You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.23 | বাংলাদেশ অবশ্যই স্বাধীন হবে —শ্রীমতি মতিয়া চৌধুরী | দৃষ্টিপাত - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশ অবশ্যই স্বাধীন হবে
—শ্রীমতি মতিয়া চৌধুরী

“কোন দোদুল্যমানতা নয়, কোন আপােষ নয়, স্বাধীনতাই বাংলাদেশের সমস্যার একমাত্র সমাধান। লাখাে শহীদের আত্মত্যাগ আর রক্তের মধ্য দিয়ে যে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে- সে সংগ্রামকে আপােষের পথে নিয়ে ব্যর্থ করে দেওয়ার ক্ষমতা পৃথিবীর কোন শক্তির নেই- সে যত বড় হক শক্তিই হােক না কেন। সে রকম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবেই। বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই।”
গত ২২ জুন করিমগঞ্জ সরকারী হাইস্কুলের মাঠে এক বিরাট জনসভায় ভাষণ দানকালে বাংলাদেশের এক বিশিষ্ট জননেত্রী, বাংলার অগ্নিকন্যা বেগম শ্রীমতী মতিয়া চৌধুরী এ মন্তব্য করেন। করিমগঞ্জে বিশিষ্ট সমাজ সেবিকা শ্রীমতি অনিমা করের সভা নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এ জনসভার আয়ােজন করেন যুব-কংগ্রেস ও যুব সংঘ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে শ্রীমতী চৌধুরী বলেন যে বাংলাদেশের এ সমস্যা সৃষ্টির জন্য যদি কেউ দায়ী হয় তবে সে আর কেউ নয় সে ভুট্টো ইয়াহিয়ার চক্র।
তিনি বাংলাদেশের উপর পাকিস্তানের মুসলীমলীগ ও পুজিপতিদের শােধনের চিত্র তুলে ধরে বলেন যে, অধিকারের প্রশ্নে দেশের অস্তিত্ব ও ইসলাম বিপন্নের ধুয়া তুলে বাঙালী জাতিকে দীর্ঘ দিনের শােষনেণ্যের ফলেই এই স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে। বাংলার মানুষ আজ তাদের জীবন বিপন্ন করেই এই সংগ্রামে আত্ম নিয়ােগ করেছেন।
শ্ৰীমতী চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বাংলাদেশের অধিকারের সংগ্রাম বলে ঘােষণা করে বলেন যে, ঔপনিবেশিক শােষণকে প্রতিহত করার জন্যই এই সংগ্রাম শুরু হয়েছে। তিনি ভারতবর্ষের
মুসলীম সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলেন যে, পাকিস্তানের মুসলমানের রাজত্ব ছিল না সেখানে এজিদের ন্যায় সর্বপ্রকার নির্যাতন চালানাে হয়েছে। সেখানে সকল প্রকার অনৈসলামিক, অন্যায়, অত্যাচার চালিয়ে জনগণকে দীর্ঘ ২৪ বছর গােলাম হিসেবে রাখা হয়েছে।
বর্তমানে মা বােনের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে, মা’র কোলে শিশু হত্যা চলছে- যা সম্পূর্ণ অনৈসলামিক অমানুষিক। তাই তিনি এই জালেম-রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে মানুষের রাজত্ব কায়েমের সংগ্রামে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামীদের সমর্থন দানের আহ্বান জানান।
শ্রীমতী মতিয়া চৌধুরী বাংলাদেশের ব্যাপারে আপােষের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, মানুষের সাথে আপােষ আলােচনা হয়, কিন্তু কোন পশুর সাথে মানুষের আলােচনা হয় না। তিনি ইয়াহিয়া খানকে নরখাদক পশু হিসেবে আখ্যায়িত করে তার সাথে কোন আপােষ হতে পারে না বলে দৃপ্তকণ্ঠে ঘােষণা করেন।
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে সকল দলের ঐক্যফ্রন্ট গঠন করার জন্য শ্রীমতী চৌধুরী আহ্বান জানান। তিনি শরণার্থীদের দলে দলে মুক্তিফৌজে নাম লেখানাের আহ্বান জানান। শরণার্থীদের বলেন আমাদের দেশে ফিরে যেতে হবে তার জন্য সংগ্রাম করতে হবে। সেজন্য প্রাণ বলিদানে প্রস্তুত হউন। তিনি ঘােষণা করেন বাংলাদেশ অবশ্যই মুক্ত হবে।
শ্রীমতী চৌধুরী করিমগঞ্জ শহরের প্রতিটি শরণার্থী শিবির, টাউনহল, হিন্দি স্কুল প্রভৃতি কর্মী শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি একটি মহিলা সমাবেশেও বক্তৃতা করেন।

সূত্র: দৃষ্টিপাত, ২৩ জুন ১৯৭১