You dont have javascript enabled! Please enable it!

সম্পাদকীয়: নিজের নাক কেটে পরে যাত্রাভঙ্গ

অপরিণামদর্শী, রাজকাৰ্য্য পরিচালনে অনভিজ্ঞ জঙ্গী শাসক ইয়াহিয়া পূর্ব বাংলাকে শায়েস্তা করতে গিয়ে এবারে নিজেই শায়েস্তা হতে চলেছেন। তার ধারণা ছিল পূর্ব বাংলার মুষ্টিমেয় বিদ্রোহী সাধারণকে সপ্তাহ দিনের মধ্যেই সায়েস্তা করে দিব্যি আরামে শাসনের রাজত চালাবেন। কিন্তু তার সে সুখ স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। বাংলার বিদ্রহীত [বিদ্রোহী] মুষ্টিমেয় নয় এ যে গােটা দেশ। বাংলার মুক্তিযােদ্ধাদের লড়াই যত দীর্ঘতর হচ্ছে জঙ্গী সরকার ততই প্রমােদ গুনণে]ছেন। লড়াই দীর্ঘতর হওয়ায় পূর্ব বাংলার রুজি রােজগার, ব্যবসা বাণিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে অর্থনৈতিক কাঠামাে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে একথা সত্য। কিন্তু আদর্শের লড়াইয়ে এই ব লড়াইয়ে যে দৃড়ঢ়ি] মনােবল দেখা যাচ্ছে তাই নিয়েই পূর্ব বাংলার অধিবাসীরা আরাে অধিক দিন লড়ে যেতে পারবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। যেমন দিন মজুররা রুজি রােজগারের ভাবনা ছেড়ে লড়াইয়ে নেবেছেন তেমন লাখপতিরাও বিলাসিতা ঘরবাড়ি সব জলাঞ্জলী দিয়ে কাঁধে কাঁধ মেলাচ্ছেন। ভবিষ্যতের কোন ভাবনা। নেই। কে রইল কে রইলনা তারাে কোন হিসেব নিকেশ তারা করছেনা। একমাত্র ভাবনা “বাংলাদেশ” প্রতিষ্ঠা চাইই। অপূর্ব অভূতপূর্ব এ সংগ্রাম। জঙ্গী সরকার যত বেশী দ্বংশ করছেন যত বেশী হত্যা করছেন। সংগ্রামী জনতার মনোেবল ততই যেন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানীদের অবস্থা ক্রমশ ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে। কিছু অধিকদিন এ অবস্থা চলতে থাকলে পশ্চিম পাকিস্তানও যে লাটে চড়বে এতে কোন ভুল নেই। আয়ুবশাহী আমলে ৩২ কোটি ৫০ লক্ষ ডলারের যে সংরক্ষিত অর্থ ছিল তা কমে বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ২০ লক্ষে। অর্থনীতিবিদদের মতে এই পরিমাণ ২০ কোটি ডলারের কম হওয়া বিপজ্জনক। এই সংরক্ষিত অর্থ প্রতিমাসেই ২ কোটি ডলার করে হ্রাস পাচ্ছে। রপ্তানী অতি মাত্রায় হ্রাস পাওয়ার ফলে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। সুতরাং কাঁচামাল আমদানী হ্রাস করতেই হচ্ছে। এর ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের কারখানা গুলি বন্ধ হতে সুরু করেছে। যেগুলাে চলছে তারাে উৎপাদন সামগ্রীর বাজার ছিল পূর্ব বাংলা। ফলে পশ্চিম পাকিস্তানে বেকার সমস্যা তীব্রতর হতে চলেছে।
পূর্ববঙ্গ আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর স্থগিত রেখেছে। পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনায় বৃটেন প্রতিশ্রুত ৪ কোটি ৫০ লক্ষ ডলারের সাহায্যও স্থগীত আছে। আগামী আর্থিক বছরের জন্য পরিকল্পিত জাপানের অর্থনৈতিক কর্মসূচীও বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রকল্প খাতে ৩ কোটি ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ১ কোটি টাকা জাপানের সাহায্য দানের কথা ছিল।
এই আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়ে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসন শিল্পোন্নয়নের আওতায় সাড়ে সাত শতাংশ সুদে দুই কোটি টাকার পাঁচ বছর মেয়াদী ঋণ পত্র ছেড়েছেন। কিন্তু এই অস্থির পরিস্থিতিতে তাও কতদূর এগােবে বােঝা যাচ্ছে না।
তাছাড়া শেখ মুজিবের মুক্তিযােদ্ধাদের অভাবিত আক্রমণে পাকবাহিনীতে এত অস্ত্রশস্ত্র গােলাবারুদ ব্যবহার করতে হয়েছে যার ফলে গােলাবারুদ অস্ত্রশস্ত্রেরও অভাব দেখা দিয়েছে। তাই আধুনিকতম অস্ত্রশস্ত্র গােলাবারুদের জন্য পিণ্ডি আজ পিকিং এর দ্বারস্থ।
সর্বোপরি অসুবিধা দেখা দিয়েছে বর্ষা নেবে যাওয়ায়। অনভিজ্ঞ অনভ্যস্ত পশ্চিম পাক সেনারা সম্পূর্ণ বেকুব হয়ে পড়ছেন। এবং মরীয়া হয়ে যত্রতত্র যখন তখন নিরীহ নিরস্ত্র জনসাধারণের উপর বােমাবর্ষণ করে চলেছেন। বাতি নেভার আগে দপদপানি বৈত নয়।

সূত্র: দৃষ্টিপাত, ২১ এপ্রিল ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!