You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.16 | সম্পাদকীয়: হিটলারের প্রেতাত্মা | দৃষ্টিপাত - সংগ্রামের নোটবুক

সম্পাদকীয়: হিটলারের প্রেতাত্মা

হিটলারের মত একটি বিরাট শক্তি এই শতকেই জার্মানিতে ইহুদিমুক্ত রাষ্ট্র গড়ে তােলতে চেয়েছিলেন। শক্তিমত্ত হিটলার তাই একের পর এক ইহুদি হত্যা করে, অত্যাচারের পর অত্যাচারে জর্জরিত করে ইহুদিদের নির্বংশ করার প্রয়াস পেলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরাজয়ের গ্লানি মেখে তাকেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে হল।
সেই হিটলারেরই অতৃপ্ত প্রেতাত্মা ইয়াহিয়ার ছদ্মবেশে আজ বাংলাদেশকে হিন্দু মুক্ত করতে কৃত সংকল্প। জাতীয়তাবাদের আন্দোলনে বাংলাদেশে যে আদর্শ স্থাপন হতে চলেছে তাকে সাম্প্রদায়ীক জিগীরের সেই পুরনাে ইয়াহিয়া ঘায়েল করে দিতে চাইছেন। ইসলামাবাদের ঘাতক বাহিনী বেছে বেছে হিন্দু নিধনে ব্যস্ত। হিন্দু নারীদের ওপর চলছে অকথ্য অত্যাচার। যারা কোন প্রকারে প্রাণে বেঁচে যাচ্ছেন তারা এসে আশ্রয় নিচ্ছেন ভারতে। সাম্প্রদায়ীক গুন্ডাদের উস্কানি দিচ্ছেন জঙ্গী সরকার। তাদেরকে অস্ত্র দিচ্ছেন, মদৎ দিচ্ছেন সংখ্যালঘুদের বাড়ীঘর লুণ্ঠন করে সম্পত্তির দখল নিতে। জাতীয়তাবাদী মুসলমানদের হয়েছে সমূহ বিপদ। হিন্দুর রক্তে হাত না রাঙালে কপালে জুটছে লাঞ্ছনা ও মৃত্যু। অর্থাৎ ইয়াহিয়া গণতান্ত্রিক আন্দোলনটার মােড় ঘুরিয়ে সাম্প্রদায়ীক আন্দোলন গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। তাই সুপরিকল্পিতভাবে শুরু হয়েছে হিন্দু এবং জাতীয়তাবাদী মুসলমান বিতাড়ন। এতে যেমন সাম্প্রদায়ীকতাবাদী গুন্ডাবাজদের দিয়ে সাময়িক ভীতির রাজ্য সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন তেমনি চাচ্ছেন ইসলামের জিগীর তােলে বিশ্বের ঐসলামিক রাজ্যগুলির সহানুভূতি আদায় করতে।
আদিম যুগের পাশবিকতা জাগ্রত করে দিয়ে ইয়াহিয়া তার সেনাপতিদের পরিণত করেছেন এক একটি হিংস্র জানােয়ার। বাংলাদেশকে সায়েস্তা করতে দরকার হলে তারা ৫০ লক্ষ বাঙালীকে হত্যা করতেও পরানুখ নন। তাদের ঔদ্ধত্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে জনৈক পাক মেজর একজন মার্কিন ইঞ্জিনিয়ারকে বলছেন- লড়াই যখন শেষ হবে তখন বাংলাদেশকে কোন বাঙালী চালাতে পারবে না। আমি নিজে রাখব একজন বাঙালী রক্ষিতা। পাক সৈন্যরাও পাবে একটা করে বাঙালী নারী। কুকুরগুলাে অনাহারে ছিল তাই তাদের আহার জোটানাের জন্যেই পাইকারী হারে খাদ্যবস্তু বাঙালী হত্যা করা হচ্ছে।
পশু ইয়াহিয়ার কৃতকর্মের বােঝা ঠেলে চলতে হবে ভারতকে এটা কোন কাজের কথা নয়। সুপ্ত বিশ্ব বিবেকের কাছে চেয়ে চেয়ে কিছুতেই ভারত দূর্যোগপূর্ণ ভবিষ্যৎকে আহ্বান করতে পারেন না। সময় থাকতে আমাদের সাবধান হতে হবে, তার দৃঢ় প্রতিকার গ্রহণ করতে হবে। পাকিস্তানী সাম্প্রদায়ীকতার ঢেউ ভারতের এক শ্রেণীর মুসলমানদের মনে সাড়া জাগাতে সুরু করেছে। সম্প্রতি দিল্লীতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলীম মজলিশ মুশাওয়ারতে তা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের আন্দোলনের ধ্বংস কল্পনা করে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ভারতীয় নাগরিক হলেও তাদের আনুগত্য কোথায় তা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের মন থেকে এ ধারণা যাতে মুছে যায় তার জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। অন্যথায় মুসলিম সাম্প্রদায়ীকতাবাদ যত মাথাচাড়া দিতে থাকবে হিন্দু সাম্প্রদায়ীকতাবাদীরা তত শক্তিশালী হতে থাকবে। এতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হবে সর্বনাশ।
পাকিস্তানের হিংস্র পশু শক্তি যা আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ার উদ্যোগ করছে তাকে বিবেক দিয়ে ক্ষান্ত করা সম্ভব নয়। শঠে শঠাং সমাচরেৎ শাস্ত্র বাক্য অনুসরণ করে সময়ােচিত শিক্ষা দান প্রয়ােজন। অন্যথায় আসন্ন সাম্প্রদায়িক বিপদের হাত থেকে আমাদের মুক্তি নেই। তাই আমরা মনে করি নয়াদিল্লী অতিসত্তর এগিয়ে আসুন।

সূত্র: দৃষ্টিপাত, ১৬ জুন ১৯৭১