You dont have javascript enabled! Please enable it!

সম্পাদকীয়: বাংলাদেশ এবং ভারতবর্ষ

কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীস্মশিৗরণ সিং এবং শিক্ষামন্ত্রী শ্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায় পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের জননেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সমস্যা সম্পর্কে আলােচনা করিয়া দেশে ফিরিয়া আসিয়াছেন। রাজনৈতিক মহলের ধারণা ছিল যে এই দুই মন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর এই ব্যাপারে ভারত সরকারের নীতি সুনির্দিষ্ট রূপ পাইবে। কিন্তু সম্প্রতি পাকিস্তানে মার্কিন সমর সম্ভার প্রেরণ সম্পর্কে রাজ্যসভায় এ হইল, তাহাতে ভারত সরকারের নীতি খুব স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয় নাই।।
অথচ এই কথা আজ দিবালােকের মত স্পষ্ট যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা সুনির্দিষ্ট এবং কাৰ্য্যকরী নীতি নিরূপণের ব্যাপারে ভারতবর্ষের আর অপেক্ষা করার সময় নাই। ষাট লক্ষ শরণার্থীর চাপে ভারতের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এক জটিল অবস্থা সৃষ্টি হইয়াছে। বিশ্ব সমাজের নিকট হইতে এই বিপন্ন মানবতার স্বার্থে যে পরিমাণ সাহায্য আশা করা গিয়াছিল, তাহা পাওয়া যায় নাই, বরঞ্চ নানা ধরণের আন্তর্জাতিক কূট কাচালী ইতিমধ্যে সক্রিয় হইতে দেখা গিয়াছে। বাংলাদেশের ষাট লক্ষ শরণার্থী এবং সাতকোটি সন্ত্রস্ত অধিবাসী আজ একান্তভাবে আশ্রয় এবং আশ্বাসের জন্য ভারতের দিকেই চাহিয়া আছে।
বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বিপন্ন প্রতিবেশীর আত্ম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সর্বতােপ্রকারে সাহায্য করার নৈতিক দায়িত্ব ভারত সরকারের রহিয়াছে। বাংলাদেশ সংগ্রামের গােড়ার দিকে ভারতীয় জনসাধারণের প্রতিভূ হিসাবে ভারতের লােকসভা সেই দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছেন এবং বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষ যেটুকু নৈতিক সমর্থন আমাদের নিকট হইতে পাইয়াছেন, তাহাতে সেই দায়িত্বই আমরা আংশিক পালন করিয়াছি মাত্র। এখন সংগ্রামের চূড়ান্ত মুহূর্তে আমাদের দীর্ঘসূত্রতা এবং টালবাহানার জন্য যদি মূল সংগ্রামের কোনরূপ ক্ষতি হয়, তবে সে অপরাধের মাফ] ক্ষমা নাই। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মরণপণ সংগ্রামে ভারত যদি তাহার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তবে সার্বভৌম স্বাধীন দেশ হিসাবে ভারতের অস্তিত্ব এবং তেইশ বৎসরের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য একেবারেই অর্থহীন বিবেচিত হইবে।

সূত্র: যুগশক্তি, ২৫ জুন ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!