You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.22 | সম্পাদকীয়: নাশকতা ও নিরাপত্তা | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সম্পাদকীয়: নাশকতা ও নিরাপত্তা

বেশ কিছুদিন যাবত সীমান্তবর্তী কাছাড়, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে পাকিস্তানী চরদের নাশকতামূলক ক্রিয়াকলাপ অনুষ্ঠিত হইতে চলিয়াছে। রেল লাইন ও অন্যান্য যােগাযােগ ব্যবস্থা বানচাল করাই অন্তর্ঘাতকদের মূল লক্ষ্য। পাকিস্তান আমাদের দেশে সংকট সৃষ্টি করার জন্য একশ্রেণীর বেইমানদের লেলাইয়া দিয়াছে নাশকতামূলক কাজের জন্য।
আমাদের সরকার নাশকতাকারীদের নিরস্ত্র করার এবং বিশেষভাবে সর্বপ্রকার যােগাযােগের নিরাপত্তার জন্য যথা ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়াছেন; আমাদের নেতৃসমাজ, যুবসমাজ ও অন্যান্য সকল নাগরিক এদিক দিয়া যথেষ্ট সচকিত হইয়াছেন। দেশের নিরাপত্তারক্ষীবাহিনী, গ্রাম রক্ষীবাহিনী, রেল রক্ষীবাহিনী, এবং অপরাপর কতিপয় সংস্থা অন্তর্ঘাতকদের গতিবিধির ও অপচেষ্টা রােধ করার দিক দিয়া সজাগ এবং সক্রিয় ইহা আশার কথা।
আমাদের দেশে একটা প্রবাদ আছে – “ঘরের চোরের সাহায্য না পাইলে বাহিরের চোর চুরি করিতে পারে না। কাজেই ইহা আমাদের স্বীকার করিতেই হইবে, আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতকারী রহিয়াছে যাহারা লােভে পড়িয়া পাকিস্তানী অন্তঘাতকদের সহায়তা করে বা পাকিস্তানের নির্দেশে নাশকতামূলক কাজ করিতে লাগিয়া যায়। সত্যিকারভাবে কে বা কাহারা এসব দেশদ্রোহী কাজ করে বা সহায়তা করে তাহা ঠিক বলা কঠিন হইলেও ইহা বলা সহজ যে এসব দুস্কৃতকারীরা আমাদের সমাজ জীবনেই রহিয়াছে।।
সুতরাং সহর ও গ্রামাঞ্চলে আমাদের এমনভাবে লক্ষ্য রাখিতে হইবে কাহারা পাকচরদের সঙ্গে আনাগােনা করে, কাহারা অবাঞ্ছিত লােকদের সঙ্গে মিলামিশা করে এবং কাহাদের কথায় ও কাজে দেশদ্রোহীতা প্রকাশ পায়। সহরের কথা বাদ দিলেও সীমান্তবর্তী গ্রামাঞ্চলের মাতব্বর শ্ৰেণীর, যুব সমাজের, ছাত্র সমাজের বড় দায়িত্ব রহিয়াছে স্ব স্ব প্রতিবেশীয় লােকদের মধ্যে অবাঞ্ছিত কেহ আছে কিনা এবং তাহাদের দৈনন্দিন আচরণ কি স্তরের এসব দেখা। আমরা আমাদের কাছাড়ের বিধান সভার সকল সদস্য আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সমূহের সভাপতিগণ, গাঁওসভাগুলির সভাপতি এবং সভ্যগণকে, গ্রামের শিক্ষক সমাজ ও শিক্ষিত সকলকে এবং অন্যান্য সমাজসেবী সকলকে কাতরভাবে অনুরােধ করি… তাহারা যেন গ্রামাঞ্চলে ঘন ঘন সভাসমিতি ও আলােচনা করিয়া গ্রামবাসীদের দায়িত্ব এবং বিবেক জাগরণে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন, যাহার ফলে গ্রামাঞ্চলে সন্দেহভাজন লােকগুলি সংযত হইবে বা ভয় পাইবে এবং জনসাধারণ অন্তর্ঘাতী কাজ সমূহের সুদূরপ্রসারী ফলাফল বিষয়ে অবহিত হইতে পারিবেন।
পূজাবকাশে গ্রামসমূহের ছাত্র প্রত্যেক গ্রামে আমাদের নিরাপত্তার অনুকূলে এবং নাশকতাকারীদের কোণঠাসা করার ব্যাপারে একটা নতুন পরিবেশ সৃষ্টি করিতে পারিবেন বলিয়া আমাদের ভরসা আছে।
যাহারা সত্যিকার দুষ্কৃতকারী বা দুষ্কৃতকারীদের সহায়ক বলিয়া ধরা পড়িবে তাহাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত যাহাতে কোন নিরীহ লােক অযথা বিপন্ন না হয়।
আমাদের মনে রাখা উচিত মীরজাফর উমিচাদ শ্রেণীর লােকেরাই এক একটা দেশের বিপৰ্যয় ঘটাইতে পারে। আজকালকার সংকট সময়ে গভীরভাবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থ এবং সংহতির দিক বিচার করিয়া চলা প্রত্যেক নাগরিকেরই কর্তব্য। অঘটন ঘটিয়া গেলে প্রতিষেধক ব্যবস্থার কোন মূল্য থাকেনা, সৰ্ব্বপ্রযত্নে অঘটন রােধ করাই আমাদের সকলের কর্তব্য।
আমরা আরও আশা করি আমাদের সরকার নাশকতা নিবারণ ও নিরাপত্তা দৃঢ়ীকরণে কঠোর বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন এবং প্রয়ােজন হইলে স্থানে স্থানে পিউনিটিভ টেক্স বসাইয়া গ্রামাঞ্চলবাসীদের সমষ্টিগত বিবেক জাগাইয়া তুলিবার ও দেশের-দশের মঙ্গলজনক কাজে সচেতন হওয়ার ব্যবস্থা করিবেন।

সূত্র: আজাদ, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১