You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.15 | সম্পাদকীয়: জয়তু বাংলাদেশ | দৃষ্টিপাত - সংগ্রামের নোটবুক

সম্পাদকীয়: জয়তু বাংলাদেশ

১৯৪৭ সালে যে দ্বিজাতী তত্বের উপর পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল, বহু হিংসা দ্বেষে জর্জরিত হওয়ার পর সুদীর্ঘ আড়াই দশক পর প্রমাণিত হয়ে গেল, সেই তত্ব ছিল সম্পূর্ণ ভুল। সেই ভুল প্রমাণ করতেই বিধাতার আশির্বাদরূপে সৃষ্টি হল বাংলাদেশ আন্দোলন। লক্ষ প্রাণ বলি হয়ে গেল এই শুদ্ধি পর্বে। নতুন একটা আশির্বাদ সমাজ গঠন করে তুলতে হয়ত এরও প্রয়ােজন ছিল।
প্রচুর রক্তক্ষয় আর অভিনব আন্দোলনের পর যে আশার আলাে নিয়ে সূর্যোদয় হতে চলেছে সমগ্র বিশ্ববাসী শাসরুদ্ধ করে তারই প্রতীক্ষায় আছে। বাংলাদেশের অস্থায়ী সভাপতি নজরুল ইসলাম ঘােষণা করেছেন বাংলাদেশ হবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। সেখানে কোন সাম্প্রদায়ীক দল গঠন করতে দেয়া হবে । এই ঘােষণার জন্য আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই।
সুদীর্ঘ আড়াই দশক ধরে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতরাষ্ট্র এ ধরণেরই একটা অসাম্প্রদায়ীক গােষ্ঠী গঠন করার আপ্রাণ চেষ্টা করে এসেছে। কিন্তু পাকিস্তানের স্বার্থবাদী শাসকগােষ্ঠী ও সি আই এর চক্রান্তে সেই চেষ্টা বার বার ভেস্তে গেছে। দ্বিজাতী ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে উঠার কারণেই উভয় রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় স্ব স্ব দেশকে এতদিন নিজের করে নিতে পারছিলেন না। এপারের সংখ্যালঘুরা তাকিয়ে থাকতেন ওপারের দিকে ওপারেও হয়তাে তাই। সেই দূর্বিষহ দিনগুলির অবসান হতে চলেছে বলেই আমরা আশা করব। পাকিস্তানী শাসনতন্ত্রের অপপ্রচারে যারা এতদিন মােহগ্রস্ত হয়ে থাকতেন তাদের সচেতন হওয়ার দিন সমুপস্থিত।
যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি হল নিজের আভ্যন্তরীণ তাগিদে ভারতেরও এভাবেরই একটা বন্ধু রাষ্ট্রের প্রয়ােজন ছিল। ভারতের আভ্যন্তরীণ গােলযােগকে জিইয়ে রেখে ভারতের উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করতে চীন তথা আমেরিকার সিয়া [সিআইএ] গােষ্ঠী পাকিস্তানকে মাধ্যম করে যে দুঃস্বপ্নে পরিগণিত হতে চলেছে। মরীয়া হয়ে আমেরিকা আজ হাহুতাশ করতে শুরু করেছেন। এই দুষ্টচক্রের দূরভিসন্ধি আজ দিবালােকের মতই পরিষ্কার হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের অসামরিক শাসন ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতে যত প্রকার সাহায্য প্রয়ােজন আমাদেরকে করতে হবে। শান্তি শৃঙ্খলা যাতে অতি স্বত্তর [সত্বর] ফিরে আসে তার জন্যও সকলকে একযােগে কাজ করতে হবে। মুক্তাঞ্চলগুলিতে ভারতীয় সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলি থেকে নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
করিমগঞ্জ মহকুমাধীপতি ও জেলাধিপতির প্রচেষ্টায় এইরুপ সরবরাহ কিছুটা আরম্ভ হয়েছে। কিন্তু ত্রিপুরা সীমান্ত থেকে এই সরবরাহ আরম্ভ না হওয়ার দরুন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুক্তাঞ্চলগুলিতে জনসাধারণ অসুবিধার সম্মুখিন হচ্ছেন বলে আমরা সংবাদ পাচ্ছি। এই সম্পর্কে আমরা ত্রিপুরা সরকারের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

সূত্র: দৃষ্টিপাত, ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১