You dont have javascript enabled! Please enable it!

স্বাধীন বাংলার রূপকার
শেখ মুজিবুর রহমান
(সংক্ষিপ্ত জীবন কথা)

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ লুতফুর রহমান ফরিদপুর আদালতের সিরিস্তাদার ছিলেন। মুজিবুর রহমানের এক ভ্রাতা এবং চারি ভগ্নী আছেন।
৭ বৎসর বয়সে মুজিব বাড়ীর নিকটবর্তী স্কুলে পড়াশুনা আরম্ভ করেন। ইতিহাসের প্রতি তাঁহার খুব বেশী আকর্ষণ ছিল। ছাত্র-জীবন হইতেই তাহার বন্দী জীবনের সূত্রপাত হয়। একটি রাজনৈতিক সভায় যােগদানের কারণে তিনি ৭ দিন কারাদণ্ড ভােগ করেন।
১৯৪২ সনে মুজিবুর রহমান কলিকাতায় গিয়া ইসলামীয়া কলেজে ভর্তি হন এবং মরহুম হুসেন সহীদ সােহরাওয়ার্দির সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪৭ সালে ইংরেজীতে কলিকাতা হইতে বি এ পাশ করিয়া পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে আইন পরীক্ষা পাশ করেন। মুসলীম লীগের সহিত তাঁহার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং ১৯৪৭ ইংরেজীতে পূর্বপাকিস্তান মুসলিম লীগ স্থাপন করেন।
মুসলীম লীগ মন্ত্রিসভার সময় তাঁহার কয়েকবার কারাদণ্ড ভােগ করিতে হয়। ১৯৪৮ ইংরেজীতে ভাষা আন্দোলনে অংশ গ্রহণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মঘটের জন্য তাঁহাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ বৎসর মরহুম লিয়াকত আলী খানের নিকট মৌলানা ভাসানী সহ একটি প্রতিনিধি দল সহ পূর্বপাকিস্তানের দাবী লইয়া হাজির হইতে গেলে পুনণীরায় গ্রেপ্তার করা হয়।
জেল হইতে মুক্তি লাভের পরে ১৯৫২ ইংরেজীতে মুজিবুর রহমান পুনরায় ভাষা আন্দোলনে ঝাপাইয়া পড়েন এবং তাঁহাকে গ্রেপ্তার করিয়া জেলে প্রেরণ করা হয় ১৯৫৪ ইংরেজীতে ফজলুল হক মন্ত্রীসভায় তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী হিসাবে যােগদান করেন কিন্তু গভর্ণর শাসন প্রবর্তিত হওয়ায় মন্ত্রীসভা বাতিল হইয়া যায় এবং মুজিব জেলে প্রেরিত হন।
১৯৫৫ সনে একটি শুভেচ্ছা মিশনের সদস্য হিসাবে মুজিবুর রহমান ভারত পরিদর্শন করেন। ঐ বৎসরই তিনি আতাউর রহমান মন্ত্রীসভা বর্জন করতঃ আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৫৮ সনের অক্টোবর মাস হইতে ১৯৬০ ইংরেজীর জানুয়ারী মাস পর্যন্ত তাঁহাকে আয়ুব খানের কারাগারে কাটাইতে হয়। তাঁহাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বিশেষভাবে জড়ানাে হয়। অবশ্য আয়ুব খান পরে ঐ মামলা উঠাইয়া নিতে বাধ্য হন। জেল হইতে মুক্তি লাভের পর ১০ লক্ষ জনতা তাহাকে “বঙ্গবন্ধু নামে অভিহিত করিয়া অভিনন্দন জানায়।
মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক অভিযােগে মােট ৯ বৎসর ৮ মাস কারাজীবন যাপন করেন। খান আবদুল গফুরখানের পরই মুজিব দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি এত দীর্ঘদিন জেল জীবন অতিবাহিত করেন।
মন্তব্য— চঞ্চল বেপরােয়া মুজিবুরকে কিষাণ স্বেচ্ছাসেবক দলপতি হিসাবে পাইয়াছিলাম ১৯৩৭ সালের ৫ই জানুয়ারী তারিখে কলিকাতা মােহাম্মদ আলী পার্কে অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ কৃষক-প্রজা পার্টির কর্মী সম্মেলনে। বঙ্গগৌরব কৃষকপ্রজা নেতা জনাব এ. কে ফজলুল হক সভাপতি হিসাবে সে সভায় মন্তব্য করিয়াছিলেন— বিরুদ্ধবাদীরা আমার দলকে উদ্দীন কোম্পানী বলে উপহাস করে কিন্তু আমার কোম্পানীতে মুজিবুর রহমান, আতাউর রহমান এরাও আছেন, দীন ও রহমান এরাই কিষাণদের বন্ধু উক্ত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে যােগদানের সুযােগ আমার হইয়াছিল বন্ধুবর অরুণ কুমার চন্দের বিশেষ দৌত্যে। মুজিবুরের আন্তরিকতা ভুলিবার নয়। সম্পাদক, আজাদ]

সূত্র: আজাদ, ১৩ এপ্রিল ১৯৭২

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!