You dont have javascript enabled! Please enable it!

বিশ্ববাসী, আপনারা কি চান?
—জনৈক মুক্তিসংগ্রামী

বিশ্ববাসী বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি উন্নাসিক এমন ধারণা এখন আর বাজারে চালু নেই। আসলে সবই তারা বুঝতে পারছেন—বুঝতে পারছেন তারা কেউ এগিয়ে না এলেও বাঙালীরা এখন থামবে না। থামবার মতাে কোন পরিবেশও যে নেই সেই মােক্ষম সত্যটিও তারা অনুধাবন করেছেন। তবু কখনাে ‘আভ্যন্তরীণ ব্যাপার কখনাে ‘আপােষ’ বা ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের চটকদার বুলি কপচাচ্ছেন। আসলে তারা কি বুঝাতে চাচ্ছেন সেটি হৃদয়ঙ্গম করা আমাদের সাধ্যের বাইরে। কখনাে সাপ, কখােন [কখনও] ব্যাঙ সাজছেন তারা। শেষ পর্যন্ত তাদের উদ্দেশ্যের দৌড় ‘সাপ হয়ে কাটা এবং ওঝা হয়ে ঝাড়া’। কিন্তু এ করে তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি ব্যতীত বাঙালীর কোন উপকারই করতে পারবেন কি শেষ পর্যন্ত্য?
‘আভ্যন্তরীণ ব্যাপার’ নামক বাজার চলতি বুলিটি আসলে কি? আসলে সব চোরের এক রা। ওকিনাওয়া ভিয়েতনাম, বায়াফ্রা বা ল্যাটিন আমেরিকায় পৃথিবীর শক্তিমানরা যে খেলা খেলছেন তা তারা যতক্ষণ না থামাতে পারছেন ততক্ষণ তাদের গলায় জোর নেই। তাই বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এসব ব্যাপারে নাক গলানােটা স্রেফ অনধিকার চর্চা। শােনে বগল বাজাচ্ছেন পিণ্ডি—আর নিজেরা লাভ করেছেন আত্মতৃপ্তি। এদিকে সর্বনাশের কোন সীমারেখা থাকছে না বাঙালীর জীবনে। চোরের মন বােচকার দিকে। বাঙালীর মতাে একটা ক্ষুদ্র জাতি ধ্বংস হয়ে যাক তাতে তাদের কি?
এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তারা ‘আপােষের প্রস্তাব করে। কিন্তু কিসের আপােষ, কার সাথে আপোেষ এবং সেটা কি উপায়ে তার কোন পথ নির্দেশ করতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের এ ব্যর্থতা কি ইচ্ছাকৃত অথবা উদ্দেশ্য প্রণােদিত? তা না হলে তারা পরিষ্কার কিছু না বলে ভাষার জাল বিস্তার করছেন কেন? আসলে তারা জানেন—আপােষের কোন পথই খােলা রাখেনি পিণ্ডি। ২৪ বছর ধরেই তাে বাঙালীর সাথে ‘পিণ্ডির আপােষ হচ্ছে। এখন সেই পুরানাে কাসুন্দি ঘেটে যে বাঙালীর পিণ্ডি চটকানাে ছাড়া কোন ফায়দাই হবে না তা কি তারা বুঝতে পারছেন না? পদ্মা, মেঘনা, যমুনায় বয়ে যাওয়া রক্তের স্রোত কি আপােষ করতে দেবে বাঙালীকে? তাই শেষ পর্যন্ত আপােষের কোন প্রশ্নই উঠতে পারেনা। মানুষ মানুষের সাথে আপােষ করতে পারে; কিন্তু নরপিশাচের সঙ্গে……?
তাই ‘আপােষ’ বলে বাঙালীর দগদগে কাটাঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়াই সার হচ্ছে—সেকথা স্বয়ং পিণ্ডিই শুনছে না। এই হীন বাক চাতুরী বিশ্বের মানবতাকে করছে কলংকিত, বাঙালীকে দিচ্ছে ধোকা আর ভারতকে ঠেলে দিচ্ছে আসন্ন অন্যতম মহা-দুর্যোগের দিক। তাই বিশ্ব বিবেকের বদ্ধ দুয়ারে আমরা সকাতর আবেদন জানাচ্ছি—আপনারা দয়া করে কাউকে ধোঁকা দেবেন না। প্রবঞ্চনার পথে প্রবঞ্চনার সমাধান হয় না—বাক চাতুরীর দ্বারা বন্ধ হবে না রক্তপাত। আপনারা কথা কম বলুন—আপনারা কাজে নামুন। তা না হলেও বাঙালী তার পথ যখন চিনেছে তখন লক্ষ্য স্থলেও পৌঁছতে পারবে।

সূত্র: দৃষ্টিপাত, ২৩ জুন ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!