You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.29 | স্বাধীন বাংলাদেশকে অভিনন্দন | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

স্বাধীন বাংলাদেশকে অভিনন্দন

মন্ত্রী জনাব আলতাফ হােসেন মজুমদারের বক্তৃতা পাক জঙ্গীশাহী নিপীড়ন এবং অনাচার হইতে বাংলাদেশ আজ মুক্ত বাংলাদেশ আজ বাস্তবায়িত। আমাদের প্রাণ আজ আনন্দে উদ্বেল। আজ বাংলাদেশবাসীদেরে তাহাদের মুক্তির জন্য অভিনন্দন জানাইয়া তাহাদের দেশ আশু পুনর্গঠনের জন্য দৃঢ় আশা প্রকাশ করিতেছি। তাহারা শান্তি ও প্রগতির পথে এগিয়ে চলুন।
এতৎসঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই তাহার দক্ষ নেতৃত্বের, সবল ও যথাসাময়িক সিদ্ধান্তের জন্য। আমরা অনেকেই হয়ত মনে করিতাম কোন কোন সিদ্ধান্ত বিলম্বিত হইয়াছে। কিন্তু ঘটনা পরম্পরায় প্রমাণ করিয়াছে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যেক সিদ্ধান্তই যথাসময়ে যথামুহুর্তেই হইয়াছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেও হয় নাই পাছেও যায় নাই।
আমি বাংলাদেশের অসমসাহসী জনগণ বিশেষতঃ মুক্তিবাহিনী যাহারা গণতন্ত্রের ও মানবীয় অধিকার আদায়ের জন্য জীবন দান করিয়াছেন তাহাদের পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধানিবেদন করিতেছি। আমার বিশ্বাস দেশবাসী সুদীর্ঘকাল ঐ সকল বীরদের ত্যাগ ও সাধনার কথা স্মরণ রাখিবেন। এই উপদেশে গণতন্ত্র এবং সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাহারা যে সংগ্রাম করিয়াছেন তাহা অতুলনীয়। ১৯৪৭ ইংরেজীতে ধর্মের ভিত্তিতে যে দেশ বিভাগ হইয়াছিল এবং যাহার ফলে এক স্তরের মানুষ বাংলাদেশকে নির্মমভাবে শােষণ করিয়া লইয়াছে; বাঙালীদের ন্যূনতম অধিকারকে পদদলিত করিয়াছে বাংলাদেশ গঠনের ফলে অবাস্তবতার পরিসমাপ্তি ঘটিল।
তাহারা পূর্ববাংলাকে শােষণ পেষণ করিয়াছে, ভারত বিদ্বেষী প্রচারণা জিয়াইয়া রাখিয়া। তাহারা দিবারাত্র পরিকল্পিতভাবে ভারত বিরােধী প্রচারের মাধ্যমে ভারত তাহাদের শত্রু বলিয়া বাংলাদেশের জনগণকে বিভ্রান্ত রাখিয়াছিল।
শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণের বৃহদাংশ ক্রমে ক্রমে উপলব্ধি করিতে পারে, যে ভারত বাংলাদেশের শত্রু নহে পাকিস্তানেরও শত্রু নহে। সে দেশবাসী জনগণের এই বাস্তব উপলব্ধি আজ নূতন অধ্যায়ের সূচনা করিয়াছে।
আমাদের মহান দেশও সে দেশবাসীদের সত্যিকার জাগরণ, অগ্রগতি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে অভিনন্দন জানাইতে ত্রুটি করে নাই। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ এদেশের জনগণের আশা, আকাক্ষা এবং অভিমতের বাস্তব ভিত্তিতে বাংলাদেশবাসী জনগণের দুর্দিনে, বিপর্যয়ে এবং তাহাদের গণতন্ত্র ও স্বাধিকায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে গুরুদায়িত্ব সহকারে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন জানাইতে বিন্দুমাত্রও দ্বিধাবােধ করেন নাই।।
বিশ্বের ক্ষমতাবান অনেক রাষ্ট্র এ ব্যাপারে ভারতকে সাক্ষাৎ ও পরােক্ষ হুমকি দিয়া এদেশবাসীর মনােবল ক্ষুন্ন করিতে কসুর করে নাই। তৎসত্ত্বেও ভারত মুক্তিবাহিনীর সহযােগিতায় সরাসরি প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। এসময়ে শক্তিশালী কোন রাষ্ট্রের বৃহত্তম ৭ম নৌবহর সামরিক ভূমিকায় ভারত মহাসাগরে উঁকিঝুঁকি মারিতে ছিল।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মিলিয়া যুদ্ধরত আমাদের জোয়ানদের মনােবল ভাঙ্গার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইত্যাকার হুমকি আমাদের সৈন্যবাহিনী গণ্য করে নাই। সােভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের চুক্তি আমাদের বলীয়ান করিয়াছিল। এই বন্ধুত চুক্তি এক নবযুগের অধ্যায় রচনা করিয়া এ ব্যাপারে আমাদের বিচক্ষণ প্রধান মন্ত্রীর এবং রুশরাষ্ট্র নায়কদের যথাকালীন যথাযােগ্য ভূমিকা স্মরণীয়।
ভারত-রুশ চুক্তির ফলে অনেক রাষ্ট্র এবং অনেকে নানাভাবে কটাক্ষ করিতে ব্রুটী করেন নাই কিন্তু কাৰ্যতঃ প্রমাণ হইয়া যায় গণতন্ত্র, সমাজবাদ, শান্তি, মানবাধিকার ও মানবীয় মর্যাদা অব্যাহত রাখার জন্য ঈদৃশ চুক্তির বাস্তবমূল্য অপরিসীম।
জনাব মজুমদার আরাে বলেন আমাদের জোয়ানরা প্রমাণ করিয়া দেয় তাহারা শুধু নিজেদের দেশ রক্ষার জন্যই যে যােগ্য তাহা নয়ে তাহারা নিজেদের দেশরক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সমআদর্শে যুদ্ধরত অন্যদেশেরও সার্বভৌমিত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ …

সূত্র: আজাদ, ২৯ ডিসেম্বর ১৯৭১