সম্পাদকীয়: নাগরিক প্রতিরক্ষায় সচেতন থাকুন
সীমান্ত বরাবর পাক-সেনারা পরিখা খনন করে ঘাটি তৈরী করতে সুরু করেছে। ভারতীয় ভূখণ্ডের উপর ঘন ঘন গুলিবর্ষণ করে পাক-সেনারা ভারতীয় নাগরিকদের হত্যা করে চলেছে। কারণে অকারণে ভারতের
বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও হিংসা প্রচার, স্থানে স্থানে মাইন পুঁতে নাশকতামূলক কাজের চেষ্টা সব কিছু মিলিয়ে বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে একটী যুদ্ধাবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। | ইহা সত্য যে শত প্ররােচনাতেও পাকিস্তান আক্রমণের মনােবৃত্তি ভারতের নেই। ভারত চায় বাংলাদেশ সমস্যার একটা সুষ্ঠ শান্তিপূর্ণ অবসান।
বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানকল্পে বিশ শক্তিগুলাে যেভাবে চাপ সৃষ্টি করতে সুরু করেছেন তাতে ইয়াহিয়া সরকারকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে। উপরন্তু মুক্তি সেনানীর তীব্র আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতা ইয়াহিয়া জঙ্গী সরকারের দিন দিনই লােপ পাচ্ছে। এমতাবস্থায় জঙ্গী সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছেন এবং যেকোন মুহূর্তে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করার মত আত্মঘাতী নীতি নেওয়া তাদের পক্ষে কিছুই বিচিত্র নয়।
আমাদের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমহেন্দ্র মােহন চৌধুরী সম্প্রতি করিমগঞ্জ সফরকালে জনসাধারণকে হুশিয়ার করে দিয়েছেন এবং যেকোন অবস্থার মােকাবেলা করতে তৈরী থাকার এবং পাক গুপ্তচরদের প্রতি প্রখর দৃষ্টি রাখার উপদেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ত্রাণ কমিটী নাগরিক প্রতিরক্ষায় প্রস্তুত থাকার জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন। করিমগঞ্জ শহরে ‘ইয়ুথ কোর’ ও ‘নারী শক্তি সংঘ’ নামে দুইটী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এবং দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক ও স্বেচ্ছাসেবিকা ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। কংগ্রেসের এক সভায়ও সহর ও সীমান্তবর্তী গ্রাম সমূহে এই পরিপ্রেক্ষিতে সেবাদল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মহকুমাধিপতি শ্রীইন্দ্রজিৎ গুপ্তও বিশিষ্ট নাগরিকদের এক সভা আহ্বান করে নাগরিক প্রতিরক্ষার সময়ােপযােগী ব্যবস্থা নিয়েছেন।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শহর ও গ্রামাঞ্চলের প্রতিটী নাগরিককে নাগরিক প্রতিরক্ষায় সচেতন থাকার জন্য আমরা আহ্বান জানাই।
সূত্র: দৃষ্টিপাত, ২৫ আগস্ট ১৯৭১