সম্পাদকীয়: আলােচনা
এই যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে?
(যুগশক্তি’র রাজনৈতিক ভাষ্যকার)
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন কূটনৈতিক মহলে জল্পনা। কল্পনা চলছে। কেউ কেউ এমন আশংকাও করছেন যে তৃতীয় মহাযুদ্ধ বােধহয় এই যুদ্ধের সূত্র ধরেই আমাদের দুয়ারে উপস্থিত।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে অনতিবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি এবং পারস্পরিক সৈন্য অপসারণের প্রস্তাব পাশ হবেই। কারণ পাক-সুহৃদ আমেরিকা রাষ্ট্রসঙ্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের বিবেকের জিম্মাদার, সেই সঙ্গে এখন তাদের অবৈধ প্রণয়ী চীনও জুটেছে। এ প্রস্তাব পাকিস্তানের কাছে ততক্ষণ পর্যন্তই গ্রহণযােগ্য বিবেচিত হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে বাংলাদেশের কিছুটা অঞ্চলে অন্ততঃ তার দখল বজায় রাখতে পারবে। আবার ভারত যদি গােটা বাংলাদেশ পাকবাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করে নিতে পারে, তখন সৈন্য অপসারণে ভারতের অসুবিধে হবে না, কারণ বাংলাদেশের দখল তখন থাকবে মুক্তিবাহিনীর হাতে। সেই অবস্থায় কিন্তু পাকিস্তানের মুরুব্বীদের আর পারস্পরিক সৈন্য অপসারণের জন্য প্রস্তাব পাশ করানাের কোন আগ্রহ থাকবে না।
যতদূর মনে হয় এ যুদ্ধে আমেরিকা সরাসরি জড়িয়ে পড়বে না, তবে ইরাণ, সৌদি আরব, তুর্কীর হাত দিয়ে এখন যেমন দিচ্ছে তেমনি বেনামীতে পাকিস্তানকে সাহায্য দিয়ে যাবে। ভিয়েনামে ল্যাজে গােবরে হওয়ার পর নূতন ভিয়েৎনাম সৃষ্টিতে নিক্সন সাহেব উৎসাহ না হওয়ারই কথা, বিশেষত নিৰ্বাচন সামনে। গ্রেট বৃটেনও নিরপেক্ষ থাকবে বলে মনে হয়, তবে বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনীর জয় সুনিশ্চিত দেখলে তারা একটু এদিকে ঝুঁকবেন, কারণ বাংলাদেশের পাটের বাজারের উপর তাদের লােভ আছে। দ্বিতীয়ত চীনের সঙ্গে আমেরিকার দোস্তীটা যদি এ ব্যাপার নিয়ে খুব গভীর হয়ে উ তবে বৃটেন ব্রিত বােধ করবে, কারণ বৃটিশ কূটনীতির মূল ভিত্তিই হচ্ছে শক্তিসাম্য বা Balance of power. চীন-আমেরিকার প্রগাঢ় বন্ধুত্ব বর্তমান বিশ্বের শক্তি সাম্যে চির ধরাবে, সেটা বৃটেনের পক্ষে রবখাস্ত করা কঠিন।
সূত্র: যুগশক্তি, ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১