃষ্ট করতে পেরেছি। স্বীকৃতির প্রশ্ন আলাদা—এই বলে তিনি জবাব এড়িয়ে যান।
জনৈক সাংবাদিক মেঘালয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশের শরণার্থীদের আগমনে সেখানকার উপজাতি সম্প্রদায় যে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি করেছেন, সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষন [7] করেন। তিনি বলেন, সেখানে কোন শরণার্থীকেই স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার সুযােগ দেওয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শরণার্থীদের প্রত্যেককেই তাদের দেশে ফিরে যেতে হবে, তাই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার কথা উল্লেখ করে সাংবাদিকরা বলেন, আসাম সরকার অত্যন্ত কঠোর হস্তে তা দমন করেছেন এবং এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী
মহেন্দ্রমােহন চৌধুরীর ভূমিকা খুবই প্রশংসনীয়। আসামের শরণার্থীদের জন্য রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করলে তিনি তাতে অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ২৫ মিনিট কাল আলােচনা করেন।
সূত্র: যুগশক্তি, ১৮ জুন ১৯৭১