সম্পাদকীয়: ১৯ শে মে
দশ বৎসর পূর্বে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে যে এগারটি অমর প্রাণ উৎসর্গীত হইয়াছিল, তাহাদের । পূত স্মৃতির উদ্দেশ্যে আমাদের অন্তরে প্রণতি নিবেদন করিতেছি।
প্রতিবেশী বাংলাদেশে সেইখানকার ভাষা শহীদদের স্মৃতিপুত ২১ শে ফেব্রুয়ারী তারিখটি আজ যে বৃহত্তর গণতান্ত্রীক তাৎপর্য্যে উল্লাসিত হইয়া উঠিয়াছে, দূর্ভাগ্যাবশতঃ ১৯ শে মে’র মহৎ উত্তরাধীকারকে আমরা সেই পর্যায়ে উন্নীত করিতে পারি নাই।… এমনকি দশ বৎসর পূর্বে যে শাস্ত্রী ফর্মুলাকে ভিত্তি করিয়া । আন্দোলন স্থগিত রাখা হয়, তাহারও পুরােপুরি রূপায়িত হইয়াছে বলা যায় না। জেলা স্তরে বাংলার মর্যাদা কিছুটা স্বীকৃত হইয়াছে সত্য, কিন্তু অন্যান্য অঞ্চলে ভাষাগত সংখ্যালঘুদের রক্ষাকবচের কোন ব্যবস্থা এযাবৎ হয় নাই। সম্প্রতী কোন কোন মহল হইতে বাঙালীদের সংস্কৃতি অস্তিত্বের উপর আঘাত হানার চেষ্টা আবার দৃষ্টিগােচর হইতেছে। এই প্রসঙ্গে এই কথাটি পরিস্কারভাবে বলা প্রয়ােজন যে, অন্য কোন জাতি বা গােষ্ঠীর ভাষাগত বা সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির পরিপন্থী কোন মনােভাব লইয়া ৬১ সালে কাছাড়ের গণ সংগ্রাম সংগঠিত হয়। না, এখনও কেহ সেই ধরণের মনােভাব পােষণ করেন না। আমরা বিশ্বাস করি প্রতিবেশী সমস্ত জাতি ও গােষ্ঠীর পরিপূর্ণ সাংস্কৃতিক বিকাশ ও পারস্পরিক সুষ্ঠু ভাব বিনিময়ের মাধ্যমেই আমাদের জাতীয় সংহতির বুনিয়াদ দৃঢ় হইতে পারে। কিন্তু তাহাতে কোন ধরণের ভাষাগত বা সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের সম্ভাবনা দেখিলে তাহার প্রতিরােধেও আমরা দৃঢ় সংকল্প। ১৯ শে মে আমাদের চরম ত্যাগের বিনিময়ে সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার শিক্ষাই দিয়াছে।।
সূত্র: যুগশক্তি, ২১ মে ১৯৭১