সম্পাদকীয়: অনিশ্চয় পরিস্থিতি
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জনপদগুলিতে বিপুল পরিমানাণ শরণার্থীদের ভীড়ে ঠাই নাই ঠাই নাই অবস্থা দাঁড়িয়েছে। সীমান্ত এলাকা খুলে দেওয়ার ফলে বহু অবাঞ্ছিত লােকও শরণার্থী হিসাবে এসে ভারত ভূমিতে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে এমন বহু লােক আছে যাদেরকে রাষ্ট্র বিরােধীতার জন্য ভারত থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল নয়তােবা তারা পালিয়ে গিয়েছিল। এতে আমাদের দেশেও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। সুতরাং এই সম্পর্কে সরকারী কঠোর নীতি প্রবর্তনের প্রয়ােজন দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্ৰী মইনূল হক চৌধুরী সাম্প্রতিক সফরকালে প্রকাশ করেছেন, এই সকল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারত সরকার একটি অর্ডিন্যান্স বলে প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন এ্যাক্ট প্রয়ােগের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। বিভিন্ন কারণে এই আইনের প্রয়ােগ অনিবার্য হয়ে পড়েছে।
ক্রমবর্ধমান শরণার্থীদের আগমনে মুনাফাখােররা হাতে স্বর্গ পেয়ে ফুলে ফেঁপে উঠছেন। এই আইনটি চালু হলে তাদের উপরও আইনটি প্রয়ােগ সম্ভব। অন্যথায় প্রশাসনের পক্ষে এই পরিস্থিতির মােকাবেলা সম্ভব হয়ে উঠছে না। যতশীঘ্র এই আইনের প্রয়ােগ হয় ততই দেশের পক্ষে মঙ্গল।।
লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর আগমনে দেশের অর্থনীতির উপর যে চাপ সৃষ্টি হতে চলেছে তার জন্য ভারত সরকারের উচিত অবিলম্বে পাকিস্তান সরকারের নিকট ক্ষতিপূরণ দাবী করা। শরণার্থীদের জন্য ব্যয়ীত সমস্ত অর্থই পাকিস্তানকে দিতে হবে এবং এর জন্য যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করা নিতান্ত প্রয়ােজন হয়ে পড়েছে। বিশ্ব সংস্থার দরবারে তাই ভারতকে আজ স্বাে[সাচ্চার হতে হবে।
আর অধিকদিন এই অনিশ্চয় পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমরা সীমান্তবাসীদের অবস্থাও সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়াবে। স্কুল কলেজগুলি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়েছে শরণার্থীদের দেখাশােনা করতে বিপুল পরিমাণ সরকারী কর্মচারী নিয়ােজিত থাকার ফলে সরকারী অফিসগুলির কাজ কর্ম প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। সুতরাং এই অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে যত শীঘ্র সম্ভব পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য ভারত সরকারকে সক্রিয় হতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে বহু সংখ্যক মােটর গাড়ী নিয়ে শরণার্থীরা চলে এসেছেন এবং যত্রতত্র এই গাড়ীগুলা চলে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন কারণে এই গাড়ীগুলিকে নিয়ন্ত্রিত করা অবশ্য কর্তব্য বলে আমরা মনে করি।
সূত্র: দৃষ্টিপাত, ৫ মে ১৯৭১