সম্পাদকীয়: দৃষ্টিহীনের দৃষ্টিপাত
নাশকতামূলক কাজের জন্য সন্দেহ করিয়া বা হাতেনাতে যাদেরে ধরা হয় তাদের অনেক নাকি জামীনে খালাস পাইতেছে। সত্য মিথ্যা জানি না কিন্তু এইসব ব্যক্তিকে যদি জামীন দেওয়া হয় তবে কুকাজের প্রশ্রয়ই দেওয়া হইবে বলিয়া আমরা মনে করি। তাদের দেওয়া জবানবন্দীগুলিও টেপ রেকর্ড করাইয়া আকাশবাণী মারফৎ প্রচার করা প্রয়ােজন। কারণ পাকিস্তান এইসব ব্যাপার নিয়া মিথ্যার বেসাতী আরম্ভ করিয়াছে। ভারতে যে কোনও ঘটনা ঘটুক বাতাসের সঙ্গে সেই সংবাদ পাক জঙ্গী সাহীর নিকট চলিয়া যায়। সের আলীপুরের লােক দুইটীর গ্রেপ্তারের সংবাদ আকাশবাণী মারফৎ প্রচারের পরদিনই সকালে ঢাকা রেডিওর সেই “কল্লা দরাজ ইয়াহিয়ার বাদীটি” অতি অশ্লীল ভাষায় ইন্দিরা সরকারকে গালাগালি করিয়া প্রচার করিল যে “ভারত সরকার যেমন সীমান্তরক্ষী ও মারাঠা সৈন্যের দ্বারা পাকিস্তানে ফিরিয়া যাইতে ইচ্ছুক শরণার্থীদের হত্যা করিয়া নদীর জলে নিক্ষেপ করিতেছে সেইরূপ ভারতীয় মুসলমানদের চর আখ্যা দিয়া নির্মমভাবে হত্যা করা হইতেছে এবং চর অপবাদ দিয়া গ্রেপ্তার করা হইতেছে। ভারত এই হত্যালীলা আর কত কাল চালাইবে।” পাকিস্তানী এই অপপ্রচারের কোন প্রতিবাদ এই অঞ্চলের সংখ্যালঘু নেতাদের নিকট হইতে শুনিবার অপেক্ষায় আমরা রহিলাম।
পরিশেষে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে আমাদের কিছু প্রশ্ন আছে। সীমান্তে অবস্থিত গ্রামগুলি হইতে এইভাবে যে নাশকতামূলক শিক্ষা গ্রহণের জন্য ছেলেরা পাকিস্তানে যাইতেছে, তাদের খবর কি আপনারা রাখেন না? উহারা ত ভরা নদী সাঁতরাইয়া পার হয় না; নৌকা যােগেই এপার ওপার করে। তখন আপনারা একটি লােককেও আজ পৰ্য্যন্ত যাওয়া আসার পথে ধরিতে পারেন নাই কেন? একদল দেশদ্রোহী চোরাকারবারী নিয়মিতভাবে লাতু, লক্ষ্মীবাজার, ফকিরের বাজার, নূতন বাজার, ভাঙ্গা বাজার প্রভৃতি সীমান্তে অবস্থিত বাজার মারফৎ রাত্রির অন্ধকারে লাল সবুজ টর্চের সঙ্কেত দিয়া সাদা, বিড়ি, চুরুট, চিনি, লবণ, তৈল, কেরােসীন প্রভৃতি পাচার করিয়া আজও সীমান্তের ওপারের পাক-সৈন্যদের রসদ নিয়মিতভাবে জোগাইতেছে। এই সব বন্ধ করার কাজ কি আপনাদের কাজের আওতায় পড়ে না? কাষ্টমস কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে এক আধটা কেস ধরেন ও মাল জব্দ করেন। দোষীর কোনও সাজা হয় না। ভি, ডি, পার্টী সীমান্ত এলাকায় একেবারে অপদার্থতার প্রমাণ দিতেছেন। কাজেই প্রশাসন কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে মনযােগ দেওয়া প্রয়ােজন মনে করি। ঐ সব বাজারে উপরােক্ত যেসব মাল নিত্য ট্রাক, ঠেলা ও রিক্সাতে যায় তাহা কোথায় যায়? এইসব মালের গ্রাহক কাহারা?
সূত্র: দৃষ্টিপাত, ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১