সম্পাদকীয়: দুর্নীতি ও দেশাত্মবোধ
দেশ আজ আক্রমণের সম্ভাবনার মুখে। এই অবস্থায় প্রয়ােজনের খাতিরে সর্বদেশে সর্বকালে জাতীয় জরুরী কালীন অবস্থা ঘােষণা করা হয়। কিন্তু ভারতের মত একটা বিরাট গণতান্ত্রিক দেশে এই জরুরী অবস্থা ঘােষণার পূর্বে বহু কিছু বিচার বিবেচনার আছে। তথাপি এটা অস্বীকার করার নয় যে, দেশের উপর দিয়ে একটা অঘঘাষিত জরুরী কালীন অবস্থা চলছে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিভিন্ন কারণে দৈনন্দিন জীবন যাত্রা ব্যাহত হয়ে যাচ্ছে। দেশের এই রকম যখন একটা অবস্থা দাঁড়ায় তখন আভ্যন্তরীণ শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রেই হােক, প্রতিরক্ষার ব্যবস্থায়ই হােক জনসাধারণ তথা সরকারী কর্মচারী সকলকেই একজোটে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হয়।
কিন্তু আমরা অত্যন্ত বেদনার সহিত বিভিন্ন বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মচারীদের দৌরাত্ম লক্ষ্য করে যাচ্ছি। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম দেশদ্রোহীতারই সামিল হয়ে যাচ্ছে।
করিমগঞ্জ বাজার থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার মাল ওপারে পাচার হয়ে পাক সেনাদের মদত জোগাচ্ছে। এই মালগুলি প্রায় প্রকাশ্যেই আনাগােনা হচ্ছে। কারাে যেন সেদিকে নজর নেই। সীমান্তরক্ষীবাহিনী আমাদের সীমান্ত রক্ষা করে চলেছেন অথচ তাদের নাকের ডগা দিয়ে প্রকাশ্যভাবেই অবৈধ খেয়া পারাপার চলছে। আমরা এ নিয়ে পূর্বেও বহুবার লেখালেখি করেছি কিন্তু কোন ফল পাওয়া যায়নি। করিমগঞ্জে নাশকতামূলক যে সকল বিস্ফোরণ হয়ে যাচ্ছে সেই বিস্ফোরক পদার্থগুলি হাওয়ায় এসে এখানে পড়ছে না। এই সকল অবৈধ খেয়া দিয়েই সেগুনাে আসছে বলে সন্দেহ করার অবকাশ আছে। সীমান্তরক্ষীদের অগােচরে এই খেয়া পারাপার চলছে অথবা তাহাদের পরােক্ষ সহযােগিতায় এটা হচ্ছে সেই কথাটা বিশ্বাস করতে আমাদের কষ্টবােধ হয়। এই সামান্য অথচ মারাত্মক কাজটি প্রতিরােধ করতে সীমান্তবাহিনী যদি অক্ষম হন তবে সীমান্তে পহরার ভান করার তাদের কোন অধিকার নেই।
বাংলাদেশ আন্দোলন সুরু হওয়ার সংগে সংগেই শুল্ক বিভাগীয় কর্মচারীরা প্রায় বেকার হয়ে পড়েছেন। হাজার হাজার টাকার মাল যখন ওপারে পাচার হয় সেটাতে বাধা দেওয়ার তাদের সাধ্য নাই। তখন। আইনগত বাধার তারা দোহাই পাড়েন। ভারতের ভেতরে জিনিষপত্র আনাগােনা করতে কোন বাধা নাই সুতরাং তারা কিভাবে ধরেন। কখন কোন ফাঁকে টুক করে মালগুলি ওপারে চলে যায় সেটা তারা টের পান না এটাই আমাদেরকে বিশ্বাস করে বসে থাকতে হবে? ২ লক্ষ লক্ষ টাকার মুদ্রার চোরাই কারবার চলেছে সেটা ধরার হয় তাদের ইচ্ছা নাই অথবা ক্ষমতা নাই অথবা সহযােগিতা করে যাচ্ছেন। তাদের এই দুর্বলতা ঢাকতেও শুল্ক বিভাগ তৎপর হয়ে উঠেছেন। অহেতুক সংবাদের উপর ভিত্তি করে সম্মানিত ব্যক্তিদের বাড়ীতে অহেতুক তল্লাসী চালিয়ে জনসমক্ষে তাদেরকে হেয় করার এক পন্থা তারা নিয়েছেন। সম্প্রতি শহরে এই ভাবের কয়েকটা তল্লাশীতে চিন্তাশীল ব্যক্তিরা ক্ষুব্ধ বােধ কচ্ছেন। নিজেদের অকর্মণ্যতা ঢাকতে গিয়ে আইনের ফাঁক দিয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের উপর দুর্নামের বােঝা চাপানাের এই অপচেষ্টাকে আমরা নিন্দা করি।
হােমগার্ড নামীয় অর্ধেক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এক শ্রেণীর সশস্ত্র পুলিশকে কোন কোন বিশেষ কাজে লাগান হয়েছে। এই অন্ধ্র প্রশিক্ষিতদের দুর্নীতি ও দুষ্কর্মের মুখরােচক সংবাদে আমরা সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছি। অবিলম্বে এই সকল হােমগার্ডদের এই সকল স্থান থেকে তুলে নেয়ার জন্য আমরা দাবী রাখছি।
এ ছাড়াও অনভিজ্ঞ ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারী দিয়ে শিবির পরিচালনের গুরুদায়িত্ব এবং কোন কোন উচ্চপদস্থ কর্মচারীর এক গােয়ামী করিমগঞ্জের জনমনে গভীর অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। আমরা এই বিষয়ে। কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করি।
সূত্র: দৃষ্টিপাত, ১০ নভেম্বর ১৯৭১