You dont have javascript enabled! Please enable it!

সম্পাদকীয়: ইয়াহিয়ার অপচেষ্টা
(দৃষ্টিপাতে প্রকাশের জন্য সিলেট সন্নিকটস্থ একটি পত্র হইতে সাংবাদিক মুহাম্মদ আবদুল … প্রেরিত)

ক্ষমতাশীল ও উপনিবেশবাদ ইয়াহিয়ার চক্রকে গােলমাল করিয়া তুলিয়াছে। তাই গণতান্ত্রিক ভারত যখন বাংলাদেশের বজ্রকণ্ঠী স্বাধিকার সংগ্রামের সমাধানে অগ্রসর হইয়া আসিয়াছে তখন এই দুঃশাসকদের দিনের আহার রাতের তন্দ্রা ছুটিয়া গিয়াছে। বাংলাদেশ ও তার জনগণের প্রতি ভারত যে কারণে সমর্থন দান করিতেছে তাহা নিছক মানবিক কারণ। ইহার ভিতরে কোন রাজনৈতিক মতলবের অস্তিত্ব অন্বেষণ করা নিতান্তই উদ্দেশ্যমূলক ও চরম হঠকারিতা পূর্ণ। সে যাহাই হােক— পাক সরকার তাহাদের ভূত রেখা চোখে এই সাধারণ মানবিক ব্যাপারটির অভ্যন্তরে মস্ত একটা ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করিয়া ফেলিয়াছেন এবং অবিলম্বে এই ‘ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্য নানাভাবে আদা-জল খাইয়া লাগিয়াছেন। পাক-সরকারের বেতনভুক পেশাধারী ফতােয়াবাজ মৌলভীর দল খুব কষিয়া ভারতকে গালাগালি দিতেছেন, ইসলাম ভ্রাতৃত্ব আর সংহতির বুলি কপচাইতেছেন। কিন্তু এত করিয়াও বাংলার সংগ্রামী জনতাকে সগ্রামের পথ হইতে বিচ্যুত করা সম্ভব হয় নাই। তাই ক্ষিপ্ত বেসামাল ইয়াহিয়া-চক্র চিরকালের গাদ্দার ও তাবেদার, উপনিবেশবাদের বগলবাচ্চা গৃহ শত্রু বিভীসণরূপী নূরুল আমীনের দ্বারস্থ হইয়া তাহাকে দিয়াও বলাইয়া লইয়াছে—ভারত পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করিয়াছে। ইহা ধৃষ্টতা এবং বলা বাহুল্য এই ধৃষ্টতা ক্ষমার অযােগ্য অমার্জনীয় অপরাধ।
কিন্তু হা হতােস্মি! ন্যাড়া বেলতলায় দুবার যায় না। সগ্রামী বাংগালীরা নূরুল আমীনের উক্তিকে পাগলের প্রলাপােক্তি বলিয়া ছাদ-ফাটা হাসির সহিত বাংলাদেশ হইতে উড়াইয়া দিয়াছে। ইয়াহিয়া চক্র ভাবিয়াছিল ভারতের প্রতি বাংলাদেশের জনমানস বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠিবে—হাতের অস্ত্র ফেলিয়া দিয়া তাহাদের সহিত কোলাকোলি করিয়া নিবে আর সেই সুযােগে তাহারা বাংলার স্বাধীনতার বিনিময়ে বেইমান নূরুল আমীনকে উজীরে আলা বানাইয়া একটা গালভরা খেতাবে ভূষিত করিয়া বগল বাজাইয়া বাংলাদেশকে শােষণ করিয়া চলিবে।
কিন্তু কাৰ্যতঃ ফল হইয়াছে উল্টা—একেবারে যাকে বলে হিতে বিপরীত। ক্রমবর্ধমান ষড়যন্ত্রের আঁচ পাইয়া বাংগালীরা বাজপাখীর মত অব্যর্থ লক্ষ্যে শত্রু বাহিনীর উপর ঝাপাইয়া পড়িয়া তাহাদেরকে নাস্তানাবুদ করিয়া চলিয়াছে।
তাই ইয়াহিয়া খাঁর গােষ্ঠী এবার অন্যপথ ধরিয়াছে। ভারতের বুকে আবিষ্কার করিয়াছে ‘রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এসব কল্পিত ……….. করিয়া প্রচার ইসলামী জোশ’ উঠার কোনই লক্ষণ দেখিতে না পাইয়া ইয়াহিয়া খা চরম পন্থা বাছিয়া নিয়াছেন। পঞ্চম বাহিনীর দ্বারা ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মূলে কুঠারাঘাত করিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে লক্ষ্যচ্যুত করিতে চাহিতেছেন। এই পঞ্চম বাহিনী কখনাে হিন্দুর বেশে কখনাে মুসলমানের বেশে ভারতীয় নাগরিকদেরকে ক্ষিপ্ত করিয়া তুলিবার প্রয়াস পাইতেছে। পঞ্চম বাহিনীর উস্কানীমূলক কাৰ্য কলাপ সম্পর্কে ইতিমধ্যে যাহারা সতর্ক হইতে পারিয়াছেন তাহাদের মধ্যে এ ব্যাপারে তীব্র প্রতিরােধ গড়িয়া উঠিয়াছে এবং যে কোন মূল্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখার জন্য জাতিধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবাদ হইতেছেন।
মমাদ্দাকথা, কুচক্রী, জঙ্গী শাসক ইয়াহিয়া খার অনেক সাধের থলির বিড়াল বাহির হইয়া পড়িয়াছে—হুলাে বিড়াল—সাক্ষাৎ চক্রান্ত ইয়াহিয়া খার প্রতীক। গোঁফের ডগা দেখিয়াই সচেতন বাঙালীরা মুহুর্তে চিনিতে পারিয়াছেন। তাই ইয়াহিয়ার এই চেষ্টা বাংলাদেশে অপচেষ্টায় পরিণত হইয়া ফিরিয়া গিয়াছে ইয়াহিয়া খাঁর কাছে। গণতান্ত্রিক ভারতের জনগণের কাছেও ইহা বুমেরাং হইয়া গিয়াছে। তাই ইয়াহিয়া খার এখন গলদঘর্ম-আহার দ্রিার পালা অনেক আগেই লাটে উঠিয়াছেন—এবার মানসিক অশান্তির বন্যায় ইয়াহিয়া খাঁ বিচলিত, উদাস, অধােন্মাদ এবং বিকারগ্রস্ত। এই বিকার ঘােরেই ইয়াহিয়া খাঁ প্রলাপ বকিতে বকিতে নতুন ষড়যন্ত্রজাল বিস্তার করিবার অপপ্রয়াস পাইতেছেন। কিন্তু বলা বাহুল্য, অন্যান্য অপচেষ্টার মত তাহার এই অপচেষ্টাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইলে তাহাতে সন্দেহ নাই।

সূত্র: দৃষ্টিপাত, ২১ এপ্রিল ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!